Bihar-Up-Jharkhand

ধানবাদ জেলে শুট আউট, গুলিতে ঝাঁঝরা কুখ্যাত গ্যাংস্টার আমন সিং, গোটা এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য

বেঙ্গল মিরর, ধানবাদ ( ঝাড়খণ্ড) রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ এবার ঝাড়খন্ডের ধানবাদ জেলে শুট আউটের ঘটনা ঘটলো। জেলের মধ্যেই গুলি ঝাঁঝরা হয়ে মৃত্যু হলো কুখ্যাত গ্যাংস্টার আমন সিং। রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধানবাদ জেলা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। তবে জেলের ভেতরে এই ঘটনা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কোন আধিকারিক কোন রকম মন্তব্য করতে চাননি।
তবে এই ঘটনা নিয়ে ধানবাদ জেলার আইনশৃংখলা আরো একবার বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়লো। কেন না, দিন কয়েক আগেই ধানবাদ শহরের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, কোন নিরাপত্তা নেই, এমনই একরাশ অভিযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষেরা মিছিল করেছিলেন। তারপরেই এই ঘটনা, শেষ পর্যন্ত ধানবাদ শহরের মানুষদের অভিযোগ ও আশঙ্কাকে সিলমোহর দিলো বলে মনে করা হচ্ছে।
বছর ৪৫ এর আমন সিং আসলে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। বিভিন্ন রাজ্যে তার বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ ও তোলা আদায়ের মতো অপরাধের একাধিক মামলা আছে। অনেক রাজ্যের জেলে আমন সিং বিভিন্ন মামলায় বন্দী ছিলো। সে গত ২০২১ সাল থেকে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলা জেলে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধানবাদ শহরের ডেপুটি মেয়র নীরজ কুমার সিংকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। চার বছর আগে এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছিলো। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ধানবাদ পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো। তারপর থেকে সে ধানবাদ জেলেই ছিলো।


এই ধানবাদ শহর লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহর ও পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান শহরে জাতীয় সড়কে মাস কয়েক আগে পরপর দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছিলো। আসানসোলে নিজের হোটেলে ভরসন্ধ্যায় গুলিতে খুন হন হোটেল মালিক অরবিন্দ ভগৎ। আর বর্ধমানে নিজের গাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন কয়লা মাফিয়া রাজু ঝাঁ। এই দুটি ঘটনায় হাত রয়েছে ধানবাদ জেলে থাকা এই আমন সিংয়ের মনে করে, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের সিআইডির অফিসাররা জেলে গিয়ে জেরাও করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে এই প্রসঙ্গে পুলিশ অফিসাররা কিছু বলেননি।


আরো জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি ধানবাদ পুলিশের এসআই ইন্দ্রজিৎ কুমার রাণা ধানবাদ ব্যাঙ্ক মোড় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে মামলাও হয়। তাতে বলা হয়েছিলো, ভিন রাজ্যের জেলে থাকা আমন সিং ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা তার তিন সহযোগী অভিনব প্রতাপ সিং, সুনীল নিসাদ ও রবি ঠাকুর ব্যাঙ্ক মোড় থানা এলাকার ধমকি দিয়ে তোলাবাজি করছে। ঐ এসআই মামলার এফআইআরে সাক্ষী হিসাবে দুই কনস্টেবল দীপক কুমার সিং ও ইরফান আহমেদের নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু নিম্ন আদালত থেকে প্রমানের অভাবে চারজনই জামিন পেয়ে যায়। এমন একটা মামলায় কেন জামিন হলো, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তভার দেওয়া হয় ঝাড়খন্ড পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর সিআইডির ডিজি পদমর্যাদার অজয় কুমার সিংকে। তিনি তদন্ত করে দেখতে পান, আইও বা তদন্তকারী অফিসার হিসেবে ঐ এসআই সাক্ষী দিলেও, দুই কনস্টেবল সাক্ষী দেননি।


সূত্র থেকে জানা গেছে, রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ ধানবাদ জেলের বিপদ ঘন্টা বা পাগলা ঘন্টা আচমকাই বেজে উঠে। গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে । জেলের ভেতরে গুলি চলেছে কতৃপক্ষের কাছ থেকে খবর তড়িঘড়ি সেখানে ছুটে আসেন ধানবাদের ডিসি বরুণ রঞ্জন, জেলা পুলিশের এসএসপি সঞ্জীব কুমার মন্ডল, এসডিএম উদয় রজক সহ পুলিশ ও জেলা পুলিশের সব উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা।
বেশ কিছুক্ষন পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আমন সিংকে ধানবাদ জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা যায়, আমন সিংয়ের শরীরে একাধিক গুলির ক্ষত বা গান শট ইনজুরি রয়েছে। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, আমন সিংয়ের মাথা, মুখ, গলা, বুক ও পেটে গুলি লেগেছে। তাকে লক্ষ্য করে কমপক্ষে ১০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে।
ধানবাদ জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা এই ঘটনা নিয়ে কোন কিছু বলতে চাননি। সোমবার মৃতদেহর ময়নাতদন্তের পরে কিছু জানানো হতে পারে।


প্রসঙ্গতঃ, দিন আটেক আগেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের একটি দল জেলে আচমকাই পরিদর্শনে যান। সেই সময় খৈনি, পান ও গুটকার মতো নেশার সামগ্রী পাওয়া যায়। তারপরেই এদিনের ঘটনা। এখন প্রশ্ন, কারা জেলের ভেতরে বন্দুক নিয়ে গিয়ে এমন এক কুখ্যাত গ্যাংস্টারকে খুন করলো?
শেষ খবর পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা ধানবাদ জেলেই রয়েছেন।

Leave a Reply