ASANSOL

আসানসোলের ডিসিআরসিতে মহিলা ভোট কর্মীর মৃত্যু

চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদাসীনতার অভিযোগ জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে

ক্যাম্প থাকলেও নেই মেডিক্যাল টিম

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ২৫ এপ্রিলঃ ভোট গ্রহণের আগের দিন আসানসোলের ডিসিআরসিতে এক মহিলা ভোট কর্মীর মৃত্যুর হলো। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার দুপুরে আসানসোলের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। আসানসোলের সালানপুর থানার রুপনারায়নপুরের সুকান্ত পল্লীর বাসিন্দা মৃত ভোট কর্মীর নাম অসীমা মুখোপাধ্যায় (৪৯)। তিনি সালানপুরের পিঠাইকেয়ারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। অসীমাদেবীর ফাস্ট পোলিং অফিসার বা প্রথম ভোট কর্মী হিসাবে বারাবনি বিধান সভা এলাকার একটি বুথে সোমবার ডিউটি করার কথা ছিলো।

आसनसोल में चुनाव अधिकारी की मौत



তবে এই ঘটনায় পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন, জেলা নির্বাচনী দপ্তর ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। আসানসোলের ঐ ডিসিআরসিতে মেডিক্যাল ক্যাম্প থাকলেও, সেখানে কোন টিম ছিলোনা। অসীমাদেবী যখন সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তার সহকর্মীরা মেডিক্যাল টিম ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বারবার ডাকেন। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। ডিসিআরসিতে থাকা পুলিশ ও অন্যান্যরা অচৈতন্য অসীমাদেবীকে কোলে তুলে গাড়িতে চাপান।

এরপর তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। যদিও জেলাশাসক বা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অনুরাগ শ্রীবাস্তব এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, অসীমা মুখোপাধ্যায় নামে ঐ ভোট কর্মী এদিন ডিসিআরসিতে বারাবনি বিধানসভা এলাকার কাউন্টারে ভোটের সরঞ্জাম নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেডিক্যাল টিম তাকে সেখানে পরীক্ষা করার পরে দুপুর দেড়টার সময় তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। জেলাশাসক আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন ঐ ভোট কর্মীর মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে। পরিবারের পাশে থাকার সবরকম আশ্বাস কমিশন দিয়েছে। ভোট কর্মীর মৃত্যুতে যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা তা দেওয়া হবে।


অন্যদিকে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ অশ্বিনী কুমার মাজি বলেন, মেডিক্যাল টিম ডিসিআরসিতে ছিলো। যেখানে তাদের থাকার কথা সেখানে তারা ছিলেননা। যারা সেখানে ছিলেন, তাদের জানা উচিত ছিলো। অসুস্থ ভোট কর্মীকে সেখানে নিয়ে যেতে হতো।
একদিকে আসানসোল জুড়ে চলছে তীব্র তাপ প্রবাহ। সঙ্গে করোনার প্রকোপ। সাধারণ মানুষের জেরবার অবস্থা। তারই মধ্যে রবিবার আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এক ভোট মৃত্যুতে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য।


জানা গেছে, তিনি ভোটের ডিউটি নিতে একেবারেই ইচ্ছুক ছিলেন না। এমনকি ভোটের ডিউটির নিযুক্তিপত্র পর্যন্ত নেননি। ‌ তবুও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অমান্য করার সাহস তার হয়নি। কিন্তু সেই অনিচ্ছাকে মৃত্যু দিয়ে পূরণ করে গেলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা অসীমা মুখোপাধ্যায়। তার একমাত্র পুত্র চন্দিম নবম শ্রেণীর ছাত্র। ‌ এছাড়া বাড়িতে তার আর কেউ নেই।

অসীমা দেবীর প্রিজাইডিং অফিসার স্কুল শিক্ষিকা সোমা সাহা এই ঘটনায় একেবারে ভেঙে পড়েছেন। গোটা সালানপুর ব্লক শিক্ষক শিক্ষিকারা শোকে মুহ্যমান। ১৯৯৯ সাল থেকে অসীমা দেবী শিক্ষকতা করছেন।
আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, প্রচন্ড গরমের কারনে মহিলা ভোট কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।


এছাড়া এদিন কুলটির বাসিন্দা আরো এক ভোট কর্মী শিল্পী কুমার ভার্মা আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ডিউটি বুঝে নেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।


প্রসঙ্গতঃ, আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ডিসিআরসি থেকে আসানসোল উত্তর, কুলটি ও বারাবনি বিধান সভার ভোট কর্মীরা ভোট সরঞ্জাম নেন।

Leave a Reply