ASANSOL

ড্রাগ রেজিস্টেন্স নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানী হিসেবে একের পর এক গবেষণা করে চলেছেন সীতারামপুরের কৃতি কন্যা  মৌসুমি

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। ঝাড়খন্ড বাংলা সীমানা আসানসোল থেকে শুরু করে পশ্চিম বর্ধমান সহ বিভিন্ন রাজ্যে যক্ষা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শুধু তাই নয় ওষুধ খাইয়েও রক্ষা এবং কুষ্ঠর মতো রোগীদের দেখা যাচ্ছে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ করে আর ওষুধে কাজ হচ্ছে না। মেডিকেলের ভাষায় একে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স বলা হচ্ছে। এই দুই অসুখের ড্রাগ রেজিস্টেন্স নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানী হিসেবে একের পর এক গবেষণা করে চলেছেন আসানসোল মহকুমার কুলটির সীতারামপুরের কৃতি কন্যা  মৌসুমি শ্যাম। সিনিয়র সাইনিটিস্ট হিসেবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় একই সঙ্গে তিনি নতুন এই দুই রোগের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের কাজেও যুক্ত হয়েছেন।
কুলটি স্কুল থেকে পড়াশোনা করে বি আই টি তে পড়তে যাওয়া। সেখান থেকেই লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে জাপান এশিয়া ফেলোশিপ নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু।


বিশেষ করে কয়লা খনি পাথর খাদান  সংলগ্ন ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবাংলার এলাকা, পুরুলিয়া বাঁকুড়া সহ সারা দেশে কুষ্ঠ এবং যক্ষা, দুটি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।  কুষ্ঠতে ৩৪ শতাংশ এবং যক্ষাতে ২৮ শতাংশ ওষুধের রেজিস্টেন্স পাওয়া যাচ্ছে। এটার উপরেই বিশেষ করে এখনই জনসচেতনতা তৈরি করা এবং চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়া এন্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন কম বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যেও যক্ষ্মার পরিমাণ বাড়ছে ।সারা দেশেই এই ছবি ধরা পড়ছে। যক্ষার ক্ষেত্রে ৩৪ শতাংশ এবং কুষ্ঠর ক্ষেত্রে 28% ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স গবেষণায় ধরা পড়েছে।


আসানসোল ক্লাবে তাকে এই কাজের জন্য সম্মান জানান হল প্রধানত এদেশের প্রবীণ এবং নবীন বিশিষ্ট চর্ম চিকিৎসক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ,রঘুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজকর্মী অতিন চৌধুরী, সাংবাদিক বিশ্বদেব ভট্টাচার্য , সমাজকর্মী রাজা ভৌমিক , অধ্যাপক কৈলাস প্রসাদ, ঝাড়খণ্ডের নিরসার প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের মত মানুষদের উপস্থিতিতে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই তরুণ বিজ্ঞানী বলেন তার গবেষণালব্ধ বিষয়ে ইতিমধ্যেই ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রককে তিনি চিঠি লিখেছেন এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি লেখা হবে বলে জানিয়েছেন। চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি করা অন্তত এই দুটি অসুখের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা উচিত ।


দীর্ঘ ৬০ বছরের  বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রবীণ চিকিৎসক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন এই ধরনের গবেষণার কাজ খোদ আমাদের এলাকার একজন বিদেশে বসে করছেন এবং তাকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থাগুলি গুরুত্ব দেয়ায় আমরা গর্বিত হয়ে তাকে সম্মান জানালাম। মাত্র কয়েকদিনের জন্য তিনি এ দেশে এসেছিলেন । আসানসোল খনি শিল্পাঞ্চলে কয়লা খনি জাতীয়করণের অনেক আগে থেকেই মাইন্স বোর্ড অফ হেলথ কুষ্ঠুদের চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু হাসপাতাল তৈরি করেছিল। সেগুলি এখন অধিকাংশই পরিত্যক্ত বাড়িতে পরিণত। আর যক্ষা রোগীদের শুধু ওষুধ খাওয়ানো নয় তাদের ওষুধের সাথে সাথে সমান হারে যদি পুষ্টি না দেওয়া যায় তাহলে চিকিৎসায় কোন লাভ হবে না বলে তিনি মনে করেন।


আসানসোল জেলা হাসপাতালে চেস্ট স্পেশালিস্ট চিকিৎসক সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন ওই গবেষক যা যা বলেছেন সবগুলি একেবারে সত্যি। আমরাও ড্রাগ রেজিস্টেন্স নিয়ে মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারীক থেকে সমস্ত জায়গায় বলছি। উনি ঠিকই বলেছেন আমাদের সর্বত্র এটাকে প্রচারে আনতে হবে। আসানসোলেও যুবক-যুবতীদের মধ্যে খনি এলাকায় যক্ষা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে বসেই তা পাচ্ছি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারীক মোঃ ইউনুস খান বলেন আমাদের জেলায় বারাবনি এবং কুলটিতে এই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি পাওয়ায় আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ওষুধ খাওয়ানোর কাজ শুরু করেচি।

Leave a Reply