ASANSOLBengali News

জেলার প্রতিটি বুথে কুড়িজন করে ব্রিগেডে নিয়ে যাবার লক্ষ্য

বাড়িতে বাড়িতে সিপিএমের পক্ষ থেকে আবেদন শ আমন্ত্রণ পত্র বা  চিঠি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টচার্য, আসানসোল ঃ আগামী আঠাশে শে ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ কে সফল করে তুলতে একদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার সমস্ত বাসিন্দাদের বাড়িতে বাড়িতে সিপিএমের পক্ষ থেকে আবেদন শ আমন্ত্রণ পত্র বা  চিঠি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে । কেন ব্রিগেড সমাবেশে তাদের যাবার আহ্বান জানানো হচ্ছে তার পিছনে একাধিক যুক্তির কথা ওই চিঠিতে দেশের ভেঙেপরা অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক সঙ্কটের কথা  উল্লেখ করা হচ্ছে ।পাশাপাশি বাস ছাড়াও যাতে ট্রেনে হাজার হাজার মানুষ। ব্রিগেডে পৌঁছতে পারেন তার জন্য আসানসোল ডিভিশনেও রেল কর্তাদের কাছে জেলা সিপিএমের পক্ষ থেকে ডিআরএম কে চিঠি দেয়া হয়েছে ।সেই চিঠিতে বলা হয়েছে যাতে কলকাতা বা হাওড়াগামী বা ফেরত  যাত্রী ট্রেন গুলিতে অতিরিক্ত  কামরা লাগানো হয়। টিকিট কেটে যেন তারা ব্রিগেডে পৌঁছতে পারেন।  যদিও রেল থেকে এ দিন পর্যন্ত কোনো উত্তর মেলেনি।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় এই সময়কে জানান তারা জেলার প্রতিটি বুথে ন্যূনতম কুড়িজন করে ব্রিগেডে নিয়ে যাবার জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছেন। আর সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রায় এবার তারা ব্রিগেডে ষাট হাজার সমর্থক কে নিয়ে যেতে চান। পাশাপাশি গৌরাঙ্গ বাবু জানান অন্যান্য বামপন্থী দল এবং কংগ্রেসের সংখ্যা মিলে এই জেলা থেকেই এক লাখের বেশি মানুষ এবার ব্রিগেড সমাবেশে যাচ্ছেন। তিনি বলেন আমাদের গোটা জেলায় ২৮টি এরিয়া কমিটি আছে ।

এই এরিয়া কমিটিগুলোর থেকে ন্যূনতম পনেরো থেকে কুড়ি হাজার মানুষ শুধু ব্রিগেডে যাবেন  বাসে করে।তাছাড়া ছোট-বড় তাদের পক্ষে শতাধিক গাড়ি আছে এবং বাকিরা ট্রেনে যাবেন ব্যাপক আকারে। এজন্যে আমরা আসানসোলের ডি আর এম কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বলেছি আপ এবং ডাউন এর যত যাত্রী ট্রেন চলে সেগুলিতে আমাদের সদস্যরা রেলের টিকিট কেটে যাতে যেতে পারে এবং আসতে পারে তার জন্য যাত্রী ট্রেন গুলিতে অতিরিক্ত কোচের ব্যবস্থা করুন।

তবে এখনো পর্যন্ত রেল থেকে কোনো উত্তর আসেনি। কোচ না দিলেও আমাদের মানুষেরা ওইসব   যাত্রী ট্রেনে যাবেন এটাও ঠিক। প্রচারের জন্য ইতিমধ্যেই ছোট-বড় সভা শুরু হয়ে গেছে।ইতিমধ্যে  কাঁকসায় একটি বড় সভায় যোগ দিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। মঙ্গলবার  দুর্গাপুররে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী এমন একটি সভায় বক্তব্য রাখবেন।

