ASANSOL

প্রকাশ্য রাস্তায় আক্রান্ত, হুমকির মুখে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন

থানায় অভিযোগ দায়ের, নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ২৯ সেপ্টেম্বরঃ স্টেশন থেকে টোটোতে কর্মস্থলে আসার পথে রাস্তায় জনা ৬/৭ যুবকের হাতে প্রকাশ্য রাস্তায় আক্রান্ত হলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলায় আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ( কেএনইউ) কলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক সজল কুমার ভট্টাচার্য। তাকে দেখে নেওয়া ও পরিবারের সদস্যদের কথা বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অধ্যাপকের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মী ( গ্রুপ সি) তরুণ দাসের সঙ্গেও একই ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ঐসব যুবকেরা। শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ এই ঘটনাটি আসানসোল উত্তর থানার বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে ১৯ নং জাতীয় সড়ক লাগোয়া কাল্লা রোডে মাড়োয়ারি শ্মশানের সামনে। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটনার কথা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (সেন্ট্রাল) দেবরাজ দাসকে ফোন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ( ভিসি) অধ্যাপক দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায়। প্রাণ ভয়ে হুমকির মুখে পড়া অধ্যাপক ও কর্মী ঘটনাস্থল থেকে আসানসোল রেল স্টেশনের ৭ নং প্লাটফর্মে চলে যান অন্য একটি টোটো করে। বেশ কিছুক্ষুন পরে আসানসোল উত্তর পুলিশ স্টেশনে পৌঁছায়। অভিযোগ, তখন বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো পিছু ধাওয়া করে আসা জনা তিনেক যুবক। অধ্যাপক ভট্টাচার্য তাদেরকে চিনিয়ে দিলে, পুলিশ তাদের কাছে যায় ও কথা বলে। এরপর পুলিশ অধ্যাপক ও কর্মীকে স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
দুপুরেই আসানসোল উত্তর থানায় গিয়ে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অধ্যাপক ও তার সঙ্গী। যার প্রেক্ষিতে পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় একটি মামলা ( এফআইআর) দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগে নির্দিষ্ট করে তিনজনের নামও দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অধ্যাপক সজল কুমার ভট্টাচার্য, কর্মী তরুণ দাস সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য অধ্যাপক, কর্মী থেকে পড়ুয়া। তারা নিরাপত্তার দাবিতে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে তারা উপাচার্যের চেম্বারে ধর্ণায় বসে পড়েন। উপাচার্য গোটা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য তাদেরকে আশ্বস্ত করেন।


আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক সজল কুমার ভট্টাচার্য রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের অনুমোদিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কনভেনার। বর্ধমানের বাসিন্দা অধ্যাপক সজল কুমার ভট্টাচার্য প্রতিদিন হাওড়া ধানবাদ ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসের আসানসোল স্টেশনে নামেন। সেখান টোটোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। সেই রকমভাবে শুক্রবার সকালে তিনি আসানসোল স্টেশনে আসেন। অধ্যাপক ভট্টাচার্য বলেন, এদিন সকাল দশটা নাগাদ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপ সি কর্মী তরুন দাসের সঙ্গে টোটো করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিলাম। কিছুটা আসার পরে বুঝতে পারি যে, তিনটি মোটরবাইকে জনা ছয়েক যুবক আমাদেরকে ফলো করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় মাড়োয়ারি শ্মশানের সামনে একটু ফাঁকা জায়গায় মোটরবাইকগুলি সামনে এসে টোটোকে দাঁড় করায়। ঐ যুবকদের মধ্যে দু/তিন জনের মুখে মাস্ক ছিলো। বাকিদের মুখ খোলা ছিলো। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনি। তারা আমাকে বলে “বাড়ি ফিরে যান। ইউনিভার্সিটিতে যাবেন না। আমি বলি, কেন? কে মানা করেছে? তোমরা কারা? তারা তখন বলে, পার্টি, মানা করেছে। আমি জানতে কোন পার্টি? ” যুবকেরা এর কোন উত্তর দেয়না। তখন আমাকে পরিবারের নাম করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আমার সঙ্গী এর প্রতিবাদ করলে, তাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করা হয়। কোনভাবে খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নন টিচিং স্টাফ সেখানে আসেন।

তিনি যুবকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তাকেও হুমকি দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, এমনকি টোটো চালককেও হুমকি দেওয়া হয়। আমাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এরপর আমরা প্রাণ ভয় সেখান থেকে স্টেশনে দিকে হাঁটতে থাকি। তখনও দেখি ঐ যুবকরা আমাদেরকে ফলো করছে। রাস্তায় একটা টোটো পেয়ে উঠে পড়ি৷ ভাবি কোনমতে স্টেশনে ফিরে গিয়ে আরপিএফের কাছে সাহায্য চাইবো। আগেই উপাচার্যকে ফোনে সব কথা বলেছিলাম। স্টেশনে পৌঁছানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে পুলিশ চলে আসে। এরপর পুলিশ আমাদেরকে স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরিয়ে নিয়ে আসে।


এই ঘটনায় আতঙ্কিত অধ্যাপক বলেন, প্রতিদিন এভাবেই যাতায়াত করি। এখন ভয় লাগছে। বর্ধমানে থাকা স্ত্রী ও মেয়ে ঘটনার কথা জানতে পেরে কাঁদছে। বুঝতে পারছি না কেন এমন ঘটনা ঘটলো। চারমাস আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিবেশ ছিলো, এখন তা নেই। অনেক আন্দোলনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক হয়েছে। কিন্তু এদিনের ঘটনা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, কেন এমন ঘটনা ঘটলো বুঝতে পারছি না। সকালে অধ্যাপক ও তার সঙ্গী কর্মীর আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে এসিপি (সেন্ট্রাল) দেবরাজ দাসকে ফোন করি। তারপর পুলিশ তাদের মতো করে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এই ঘটনায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমনকি পড়ুয়া পর্যন্ত। তারা নিরাপত্তা চেয়ে আমার কাছে এসেছিলো। আমি সবাইকে সবদিক থেকে আশ্বস্ত করেছি। উপাচার্য বলেন, দুদিন একাংশ পড়ুয়া আমার কাছে এসে কিছু বিষয়ে ফি কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের আচরণ আমার ভালো লাগেনি। একটু অন্য রকম ছিলো। বুঝতে পারছি না, দুটো ঘটনার সঙ্গে কোন যোগসূত্র আছে কিনা। গোটা ঘটনার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে আসানসোল উত্তর থানায়।


এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় উপাচার্য দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায় ও অধ্যাপক সজল কুমার ভট্টাচার্য তাদের মোবাইল ফোনে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই যুবকের ছবি দেখান। তারা বলেন, এই দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া নয়।
এদিকে, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি সেন্ট্রাল) কুলদীপ সোনেয়াল বলেন, অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগে যাদের নাম রয়েছে তাদেরকে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪১ নং ধারায় নোটিশ দিয়ে ডেকে পাঠানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *