West Bengal

ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা রাজ্য সরকারকে

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা রাজ্য সরকারকে। বৃহস্পতিবার এনএইচআরসি রিপোর্টে উল্লেখ করা গুরুতর মামলাগুলি তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৫ সদস্যের বিচারপতিদের বেঞ্চ এদিন রায়দান করেন। বিচারপতিদের বেঞ্চে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি সুব্রত তালুকদার।

calcutta_Highcourt

হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ হত্যা, ধর্ষণ এবং মহিলাদের উপর অপরাধের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। এছাড়া বাকি অভিযোগের তদন্ত করবে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইপিএস আধিকারিক সৌমেন মিত্র, সুমন বোরা সাহু এবং রণবীর কুমারের সমন্বয়ে গঠিত এই তিনজনের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট/SIT)। সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে থাকবেন, যার জন্য আলাদা আদেশ জারি করা হবে। পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া আদালতের নজরদারিতে হবে। রাজ্য সরকার সমস্ত নথিপত্র এবং রেকর্ড তদন্ত সংস্থাগুলিকে হস্তান্তর করবে। যদি রাজ্য সঠিকভাবে কাজ না করে, তবে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। রশিদ মুনির খানের বিষয়টি আলাদাভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
রাজ্য নীতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।

কতদিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে, তাও উল্লেখ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছ’সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং সিটকে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় রাজ্যকে পুরোপুরি সহযোগিতার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিল রাজ্য সরকার, তার কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে হাইকোর্ট জানিয়েছে, নয়া ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করা হবে। মামলার শুনানি হবে আগামী ২৪ অক্টোবর। যদি কোনো মামলা নির্বাচন পরবর্তী প্রকৃতির না হয়, তাহলে তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ওসির কাছে রেকর্ড ফেরত দিতে হবে। যদি কোন নির্দেশের প্রয়োজন হয়, তদন্তকারী সংস্থা আদালতে আবেদন করতে পারে।

জেনে রাখা ভালো, ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছিল। ইতিমধ্যে সব পিটিশনের শুনানি শেষ হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গত ১৮ ই জুন হাইকোর্ট কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিল। ১৩ ই জুলাই সেই কমিটি রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আনা হয়। সূত্র মারফত খবর তৃণমূলের একাধিক নেতা মন্ত্রীর নাম আনা হয় সেই রিপোর্টে। পাশাপাশি মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার আর্জি জানানো হয় ওই রিপোর্টে। যদিও সেই রিপোর্টে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই রিপোর্টের পেছনে বিজেপির হাত রয়েছে এমনও অভিযোগ আনে তৃণমূল। এদিকে আদালত কার্যত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট কে প্রাধান্য দিয়ে সিবিআইকে তদন্তভার হস্তান্তর করেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর যে ‘হিংসা’ ছড়িয়েছিল, তা নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ( NHRC) রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে শাসক দল তৃণমূলের সমালোচনা করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়ে, ‘রাজ্যের যা অবস্থা, তাতে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে।’ দাবি করা হয়, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রবীন্দ্রনাথের মাটিতে হিংসার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে ভিটেছাড়া হতে হয়েছে। এই ধরনের হিংসার ঘটনায় অবিলম্বে লাগাম টানতে হবে। সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভারতীয় গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে। হিংসা ছড়িয়ে পড়বে অন্য রাজ্যেও। সেইসঙ্গে রিপোর্টে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়। পরামর্শ দেওয়া হয়, আদালতের পর্যবেক্ষণ তদন্ত করা হোক। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সেই সুপারিশ কার্যত মেনে নিলেও বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কমিশনের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটিকে সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাই যে রিপোর্টের যে অংশে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা আইনের চোখে ঠিক নয়।

Leave a Reply