 অন্যদিকে রানীগঞ্জের বিধায়ক ও সিপিএম নেতা রুনু দুত্ত বলেন আমরা পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড কে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু করেছি। বাড়িতে বাড়িতে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিচ্ছে। সবাই যদি যেতে না পারেন তাহলে আমরা ঐ পত্র দিয়ে  প্রচারের বিষয়টাকেই তুলে ধরছি ও বলছি  এবারের নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন যুব ছাত্র দের পাশাপাশি মহিলারাও অত্যন্ত আগ্রহ দেখাচ্ছেন  ব্রিগেড নিয়ে। বন্ধ কারখানা ও খনির শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী । ২০১৯ এ  আমাদের লোকসভা ভোটের একটা বড় অংশ চলে গিয়েছিল ।তারা শুধু ফেরত আসছে তাই নয় ব্রিগেডের পরে আমরা বুঝিয়ে দেবো এবারের ভোটে বাম এবং কংগ্রেস যে কত গুরুত্বপূর্ণ জোট।

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য এবং আসানসোলের নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন এই চিঠিতে আমরা উল্লেখ করেছি আমাদের জেলার   হিন্দুস্তান কেবলস বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানাসহ প্রায় ছোট-বড় ৫০ টি সংস্থা  ও অন্তত কুড়িটি কয়লা খনি বিজেপি সরকারের আমলে বন্ধ হয়েছে। এএসপি ,ডিটিপি এস সহ একাধিক কারখানা বন্ধের পথে। তৃণমূলের আমলে এ রাজ্যের শিল্পের অবস্থা একেবারেই ভয়ঙ্কর হয়েছে। পেট্রোল ডিজেল এবং গ্যাসের ব্যাপকহারে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ।কেন্দ্রীয় সরকার কেরোসিনের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে নিয়েছেন।

প্রায় পনের কোটি যুবক কর্মহীন অবস্থায় আছে। বাম আমলে এমন করুণ অবস্থা কোন জায়গায় ছিলনা ।তাই বাম এবং কংগ্রেস জোটকে আগামী দিনে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্যই ব্রিগেডের আপনিও আসুন বলে আবেদন জানানো হয়েছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে। এই আবেদন পত্র প্রত্যেকদিন আমাদের দল না করাও বিরোধী শিবিরে থাকা মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপকহারে আমাদের দেওয়াল লিখন চলছে ব্রিগেড সভা কে কেন্দ্র করে।

এই সব সিপিএম নেতাদের ধারণা গত লোকসভা নির্বাচনে বামের ভোট যেভাবে চলে গিয়েছিল এবার তারা তা ফিরিয়ে আনতে মরিয়া। আর সেক্ষেত্রে ব্রিগেড সমাবেশের নামে নির্বাচন ঘোষণার আগেই তারা কিন্তু বাড়ি বাড়ি প্রচার ছোট-বড় সব সাইকেল মিছিল মোটরসাইকেল মিছিল নিয়মিতভাবে করে যাচ্ছেন। এতে দলের বুথ লেভেল পর্যন্ত সংগঠনকে নতুন করে  আরো শক্তিশালী করা যাবে বলেও এসব নেতাদের বিশ্বাস। একইসঙ্গে বিজেপি এবং তৃণমূল নেতারা আক্রমণ করে এই দু’জনকেই বাদ দিয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে তাদের ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে আসানসোলের সংসদ ও বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয় বলেন বাড়িতে বাড়িতে এসব প্রচার বা  ব্রিগেড করেও নতুন করে আর ক্ষমতায় ফেরা যাবে না ।ওদের ৩৪ বছরে এ রাজ্যের কলকারখানা বন্ধ থেকে শুরু করে বাংলা কে পিছিয়ে দেওয়ার কথা এখনো মানুষ ভোলে নি। তৃণমূলের রাজ্য নেতা ভি শিবদাসন বলেন ব্রিগেড করার আগে ওদের ভাবা উচিত  ওরা কাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন ।যাদের ওরা সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ এবং পুঁজিপতিদের দালাল বলতেন। মানুষ ওদের ৩৪ বছরের অপশাসনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হয়েছিল তা ভোলেনি।

Leave a Reply