BARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনে এসে দুস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২০০০ তম ইভিনিং মিলের ব্যবস্থা করলেন এক মানবিক পুলিশ আধিকারিক, অন্যরকম বর্ষবরণ পালিত হলো

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল: এক অন্য বর্ষ শেষ বা বর্ষ বিদায়ের সন্ধ্যা উদযাপিত হল একেবারেই অন্যরকম ভাবে। সালানপুর ব্লকের রূপনারায়নপুরের প্রধানত ২০১০ সালে শুভদীপ সেন নামে এক তরুনের অন্যতম স্বপ্নের উদ্যোগে পাশাপাশি আরো দু-একজন ছাত্র এবং সমাজকর্মীর সহযোগিতায় গড়ে উঠেছিল পিস ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। মাত্র ১৫ জন দুস্থ অনাথ ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে পড়ানো, তাদের সারা বছরের বই খাতা দেওয়া এবং পুজোর সময় নতুন কাপড় জোগাড় করে দেওয়া এই ভাবনা নিয়ে বিনামূল্যে পড়ানোর কাজ শুরু ।২০১৭ সালে আরো কিছু স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় আর্থিকভাবে সংকটে থাকা পরিবার গুলির এমন প্রায় ৪৬ জন শিশুকে নিয়ে এখানে শুরু হয় বিশেষ অন্নপূর্ণা মিলের ব্যবস্থা। অর্থাৎ এই এলাকায় যে সমস্ত বাড়ির মানুষেরা তাদের ছেলে মেয়ের জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী বা বিশেষ শুভ দিনগুলিতে এইসব বাচ্চাগুলোকে সপ্তাহে একদিন করে অন্তত বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয় দুপুরে। সেই সঙ্গে পড়ানোর সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতি সচেতন করে তোলা হয়। এদের অধিকাংশই আদিবাসী বা বাউরী সমাজ থেকে উঠে আসা স্কুল পড়ুয়া। ২০১৮ ভাবনাটা সম্পূর্ণ বদলে যায় শুভদীপের। কেননা এই ক বছরে অনেকেই যথেষ্ট ভালো ফল করেছে পরীক্ষায়। ১০ই জুলাই ২০১৮ তার সঙ্গী স্থানীয় কিছু মানুষকে পাশে পেয়ে ওদের দিনের বেলা স্কুলে মিড ডে মিলের পাশাপাশি স্কুল থেকে সোজা এখানে এসে পড়াশোনা করা এবং রাতে বাড়িতে যাওয়ার সময় রাতের খাবার বা নৈশ ভোজনের স্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়।


২০২৩ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর অর্থাৎ রবিবার ছিল এই নৈশ ভোজের ২০০০ তম দিন। একদিনও বাদ পড়েনি এই কাজে। সব শুনে সদ্য এখানে আসা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ ও মানবিক আধিকারিক মইনুল হক তিনি এই ৪৬ জন পড়ুয়া সহ এখানকার সকলের জন্য পড়ুয়াদের চাহিদা মতই যথেষ্ট রবিবারের নৈশভোজে ভালো খাবার দাবারের ব্যবস্থা করে দেন । এমনকি নিজে হাতে তা পরিবেশনও করেন। আবার কেউ কেউ ২০০০ তম এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখার জন্য যেখানে বসে তাদের এই পড়ানো বা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা এতদিন ধরে হয়েছে সেই ভবনটিকে আলো দিয়ে সাজিয়ে দেন । তার সঙ্গে ছিল ওদের নাচ গান রবি ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি। একই সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর ভাবনাও । এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গত কয়েক বছর ধরেই কাজের সাথে যুক্ত থাকা। সাংবাদিক ও সমাজকর্মী বিশ্বদেব ভট্টাচার্য। বিশিষ্ট শিল্পী উখিল মজুমদার শিক্ষক সঞ্জীব দাস সুভাশি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অবশ্যই শুভদীপ সেন নিজে সহ আরো অনেকে।


কিন্তু কিভাবে কোনরকম সরকারি সাহায্য ছাড়া টানা ২০০৩ দিন এই কাজ সম্ভব হল ?এর উত্তরের শুভদীপ বলেন এখানে শুধু নয় আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার দেখে বাইরে এমনকি কলকাতা থেকেও অনেক মানুষ আছেন যারা এ ব্যাপারে সাহায্য করে গেছেন। আসলে ইচ্ছেটাই বড় কথা। আমাদের এখান থেকে অন্তত ইতিমধ্যেই এতগুলো বছরই প্রায় ৫০০ জন পড়ুয়া যাদের কোনদিন হয়তো বই খাতা কেনার স্বপ্ন ছিল না তাদের কেউ কেউ এখন অনার্স নিয়ে কলেজে পড়ছেন। তার সঙ্গে এদের আবৃত্তি, নাচ, গান, শ্রুতি নাটক রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ইতিমধ্যে বাংলাদেশে গিয়েও তারা তা দেখিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন । এদের বেশিরভাগেরই বাবা-মা হয় দিনমজুর না হলে কারোর কারীর বাবা মা নেইও। কিন্তু অত্যন্ত সাধারণ স্তরের মানুষেরাই আমাদের পাশে আছেন যারা ওদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আগামী ৬ ই জানুয়ারি থেকে ৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত রূপনারায়নপুরের বইমেলা প্রাঙ্গণে তথা ইউথ ক্লাবের মাঠে রূপনারায়নপুর উৎসব উপলক্ষে এদিন থিম সং ও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

Leave a Reply