ASANSOLKULTI-BARAKAR

বরাকর কান্ড : গুজবে দফায় দফায় বিক্ষোভ, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ, অঘোষিত বনধের চেহারা

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হলো আরমানের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ৭ জুলাইঃ কুলটি থানার বরাকরের ঘটনা নিয়ে কার্যত দিশেহারা আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ। পুলিশ লকআপে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সঙ্গে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসা মহঃ আরমান আনসারির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবারের সেই ঘটনায় এখনো উত্তপ্ত রয়েছে বরাকর। বুধবার সকাল থেকে গোটা বরাকর এলাকা খুবই উত্তপ্ত ছিলো। এদিন সকাল থেকে দফায় দফায় বরাকর শহরের জিটি রোড সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অবরোধ করা হয়। আগুন জ্বালিয়ো চলে বিক্ষোভ। বলতে গেলে এদিন আরো অস্বস্তি বাড়ে পুলিশের।


জানা গেছে, দিন কয়েক আগে বরাকরের বেগুনিয়ায় বিসিসিএলের ১০ টি আবাসনে চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। সেই ঘটনার কিনারা করতে শুধু মহঃ আরমান আনসারি নয় বরাকর ফাঁড়ির পুলিশ হেপাজতে নিয়েছিল বরাকরের বিভিন্ন এলাকার ৯ জন যুবককে। পুলিশের দাবি, এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই চুরির মতো ঘটনার মামলা রয়েছে। সোমবার রাতে আরমানকে পুলিশ মারতে মারতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার তাকে কুলটি থানার লকআপ থেকে অচৈতন্য অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে পুলিশ নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করে। জানা গেছে, ৯ জনের মধ্যে ৫ জনকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। বাকি ৪ জনের মধ্যে বরাকর ফাঁড়ি রোডের বাউরি পাড়ার বাসিন্দা শ্যামল বাউরি আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা বারোটা নাগাদ কুলটি থানার পুলিশ শ্যামলকে নিয়ে আসে। তাকে ভর্তি করা হয় জেলা হাসপাতালের মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে৷ আরমানের মৃত্যুর পরে পুলিশের টনক নড়ে। জেলাশাসক ও সিএমওএইচের হস্তক্ষেপে মঙ্গলবার রাত বারোটার সময় শ্যামলকে ওয়ার্ড থেকে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার সকালে সেই শ্যামলের মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে বরাকরে। যা নিয়ে এদিন নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে গোটা এলাকা। শুরু হয় পুলিশের টহল ও রুটমার্চ।

মঙ্গলবারের ঘটনার মতো এদিন যেন না হয়, তারজন্য পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। এমনিতেই এদিন বরাকরের দোকানপাট কম খুলেছিলো। কিন্তু আবার গন্ডগোল শুরু হওয়ায় সেইসব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন হয়, পুলিশকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি শ্যামল সুস্থ আছে, তা ভিডিওকল করে বিক্ষোভকারীদের দেখাতে হয়। সনোজ শ্রীবাস্তব নামে এক যুবক এখনো নিখোঁজ। পরিবারের সদস্যদের দাবি, রবিবার রাতে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়েছিল বরাকরের শ্যামল বাউরি ও সনোজ শ্রীবাস্তবকে। পরে পুলিশ এই দুটি পরিবারকে কিছু জানায়নি। শ্যামল কেন হাসপাতালে ভর্তি? কি হয়েছিল? পরিবার জানতে পারেনি । শ্যামল সিসিইউতে অচৈতন্য অবস্থায় ভর্তি থাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে তার পরিবার।

পুলিশের লকআপে মারধরের কারণে শ্যামলের এই অবস্থা বলে তার স্ত্রী সুচিত্রা বাউরি, মা ও কাকা সহ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ ।
অন্যদিকে সনোজ শ্রীবাস্তবকে পুলিশ সেই রাতে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুদিন পরেও সে বাড়ি ফিরে আসেনি। সে কোথায় ? পুলিসি হেপাজতে না হাসপাতালে? নাকি তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে? উত্তর দেয়নি কুলটি থানার পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছে সনোজের ভাই অরুন শ্রীবাস্তব।


অন্যদিকে, বুধবার সকাল নটার সময় পুলিশ আরমানের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করার জন্য তিন বিশেষঞ্জ চিকিৎসক না থাকায়, তা এখানে হয়নি। বিকালের খবর আরমানের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সন্ধ্যার পরে তা বরাকরে আসার কথা। এদিকে মৃত আরমানের পরিবার চায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের শাস্তি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ।

এদিকে আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর এদিন বলেন, তদন্ত করা হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখে তা করা হচ্ছে। ২ জনকে মঙ্গলবারই সাসপেন্ড করা হয়েছে।
পুলিশের অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এই ঘটনায় কুলটি থানা ও বরাকর ফাঁড়ির আরো কয়েকজন অফিসার ও সিভিক ভলেন্টিয়ারের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদেরকেও শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।

Leave a Reply