BusinessDURGAPURWest Bengal

শিল্পে বাংলাকে প্রথমে আনা, এটাই লক্ষ্য আমাদের, হচ্ছে বিনিয়োগ, বাড়বে কর্মসংস্থান, কুচবিহার ও নবদ্বীপকে হেরিটেজ শহর ,পানাগড় শিল্প তালুকে বেসরকারি কারখানার উদ্বোধন করে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, পানাগড় ( দূর্গাপুর, ১ সেপ্টেম্বরঃ রাজ্য গত ১০ বছরে ১ লক্ষ কোটি শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে। আগামী দিনে আরো বিনিয়োগ হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের রাজ্য সরকার শিল্পের পাশে রয়েছে। তারজন্য একটি হাই পাওয়ার কমিটি ( High Power Committee) করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তার চেয়ারম্যান আমি। বুধবার দুপুরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরের পানাগড় শিল্প তালুকে ( Panagarh Industrial Area) ধানসিঁড়ি পলি ফিল্ম নামে একটি বেসরকারি কারখানার শিল্যানাস করতে এসে এইভাবেই রাজ্যে আগামী দিনে শিল্প সম্ভাবনার কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ( Mamata Banerjee)


এদিন পানাগড় শিল্প তালুকের এই অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। যারমধ্যে রয়েছে আরো ৬টি কারখানার শিলান্যাস, বীরভূমে শ্রম দপ্তরের শ্রমিক ভবন ও অতিথি নিবাসের উদ্বোধন, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এসবিএসটিসি বা দক্ষিণ বঙ্গ পরিবহন সংস্থার ৩৮ টি রুটের বাসের উদ্বোধন। এদিন পুলিশ ডে পালন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। অনুষ্ঠানের একবারে শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চের পাশে একটি স্মারকে পুলিশ ডে উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানান।


এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলা একমাত্র রাজ্য যেখানে পুলিশ ডে পালন করা হয়। আর সেটা আমরা শুরু করেছি। এদিন শুনলাম একজন টুইট করে পুলিশ ডে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। কি আর বলবো। তবে এটা করা ঠিক নয়, এতটুকু বলতে পারি। রাজ্য সরকার ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে কুচবিহার ও নবদ্বীপকে হেরিটেজ শহর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশের মধ্যে বাংলা একমাত্র রাজ্য যেখানে দুটি হেরিটেজ শহর হচ্ছে।


তিনি বলেন, রাজ্যে শিল্প সম্ভাবনার কথা বেশকিছু নতুন পলিসি নিয়েছে। সবকিছুকে সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেমের মধ্যে আনা হবে। তারজন্য যে কমিটি আছে, সেই কমিটি মাসে একবার করে বৈঠক করবে। দেখা হবে শিল্প করতে কারোর কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। যদি হয়, তাহলে তার দ্রুত সমাধান করা হবে।
বীরভূমের দেউচা পাচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি হতে চলছে। এখানে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এখানে প্রথম পর্যায়ের জন্য জমি সরকারের কাছে আছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য জমি অধিগ্রহন করা হবে। তারজন্য জমিদাতাদের ক্ষতি পূরণ সহ সবকিছু করে দেওয়া হবে।


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারীতেও ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান বাড়াতে পেরেছি। বাংলায় গত দুবছরে ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যতা কমেছে। বাংলায় বিনিয়োগ করুন। আমাদের সরকার শিল্পের পাশে আছে। এ রাজ্য শিল্পে এক নম্বর হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাল থেকেই ব্যাঙ্কের কাজের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে। ক্ষুদ্র শিল্পে এগিয়ে আসার জন্য এই জেলার শিল্পপতিদের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী । তারজন্য তিনি বনিকসভা গুলিকে এগিয়ে আসতে বলেন, তিনি বলেন, রাজ্যে এখন ৩০লক্ষ ডিম প্রতিদিন বাইরে থেকে আনতে হয়। পোল্ট্রি শিল্প আপনারা করুন। হাঁস, মুরগী তো সরকার দেয়। এতে আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে । ভ্যাকসিন সংকটের দায় কেন্দ্র সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ১৪ কোটি ভ্যাকসিন প্রয়োজন। দেশের মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়ায় আমরা এক নম্বরে। আমরা ৪ কোটি ভ্যাকসিন দিতে পেরেছি। আমরা সবাইকে ভ্যাকসিন দেবো। কেউ হুড়োহুড়ি করবেন না। কারোর কোন কথা শুনবেন না।

তিনি বলেন, বায়ো ফুয়েল হিসাবে আমরা ইথানলকে বেছে নিয়েছি। তারজন্য ইথানল প্রজেক্ট প্রমোশন পলিসি আমরা করেছি। ভাঙ্গা চাল বা চালের খুদ থেকে তৈরি হয় এই ইথানল। এই শিল্পে ৪৮ হাজার কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেড় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে । রাজ্য সরকার অন্ডাল বিমানবন্দরকে গ্রিনফিল্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। তারজন্য বাজেটে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আমরা ৪০০ মেগাওয়াটের ডেটা সেন্টার ইন্ডাস্ট্রি করতে চলেছি। আইটি ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়ে। রাজ্যে এখন এই ক্ষেত্রে দেড় হাজার কোম্পানি কাজ করে। পানাগড়ের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সামাজিক প্রকল্প নিয়ে বলেন, আমাদের মতো কেউ পারবে না। আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে খাবার সব বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। এবার আমাদের লক্ষ্য শিল্প । দুয়ারে সরকারে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২ কোটি মানুষ ফর্ম জমা দিয়েছে । তার মধ্যে দেড় কোটি শুধু লক্ষীর ভান্ডারের জন্য জমা পড়েছে ।


এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রাজীর সিনহা, অস্থায়ী ভাবে মঙ্গলবারই রাজ্য পুলিশের ডিজির দায়িত্ব নেওয়া মনোজ মালবিয়া, রাজ্যের আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক, তাপস বন্দোপাধ্যায়, অনুব্রত মন্ডল। এদিন দূর্গাপুর সার্কিট হাউস থেকে সড়ক পথে মুখ্যমন্ত্রী দুপুর একটা নাগাদ পানাগড় শিল্প তালুকে পৌঁছান। অনুষ্ঠান শেষে তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

Leave a Reply