West Bengal

জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়
রোড পাস না মেলায় “অ্যাবসলিউট সিজওয়ার্ক” এর সিদ্ধান্ত হুগলী জেলার ডিস্ট্রিক্ট বার এসোসিয়েশনের


বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত:
রাজ্যের হুগলী জেলার ডিস্ট্রিক্ট বার এসোসিয়েশন এবার অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটের পথে। বস্তুত জেনে রাখা ভালো আগামী ১৮ থেকে ২৫ শে নভেম্বর ২০২৩ রাজ্যের হুগলী জেলার চন্দননগরে বিশ্ববিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। সেই সময় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধিকাংশ এলাকায় “নো এন্ট্রি জোন” করে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে চাহিদা মত নো এন্ট্রি জোনে প্রবেশ করার জন্য রোড পাসের ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে আইনজীবীরা সমস্যার সম্মুখীন হবেন বলে জানান পুলিশ প্রশাসনকে।কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশের তরফে রোড পাস না মেলায় তারা এই অসহযোগিতার প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে যাবেন বলে হুগলী ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শুক্রবার সর্বসম্মতিতে একটি রেজোলিউশন পাস হয়। সেখানেই এই সিজ ওয়ার্ক বা কর্মবিরতির কথা জানানো হয়।



হুগলি ডিস্ট্রিক্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুকান্ত চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুক্রবার ১৭ ই এপ্রিল বিকাল ৩ টায় জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় আলোচনার মূল বিষয় ছিল (১) চন্দননগর জগদ্ধাত্রী পূজার সময় পুলিশের অসহযোগিতা এবং এর ফলে স্বাভাবিক আদালত-কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হওয়া (২) ১৮ ই নভেম্বর ২০২৩ থেকে ২৫ শে নভেম্ভর ২০২৩ পর্যন্ত “নো-এন্ট্রি” এর সময়কাল এবং পরবর্তী পদক্ষেপের সমাধান করার বিষয়।



ওই রেজোলিউশনে স্পষ্টত: উল্লেখ করে বলা হয় জগদ্ধাত্রী পুজো, ২০২৩ -এর দিনগুলিতে “নো-এন্ট্রি” জোনের ফলে ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত প্রবল রাস্তার যানজটের কারণে, হুগলির জেলা জজ আদালতের আইনজীবিরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে বাধ্য। সময়মতো চন্দননগর ও চুঁচুড়া আদালত চত্বরে পৌঁছাতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। ফলস্বরূপ, মামলাকারীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে এবং আদালতের কার্যক্রম বিলম্বিত হবে। এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য, কর্তৃপক্ষকে জেলা জজ আদালতের আইনজীবীদের নামমাত্র ২৫০ টি রোড পাস দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় যদিও চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে এই আদালতে ৬০০ জনেরও বেশি আইন পেশাজীবী রয়েছেন।

এ বছর চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের শেষ দিক থেকে কোনো প্রকার অবহিতকরণ ছাড়াই “রোড পাস” বা অনুমতিপত্র বিতরণ শুরু হয়। আইনজীবিরা একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য পেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পাস সংগ্রহ করতে যান। তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা হয় এবং প্রায় কয়েকবার গবাদি পশুর মতো তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বারবার চেষ্টা করার পর তাদের সদস্যদের ন্যূনতম সংখ্যক পাস দিয়ে করুণা করা হয় যা আমাদের প্রয়োজনীয়তার ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ করে না। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা আমাদের সদস্যদের সাথে যে আচরণ করেছেন তা মর্যাদাপূর্ণ নয়। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের অসহযোগিতা এবং অনৈতিক আচরনের কারণে জগদ্ধাত্রী পূজার সময় “অ্যাবসলিউট সিজওয়ার্ক” বা “সম্পূর্ন কর্মবিরতি” ডাকা ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তা নেই।



এদিকে হুগলী জেলা বার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শুভাশিস চন্দকে যোগাযোগ করে হলে তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ন অনৈতিক। এটি সংবিধানের আর্টিকেল ১৮ এর পরিপন্থী। আর্টিকেল বা অনুচ্ছেদ ১৮ অনুযায়ী যেকোনো মানুষের যেকোন আইনজীবীর সাহায্য নেওয়ার অধিকার রয়েছে। যদি সেটি ধরা হয় তাহলে উদহারন হিসেবে যদি কোনো আইনজীবীর বাড়ি হুগলির মগরা তে হয় এবং কোনো ব্যক্তি যদি চন্দননগর থানায় আটক হন সেক্ষেত্রে একজন আইনজীবীকে সেখানে তার মক্কেলকে আইনী সহায়তা দিতে যেতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে জগদ্ধাত্রী পূজার নো এন্ট্রির কারণে কোনো পাস না থাকায় সেটি সম্ভব হবেনা। ফলে চরম সমস্যায় পড়বেন মানুষ এবং সঙ্গে আইনজীবী নিজেও। তিনি আরো তাদের এমনকি চাহিদামত ২৫০ টি পাস দেওয়া তো দূরের কথা ,সামান্য প্রায় ৩০ তীর মত পাস দেওয়া হয়েছে যা অপর্যাপ্ত। এই সিদ্ধান্তে তিনি এবং আইনজীবী মহল রীতিমত হতাশ। তাই তাদের কাছে সিজ ওয়ার্কের পথে যাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। এই রেজল্যুশন অনুসারে সম্মানীয় জেলা জজ ও অন্যান্য সকল আদালতকে ১৮ থেকে ২৫ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত যেকোনো বিষয়ে ‘নট টু পাস এনি অ্যাডভার্স অর্ডার’ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।”



এইভাবে ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে হুগলী ডিস্ট্রিক্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সর্বসম্মতিক্রমে “নো-এন্ট্রি পিরিয়ড” চলাকালীন
১৮ই নভেম্বর, ২০২৩ থেকে ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত
আদালতের কাজ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

Leave a Reply