ASANSOL

আইনজীবীদের অসহমতির পর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ পূর্ববর্তী নির্দেশের ওপর

বেঙ্গল মিরর,সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত:
কলকাতা হাইকোর্ট ( Calcutta High Court)
এনডিপিএস অ্যাক্ট, পকসো অ্যাক্ট, ইলেকট্রিসিটি এ্যাক্ট, প্রিভেনশন অফ করাপশন অ্যাক্ট এর অধীন মামলায় মহকুমা আদালতে আগাম জামিন আবেদনের (Interim Bail) শুনানি আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিল ।

জেনে রাখা ভালো, কিছুদিন আগে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের মহকুমা আদালতগুলিকে আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু করার অনুমতি দেয়। ওই সময় হাইকোর্ট বলেন, বিচার বিভাগকে জনগণের দুয়ারে আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের কারণে মহকুমা আদালতের আইনজীবীদের মধ্যে আনন্দের পরিবেশ তৈরী হয়। আর হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে বেশ কয়েকটি মহকুমা আদালত ইতিমধ্যে আগাম জামিন আবেদনের শুনানি করেছে।

কিন্তু রাজ্যের বেশ কিছু বার অ্যাসোসিয়েশন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং কারিগরি কারণ দেখিয়ে এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানায়। বর্ধমান বার অ্যাসসিয়েশন হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে একদিনের ‘ধর্মঘট’ বা সিজ ওয়ার্ক করে। হাইকোর্টে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তাও আসতে শুরু করে। এদিকে, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাব্বার রশিদি বৃহস্পতিবার জেলা আদালতের বিচারকদের একটি চিঠিতে বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের আদেশ কার্যকর করা যাবে না।

আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র অ্যাডভোকেট শেখর চন্দ্র কুণ্ডু বলেন, “প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারি করে আইন পরিবর্তন করা যাবে না। সিআরপিসিতে বলা হয়েছে, জেলা ও দায়রা জজগণ আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি করবেন। হাইকোর্ট আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। মহকুমা আদালতে বিচারকের সংখ্যা খুবই কম। মামলার চাপে রয়েছে। জেলা আদালতে অতিরিক্ত দায়রা জজের সংখ্যা অনেক বেশি। স্পিডি-ট্রায়াল দেওয়া সম্ভব।

কিছুদিন আগে আইনজীবী শেখর কুন্ডু এই বিষয়ে দক্ষিণবঙ্গের বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি বৈঠকে এই ব্যাপারে রাজস্থান হাইকোর্টের একটি রায়ের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে সাব ডিভিশন লেভেলের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজ কখনই ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজের সমতুল্য ক্ষমতার অধিকারী নন। এছাড়া বাঁকুড়া কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এনডিপিএস অ্যাক্ট এর একটি মামলার উদাহরণও তিনি তুলে ধরেন। সেখানে বিচারপতি হিমাংশু বসাক এবং অন্যান্য বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী এনডিপিএস অ্যাক্ট এর মামলা একমাত্র ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজের শুনানির ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া তিনি একারণেই তিনি পৃথক সার্কিট বেঞ্চের দাবি জানান।

বর্ষীয়ান আইনজীবী ও আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি অমিতাভ মুখার্জি বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারি করে আইন পরিবর্তন করা সম্ভবপর নয়। এর আগে আমি এই বিষয়ে আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি বৈঠকে বলেছিলাম এসব করতে হলে সিআরপিসি ৯ নং ধারার আমেন্ডমেন্ট করা দরকার সবার আগে। আমেন্ডমেন্ট ছাড়া আগের করা নোটিফিকেশন অবৈধ। ওই অবৈধ সিদ্ধান্তের ফলে ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজ এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। শেষপর্যন্ত হাইকোর্ট আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কিছুদিন আগে আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের হলে দক্ষিণবঙ্গের বার অ্যাসোসিয়েশনগুলির মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে হাইকোর্টের পূর্ব সিদ্ধান্তের বিরোধ প্রকাশ করা হয়।

এদিকে হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তকে সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রাজেশ তিওয়ারি, সেক্রেটারি বাণী কুমার মন্ডল, সুপ্রিয় হাজরা, মণিপদ্ম ব্যানার্জি, শান্তনু ব্যানার্জি, সনাতন ধারা, অনুপ মুখার্জি, অভিজিৎ রায়, প্রলয় চ্যাটার্জী,ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট পিপি ইনচার্জ স্বরাজ চ্যাটার্জী, মুনীর বেগ, অসিত নায়েক, স্বপন সরকার,পীযুষ কান্তি দাস ছাড়াও অন্যান্য আইনজীবীরা ।

Leave a Reply