ASANSOL-BURNPUR

বার্ণপুরে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া যুবকের মৃত্যু পুরুলিয়ায়, জেল কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তদন্তের দাবি পরিবারের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের হিরাপুর থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে আসানসোল জেল থেকে পুরুলিয়ায় পাঠানো এক যুবকের রহস্যজনকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলো। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । জানা গেছে, মৃত যুবকের নাম শেখ রবিউল আলম ওরফে জানে আলম ( ২৮)। সে এলাকায় এলাকায় ঘুরে ভাঙা লোহা, টিন সহ অন্যান্য জিনিসের বেচাকেনার হকারি করে। ঐ যুবক আসানসোল পুরনিগমের ৮২ নং ওয়ার্ডের বার্ণপুরের পাঁচিল মহল্লার বাসিন্দা।


শুক্রবার শেখ রবিউল আলমের স্ত্রী হানিফা বিবি জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর কাজে থাকার সময় হিরাপুর থানার পুলিশ স্বামীকে গ্রেফতার করেছিলো। কি কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো, তা আমাদের প্রথমে জানা ছিলোনা। পরে আমরা জানতে পারি অস্ত্র মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরের দিন তাকে ৫ সেপ্টেম্বর আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়েছিলো। জামিন নাকচ হওয়ায় তাকে আদালত থেকে আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। দুদিন পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর যুবকের স্ত্রী হানিফা বিবি তাদের দুই নাবালিকা কন‍্যাকে নিয়ে আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগার এসে স্বামীর সাথে দেখা করেছিলেন। সেই সময় ধৃত রবিউল স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, পরের শুনানির দিন অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর সে জামিন পেয়ে যাবে বলে আশা করছে।

হানিফা বিবি এদিন আরো বলেন, এর ঠিক ৭ দিন আবারও গত ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বড় বোন তার ভাই অর্থাৎ আমার স্বামীর সাথে দেখা করতে যায় আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে। তখন তাকে সংশোধনাগার থেকে জানানো হয় যে আমার স্বামীকে পুরুলিয়া জেলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে জেল থেকে কিছুই জানানো হয়নি। বলতে গেলে আমরা অন্ধকারেই ছিলাম। এরই মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে হিরাপুর থানার পুলিশের এক অফিসার আমাদের বাড়িতে এসে জানায় যে স্বামী পুরুলিয়ায় মারা গেছেন।


এদিকে এই ঘটনার পরে যুবকের স্ত্রী সহ পরিবারের সদস‍্যরা জানতে চান, কেন তাকে পুরুলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হলো বা স্থানান্তরিত করা হয়েছে? কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে? আসানসোল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় কেন তাদের পরিবারকে জানানো হলো না? বর্ধমানে না পাঠিয়ে পুরুলিয়াতে বা কেন পাঠানো হলো? শুক্রবার এই খবর লেখা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা হিরাপুর থানায় বসে আছেন এইসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য।
অন্যদিকে, রানিগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক তথা স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার নার্গিস বানোর স্বামী সোহরাব আলি বলেন , আমিও জানার চেষ্টা করছি কেন তাকে পুরুলিয়ায় আসানসোল জেল থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল ও কিভাবে সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে ? খবর নিয়ে শুনেছি অস্ত্র আইনে ঐ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কেউ অপরাধ করলে বা কোন কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে গ্রেফতার করা হোক। কিন্তু এমন ঘটনা কেন ঘটবে? এই ঘটনার অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।

এদিকে অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে শেখ রবিউল আলমকে আসানসোল জেল থেকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য জেল কতৃপক্ষ নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আউটডোরে সাইক্রিয়াটিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয়। তাকে পরীক্ষা করার পরে চিকিৎসক মেডিকেল কলেজে দেখানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরপরই জেল কতৃপক্ষ তাকে পুরুলিয়া জেলে স্থানান্তরিত করে বা নিয়ে যায়।
যদিও এই নিয়ে আসানসোল জেল কতৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে চায়নি।
হিরাপুর থানার পুলিশও জানায়, গোটা বিষয়টি আসানসোল জেল কতৃপক্ষের এক্তিয়ারভুক্ত। এই ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই।

Leave a Reply