ASANSOLBengali News

পাথর খাদান থেকে দুই কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করলো ডুবুরি

আত্মহত্যার ঘটনা, অনুমান পুলিশের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৭ জানুয়ারিঃ বন্ধ হয়ে থাকা একটি পাথর খাদান থেকে দুই কিশোরীর নাম উদ্ধার হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা মাঝি পাড়ায়। বুধবার সন্ধ্যা থেকে দুই কিশোরী নিখোঁজ ছিলো বলে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ এলাকায় আসে। পরে এলাকায় আসে আসানসোল দমকল বাহিনীও। কিন্তু ১৫০ ফুট গভীর এই পাথর খাদানের জলে তল্লাশি করা দমকলকর্মী ও এলাকার বাসিন্দাদের সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের ডুবুরির দলকে ডেকে পাঠানো হয়।

সকাল থেকে বাসিন্দারা পাথর খাদান এলাকায় ভিড় করেন। গভীর খাদানের জলে নেমে দুই কিশোরীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেন ডুবুরির দল। শেষ পর্যন্ত দুপুর দেড়টা নাগাদ এই খাদানের জল থেকে উদ্ধার করা হয় দুই কিশোরীর মৃতদেহ। উদ্ধারের কাজ করা ডুবুরিদের দাবি, এক কিশোরীর হাত অন্য কিশোরীর হাতে ধরা ছিলো। একইভাবে, দুজনের সালোয়ার কামিজও একটা অন্যের সঙ্গে বাঁধা ছিলো। পুলিশ জানায়, মৃত দুই কিশোরীর নাম নিশা কুমারী (১৬) ও সিম্পি কুমারী(১৯)। নীশা ও সিম্পির বাবার নাম বীরেন্দ্র যাদব ও জনার্দন যাদব। নিশার আসল বাড়ি উত্তর প্রদেশের বালিয়ায়। সে গত দেড় মাস ধরে আসানসোল উত্তর থানা বাইপাস লাগোয়া দক্ষিণ ধাদকার তপসি বাবা মন্দির এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকছিলো। ঐ এলাকাতেই বাড়ি সিম্পি কুমারীর।

খাদানের জলে ঝাঁপিয়ে আত্মঘাতি হয়েছে


বৃহস্পতিবার বিকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে দুই কিশোরীর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। পরে মৃতদেহ দুটি পুলিশ পরিবারের হাতে তুলে দেয়। দুই কিশোরীর শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন বা ইনজুরি পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দুই কিশোরী বুধবার সন্ধ্যার সময় পরিকল্পনা করেই একসঙ্গে বাড়ি থেকে বেরোয়। তারা বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাল্লা মাঝি পাড়ায় গিয়ে পাথর খাদানের জলে ঝাঁপিয়ে আত্মঘাতি হয়েছে। দুই পরিবারের তরফে এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে সেই অভিযোগ দায়ের করা হয় নি। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে।


দুই কিশোরীর পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, অন্যদিনের মতো বুধবার সন্ধ্যার সময় নিশা বাড়িতে রুটি করছিলো। সেই সময় সিম্পি কুমারী তার বাড়িতে আসে। বাড়ির সামনে জানতে চাওয়ায় তারা বলে, শৌচ কর্ম করতে যাচ্ছে। তারা আরো বলে, পাথর খাদানের কাছে যাচ্ছে। কিন্তু নীশা ও সিম্পি কুমারী শৌচাকর্ম করতে যাওয়ার অনেক্ক্ষণ পরেও তারা বাড়ি ফিরে আসেনি। এরপর বাড়ির লোকেরা তাদের খঁজতে বেরোয়। কিন্তু দুজনকে কোথাও পাওয়া যায় নি। বাড়ির লোকেদের অনুমান হয় যে , কোনভাবে তারা ঐ খাদানের কাছে শৌচকর্ম করতে গিয়ে খাদানের জলে পড়ে তলিয়ে গেছে।


এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই কিশোরীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ ও দমকলকর্মীরা আসেন। ডেকে পাঠানো হয় ডুবুরিদের। পরে দুপুরে উদ্ধার করা হয় দুজনের দেহ।
জানা গেছে, দুজনেরই বাড়িতে শৌচালয় নেই। বাড়ির সবাইকে খোলা মাঠে শৌচকর্ম করতে যেতে হয়।
আসানসোল পুরনিগমের ঐ এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর নরেন্দ্র মূর্মু বলেন, ওয়ার্ডে ৫০০ শৌচাগার করার জন্য আবেদন করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে জমা দিয়েছিলাম। তারমধ্যে ১৬৩ টা হয়েছে। বাকিগুলো তৈরী হয়নি। দুই কিশোরীর যে এলাকায় বাড়ি, সেখানে অনেকেরই বাড়িতে শৌচাগার নেই।

বুঝতে পারছি না কি করে এই ঘটনা ঘটলো


জেলা হাসপাতালে এদিন দুপুরে সিম্পি কুমারীর বাবা জনার্দন যাদব বলেন, বুঝতে পারছি না কি করে এই ঘটনা ঘটলো।
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, দুই কিশোরীকে তার বাড়ির লোকেরা মোবাইল ফোন নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বকাবকি করেছিলো। পরিবারের তরফে আমাদের বলা হয়েছে, তারপর দুই কিশোরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ও বলে আমরা ঝাঁপাতে যাচ্ছি। যদিও প্রশ্ন উঠছে, দুই কিশোরীকে একইসাথে তাদের পরিবারের লোকেরা মোবাইল ফোন নিয়ে বকাবকি করলো? দুজনেই একইসঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো? অথচ বাড়ির লোকেরা তাদের আটকালো না?
পরে পুলিশ জানায়, ঠিক কি কারণে এমন ঘটনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply