ASANSOL

জেলায় বড় কোন ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে ভোট, অভিযোগের পাল্টা অভিযোগ সব দলেরই

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল ও দূর্গাপুর , ২৬ এপ্রিলঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার ৯টি বিধান সভা কেন্দ্রে সোমবার বড় কোন ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয়েছে। সব দলের তরফেই অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি সক্রিয় ছিলো বলে অভিযোগ করা হয়েছে শাসক দলের তরফে। প্রথম দু ঘন্টায় ভোট পড়লো ১৭ শতাংশের সামান্য বেশি। সোমবারের ভোট গ্রহণকে ঘিরে জেলার ৯টি কেন্দ্রেই সব বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা ছিলো। রাস্তায় রাস্তায় রাজ্য পুলিশকে নিয়ে টহলে ছিলো কেন্দ্রীয় বাহিনী। সন্ধ্যা সাতটার শেষ খবর জেলায় গড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। জেলা নির্বাচনী দপ্তর সন্ধ্যায় বলে, সময়ের পরে কয়েকটি বুথে ভোটাররা লাইনে ছিলো।


সন্ধ্যায় পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, কোন রকম বড় ঘটনা ছাড়াই জেলার ৯টি বিধানসভায় ভোট শেষ হয়েছে। সবমিলিয়ে ১২ ইভিএম ও ৩৪ টি ভিভি প্যাট বিভ্রাটের কারণে বদল করা হয়েছে। যার জন্য ৩০ মিনিটের মতো ভোট ঐসব জায়গায় বন্ধ ছিলো। পরে তা চালু করা হয়। সবমিলিয়ে ৫০০টি অভিযোগ জমা পড়েছিলো। সব অভিযোগের তদন্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো করোনা বিধি ও সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।


এদিন সকাল সকাল আসানসোলের চেলিডাঙ্গার বুথে ভোট দেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মলয় ঘটক। মলয়বাবু ভোট দেওয়ার পরে বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ঐ প্রার্থী বুথে এসে তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্টের নাম জানতে চাইছে। যা সে করতে পারে না। এছাড়াও কেন্দ্রীয় বাহিনীও ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

যদিও বিজেপি প্রার্থী সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মন্ত্রীর পাড়ার বুথে এতদিন বিজেপির এজেন্টকে বসতে দেওয়া হতো না। এবার একজন মহিলাকে আমরা বসিয়েছি। তাকে তৃনমুল কংগ্রেসের এজেন্ট উতক্ত্য করছিলো। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করেছি।


অন্যদিকে, রানিগঞ্জের বক্তারনগরের একটি বুথে তৃনমুল কংগ্রেসের বুথ এজেন্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহ টুপি পড়ে বসেছিলো বলে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল অভিযোগ করেন। তিনি নির্বাচন কমিশনকে গোটা বিষয়টি জানান। যদিও বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১১ গাড়ির কনভয় নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ করে তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী সায়নী ঘোষ। একইভাবে রানিগঞ্জে তৃনমুল কংগ্রেসের ক্যাম্প অফিস ভাঙ্গচুরের অভিযোগ উঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় বাহিনী জানায়, সেখানে অবৈধ জমায়েত ছিলো। এদিন সকালে বেশ কিছু বুথে ভোট দেরী করে শুরু হয়। জেলা নির্বাচন দপ্তর জানায়, ইভিএমের কিছু সমস্যার কারণে তা হয়েছিলো। পরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা শান্তিনগরের সোনামাটি স্কুলে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছে।
পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের এক এস আইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সায়নী ঘোষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোল পুরনিগমের ৮০ নং ওয়ার্ডে। অভিযোগ সায়নি ঘোষকে পুলিশ থামায়। এদিন সকাল লাইনে দাঁড়িয়ে কুলটি বিধানসভার চলবলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ নম্বর বুথে পরিবারের সকলকে নিয়ে ভোট দিলেন নন্দীগ্রামের সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় । এদিন ভোট দেওয়ার পরে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করতে না পারায় মানুষের মনে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। তিনি দাবি করেন সংযুক্ত মোর্চা এবার সরকার গড়বে। বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস ছয় দফায় দাবি করছে, যে তারা সরকার করছে। এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন , তাহলে ভোট বন্ধ করে দিলে সরকারের টাকা বাঁচবে।
অন্যদিকে আসানসোল উত্তর বিধান সভার সেটে কন্যাপুরে বিজেপির ক্যাম্পে ঢুকে দুই বিজেপি কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় সেখানে যান। সেই সময় তাকে বুথ থেকে ২০০ মিটারের বাইরে চলে যেতে বলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। জামুড়িয়ায় সংযুক্ত মোর্চার সিপিএমের ঐশী ঘোষকে দু/এক জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে ঢুকতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ। পান্ডবেশ্বরের মোটের উপর ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবেই।
এদিকে, দূর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার মলানদিঘিতে ২১৫ নম্বর বুথ কেন্দ্র থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়। সেখানে তৃণমূল কর্মীরা তাদের দলীয় কর্মীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় আচমকাই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশে তাদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। চেয়ার ভেঙ্গে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তিনজন দলীয় কর্মীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বিজেপি কর্মীদের কথা মতো চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কাঁকসা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। পরে সেই তালা খুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। এই বিধান সভার বিদ্যাসাগর স্কুলের ৬৯ নং বুথে বিজেপির বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের দাবি তুলেছে তৃনমুল কংগ্রেসের মহিলা কর্মীরা l কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠান্ডা পানীয় খাইয়ে ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশ যায়। কাঁকসার গোপালপুর হাই স্কুলের সামনে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রদীপ মজুমদার গাড়ি সরিয়ে দিল কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানরা।


প্রদীপ মজুমদারের অভিযোগ, স্কুলের সামনে তার গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। কিন্তু দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থীর গাড়ি সেখানে আসতেই প্রদীপ মজুমদারের গাড়ি সরিয়ে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের প্রশ্ন করা হলে তারা কোন উত্তর দিতে চাননি। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সামনে প্রদীপ মজুমদারকে দেখে বিজেপি প্রার্থী কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী সৌজন্যতা দেখান। দুই প্রার্থী একে অপরকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি একে অপরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। একইভাবে কাঁকসার মলানদীঘিতে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠলো বিজেপির বিরুদ্ধে। ভোট চলাকালীন একদল দুষ্কৃতিরা এসে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ভাঙচুর হওয়া দলীয় কার্যালয়ে যান প্রার্থী প্রদীপ মজুমদার।

Leave a Reply