ASANSOL

Pippa Song Controversy : কারার ওই লৌহ কপাট গানকে বিকৃত সুরে সিনেমায় গাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিবাদ

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। ( Pippa Song Controversy ) ১৯২১ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস জেলবন্দী। সেই সময় দেশবন্ধুর যায়া বাসন্তী দেবী বাংলার কথা বলে সাপ্তাহিক পত্রিকার জন্য কাজী নজরুলের কাছে একটি লেখা চাইলেন। আর নজরুল ইসলাম কারার ঐ লৌহ কপাট ( karar oi louh kopat ) গানটি সেই সময় লিখে পাঠান। ১৯৪৯ সালে শিল্পী গিরিন চট্টোপাধ্যায় এর কন্ঠে গানটি প্রথম রেকর্ড আকারে প্রকাশ হয়। এই গানের সাথে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই, দেশ মাতৃকাকে শৃংখল মুক্ত করার সংগ্রাম। দশকের পর দশক শুধু বাঙালি নয় যে কোন প্রতিবাদী মানুষ একই সুরে এই গান শুনে শুনে অন্ধকারে আলোর দিশা দেখেন। এই গানটিকে সম্প্রতি বিশিষ্ট গায়ক এ আর রহমানের সুরারিপিত হিন্দি ছবি পিপপার টেলরে প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে কবিট জন্মভিটা চুরুলিয়া থেকে শুরু করে সমগ্র শিল্পাঞ্চল এমনকি রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে এই প্রতিবাদে পিছিয়ে নেই কবির পরিবারও।

Pippa Song Controversy


কারার ওই লৌহ কপাট গানকে বিকৃত সুরে সিনেমায় গাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানানো হলো শনিবার দিনভর কবি কাজী নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ায় । নজরুল চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নজরুল এর সমাধী ক্ষেত্রে এদিন প্রতিবাদ সভা শুরুর আগে কবি তীর্থের সমাধী ক্ষেত্রে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন নজরুল চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি দেব আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় ,সম্পাদক সন্জীবন বন্দ্যোপাধ্যায় ,উপদেষ্টা ও নজরুল গবেষক কাজী আকতার হোসেন ,অচিন্ত ঘাটী ,কবি তারকনাথ মণ্ডল সহ অনেক কবি সাহিত্যিক ও পড়ুয়ারা। নজরুল চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ও অধ্যাপক দেব আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন আমরা কবিট এই গানের যে সুর শুনা বড় হয়েছি আজকে তাও সকলে মিলে এখানে গেয়েছি। একই সঙ্গে অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে এই বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তা ছাড়াও কবিতা আবৃত্তি, নজরুল সংগীত, স্বরচিত কবিতা পাঠ হয়েছে। আমরা এখান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শীঘ্রই এই বিষয় প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ,কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চিঠি পাঠাবো ।যাতে অবিলম্বে এই গানটিকে ওই সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়। তিনি বলেন এর সঙ্গে আমাদের বাংলার এবং বাঙালির আবেগ শুধু জড়িয়ে তাই নয় এর সঙ্গে ভারতীয় হিসেবে দেশপ্রেম জড়িয়ে আছে। তাকে অপমান করার অধিকার কারোর নেই। একই ধরনের বক্তব্য রাখে প্রতিবাদ জানান সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জীবন বন্দ্যোপাধ্যায়।


কবির ভাতুষ্পুত্র ও নজরুল একাডেমির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী রেজাউল করিম বলেন এ আর রহমান দেশের একজন নামী সংগীত শিল্পী। কিভাবে এই ধরনের কবিট লেখা একটা গানকে বিকৃত সুর করলেন বুঝে উঠতে পারছি না ।শুধু তাই নয় উনি হয়তো বাংলা ভাষাটা জানেন না বা এই গানে বাংলা ভাষা কতটা প্রভাবিত তাও হয়তো তিনি জানেন না। কিন্তু যারা সিনেমার জন্য এই বাংলা গানটা গেয়েছেন তারা কিভাবে করলেন কবি র ওই গান ? এই গানে প্রত্যেকটি শব্দের মধ্যে দিয়ে একটা উদ্দীপনা উৎসাহ প্রতিবাদের মানসিকতা ছিল যা এখানে নেই। দেশজুড়ে এর তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত । রেজাউল করিমের কন্যা এবং বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সোনালী কাজী এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাবনার সাধারণ সম্পাদক ও দীর্ঘদিনের লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক বাসুদেব মণ্ডল বলেন কাজী নজরুলের মত একজন বিপ্লবী লেখাই গানের সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস যুক্ত। অর্থাৎ শুধু গানটাকে বিকৃত করা হয়নি। যারা স্বাধীনতার লড়াই কে গুরুত্ব দিতে চান না তারা এই ধরনের কাজ করবেন। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও দেশ এবং রাজ্যের প্রধানদের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি লিখব।


( Pippa Song Controversy ) কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়উনি বললেন সিনেমায় ব্যবহার হওয়া এই গানটা আমার শোনার এখনো সুযোগ হয়নি। তবে বিষয়টা শুনেছি। কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে আছে দেশ ,দেশপ্রেম, দেশ মাতৃকাকে মুক্ত করার লড়াইয়ের ইতিহাস। তাকে যদি কোন ভাবে “বিকৃত” করা হয় তাহলে যেমন আচমকা আমার মার নাম বদলে যায় তাহলে যে কষ্ট হবে সেই কষ্ট হচ্ছে। এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। বিষয়টা অবশ্যই অবমাননাকর। হয়তো এই গানের নির্দিষ্ট কোন স্বরলিপি নেই ।কিন্তু যে সুর আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি এই গানের ক্ষেত্রে তাকে বদলালে মনের ভিতর কষ্ট হয়। সুর পরিবর্তন করে কি বোঝাতে চাওয়া সেটাও সাধারণ মানুষ তো জানতে চাইবেনই। এটা এক ধরনের যন্ত্রণার জন্ম দেয় । চুরুলিয়াতে আজকের প্রতিবাদের জায়গায় আমাকে যেতে বলা হয়েছিল কিন্তু আমি বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকার যেতে পারিনি।

Leave a Reply