ASANSOL

একটি কারখানায় একটি ইউনিয়নই থাকবে, সাফ ঘোষণা রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়ের

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৯ আগষ্টঃ একটি কারখানায় তৃণমূল কংগ্রেস অনুমোদিত একটি মাত্র শ্রমিক সংগঠন থাকবে। বর্তমানে যেসব কারখানায় তৃণমূল কংগ্রেসের নামে একাধিক যে শ্রমিক সংগঠন আছে, তা তুলে দিয়ে তাদের সবাইকে একসাথে সঙ্গে নিয়ে একটি সংগঠন গড়তে হবে। আসানসোলে পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃনমুল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সম্মেলনে এমন কথাই বললেন সংগঠন রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য বলেন।


রবিবার আসানসোলের কল্যানপুরের একটি ম্যারেজ হলে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, বার্নপুরের ইস্কো কারখানা , চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা, ইসিএল, দুর্গাপুরের একাধিক ইস্পাত কারখানাকে কেন্দ্রীয় সরকার বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই জেলায় এক হাজারের বেশি নানান ধরনের শিল্প আছে । তাই এই জেলাকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি মনে করেন।


এদিনের সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকা আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একটা কারখানা বা শিল্পের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের চার-পাঁচটি ইউনিয়ন বা শ্রমিক সংগঠন রাখা যাবে না। সম্প্রতি আমি চা বাগানে গিয়ে দেখেছি সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের নামে ছটা শ্রমিক সংগঠন চলছে। সেখানেও বলা হয়েছে সব মিলিয়ে একটি ইউনিয়ন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই একাধিক শ্রমিক সংগঠন রাখা যাবেনা। তিনি আরো বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে লক্ষ্য করে দেখেছি বেশকিছু ইউনিয়নের রিটার্ন জমা পড়ছে না ।

এই জেলার সভাপতি অভিজিৎ ঘটকক অবিলম্বে বিষয়টা দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনের মূল কাগজ কাউকে দেবেন না। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। কেন্দ্র সরকার শ্রমিকদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিয়ে ৪৪ টি শ্রম আইনকে চারটি শ্রম আইনে পরিণত করেছে। শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২ ঘন্টা কাজ করার কথা বলা হয়েছে। ৩০০ জনের কম শ্রমিক যেখানে আছে বা কাজ করে সেখানে কোন কর্মী ছাঁটাই করার কোন অনুমতি লাগবে না।


তিনি সমালোচনার সুরেঅভিযোগ করে বলেন, বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি হেরে গিয়ে এই জেলার দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা, এ্যালয় ইস্পাত কারখানা ও বার্ণপুরের ইস্কো কারখানার শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে। এত বছর ধরে যে কাঁচামালের আরএমডির দফতর কলকাতায় ছিলো। এখন তা তুলে নিয়ে যাওয়া হল বোকারো ও
রাউরকেল্লায়।

আর এর ফলেই ইস্কো, দুর্গাপুরের দুই ইস্পাত কারখানায় কাঁচামাল পাঁচগুণ বেশি দামে কিনতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের জিনিসের দাম বাড়বে। তখন পরিকল্পনামাফিক বলা হবে এই কারখানাগুলো বিক্রি করতে হবে। কেননা এরা চালাতে পারছেন না। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানাকেও বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪৫০ টি রেলস্টেশন, ১৫০ টি ট্রেন বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই রাজ্যের গর্ব ও ঐতিহ্য দার্জিলিংয়ের ট্রয় ট্রেনকেও আম্বানি ও আদানির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছে। হলদিয়া ও কলকাতা বন্দর সহ নটি বন্দর ও বিএসএনএল এবং এমটি এনএল টাওয়ার বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইভাবে দেশের ২৬ হাজার ৭০০ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক বিক্রি করছে বেচাবাবুর সরকার। এইসবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই চালাতে হবে।

২০২৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশের প্রধানমন্ত্রী করতে না পারলে দেশের মাটি পাথর সব বেচে দেবে এরা। এদিনের সভায় বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের মৃত্যু দিনে তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায়।


পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজ্যের ৩৫ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি, ব্লক ও টাউন স্তর পর্যন্ত কমিটি তৈরী করা সহ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, ধর্মঘট নয়। ধর্মঘট বাদ দিয়েই তারা আরো বড় ধরনের গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে কল-কারখানা ও কয়লা খনি বাঁচাতে। সভায় পশ্চিম বর্ধমান জেলার আইএনটিটিইউসি সভাপতি অভিজিৎ ঘটক বলেন, পশ্চিম বর্ধমান জেলা যেহেতু শিল্পভিত্তিক জেলা তাই এখানে শ্রমিক সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারলেই তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন আরো শক্তিশালী হবে।


তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, কারখানায় মলয় ঘটক একটি করে ইউনিয়ন করার কথা বলেছেন। তাকে আমি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলছি, এতে কারখানায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যাবে । প্রত্যেক কারখানাতেই একজনকেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত ।


এ দিন সভার জায়গাটি ছোট হওয়ায় প্রচুর সংখ্যক কর্মী ও সমর্থক সেখানে ঢুকে পড়ায় চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মঞ্চে ৩০ জনের বসার কথা থাকলেও প্রায় ২০০ জন উঠে পড়েন। তারমধ্যে বসার জন্য কারোর কারোর চেয়ারও টেনে নেওয়া হয়। সভা চলাকালীন সকলেই প্রায় উঠে দাঁড়ান । এমনকি এদিন ধাক্কাধাক্কির শিকারও হতে হয় বেশ কয়েকজন সাংবাদিককেও। শেষ পর্যন্ত অবস্থা সামাল দেন মন্ত্রী মলয় ঘটক অভিজিৎ ঘটক ও বিধান উপাধ্যায়। জেলা সভাপতি অভিজিত ঘটক গোটা ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেন ভবিষ্যতে এ দিকে বিশেষ নজর রাখা হবে।
এদিনের সভায় রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু, জেলার সব বিধায়করা ছাড়াও বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শ্রমিক সংগঠনের জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply