Bengali News

শিল্পাঞ্চল জুড়ে চাঞ্চল্য, জয়দেব মন্ডল সহ ৪ গ্রেফতার, তোলা হবে আসানসোলের বিশেষ আদালতে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৭ সেপ্টেম্বরঃ রাজ্য তথা দেশ জুড়ে তোলপাড় ফেলে দেওয়া কয়লা কান্ডের (Coal Smuggling ) তদন্ত করতে নেমে প্রায় এক বছর পরে সিবিআই CBI সোমবার অনুপ মাঝি ওরফে লালা ( LALA) ঘনিষ্ঠ চার কয়লা মাফিয়াকে ( Coal Mafia ) গ্রেফতার করলো। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে আসানসোল শিল্পাঞ্চল সেই বাম আমলে থেকে বেআইনি কয়লা কারবারে হাত পাকানো কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া আসানসোলের জয়দেব মণ্ডল ( Joydeb Mondol) ও রানিগঞ্জের কয়লা মাফিয়া নারায়ন নন্দা। বাকি দুজন হলো বাঁকুড়ার মেজিয়ার নীরোদ মন্ডল ও পুরুলিয়ার গুরুপদ মাঝি । মঙ্গলবার আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে এই চারজনকে তোলা হবে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে।


২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর সিবিআই অবৈধ কয়লা খনি , কয়লা চুরি ও বেআইনি কয়লা পাচারের অভিযোগে পুরুলিয়ার বাসিন্দা অনুপ মাঝি ওরফে লালা ও ইসিএলের দুইজন জিএম এবং তিন নিরাপত্তা আধিকারিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলো। সিবিআই এই মামলায় পরে সারাদেশে প্রায় ৩০ টি জায়গায় তল্লাশি চালায় । গত ১৬ সেপ্টেম্বর আসানসোলে ইসিএলের সাতগ্রাম এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজারের বাড়িতে এবং অফিসে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই সর্বশেষ অভিযানে নেমে তল্লাশি চালিয়েছিলে।

এখানেই শেষ নয় সিবিআই তদন্ত শুরু করার পরে এই কান্ডে ইডি আলাদা করে তদন্ত শুরু করে। অনুপ মাঝি ওরফে লালাকে সিবিআই গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার নোটিশ দিয়ে ডাকলেও সে আসেনি। এমনকি তার বাড়িতে তল্লাশি চালালেও তাকে এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি । তবে তার দুটি কারখানা সহ ১৬৫ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি সিবিআই ইতিমধ্যেই অ্যাটাচমেন্ট করেছে বলে জানা গেছে। সিবিআই সূত্র থেকে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া এই চারজনকে সোমবার কলকাতায় সিবিআই দপ্তর দুর্নীতি দমন বিভাগের আধিকারিকরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলেন । কিন্তু সেখানে তারা সঠিক উত্তর তো দেয়নি। উল্টে তারা সেই জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ ।


সিবিআই ইতিমধ্যেই তদন্ত করে জানতে পারে যে, অনুপ মাঝির সঙ্গে বেআইনি কয়লা কারবারে সারাদেশে যারা অন্যতম সঙ্গী হিসেবে কাজ করছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলো আসানসোলের জয়দেব মন্ডল। এরা শুধু বাংলাতেই নয় অন্য রাজ্য কোথায় কিভাবে কয়লা পাচার হবে ,কোথা থেকে কিভাবে টাকা আসবে, কোন কোন প্রভাবশালী মাধ্যমে তা যাবে সব দেখতো বলে জানা গেছে।
তবে জয়দেবের গ্রেফতারে রীতিমতো চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে আসানসোলে। কেননা সেই বাম আমল থেকে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কয়লাখনি এলাকায় অবৈধ কয়লা খনি তৈরী করা থেকে কয়লা চুরি ও কয়লা পাচার দক্ষিণ বঙ্গের জেলাগুলি থেকে হতো তার নেতৃত্বে ছিলো এই জয়দেব মণ্ডল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বাম আমলে কখনো কোনও থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। বলা ভালো, সেই অভিযোগ করার সাহস কেউ পাননি। সেই সময় অবাধে জামুরিয়া, রানিগঞ্জ, বারাবনি, কুলটি, সালানপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ কয়লা খনি থেকে কয়লা তোলা হতো। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার পাশাপাশি ভিন রাজ্যে তা পাঠানো হতো।


২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পরে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জয়দেব মণ্ডলকে কলকাতার রাজ্য পুলিশের এসটিএফ বা স্পেশাল টাস্কফোর্সের এক আধিকারিকের নেতৃত্বে গাড়িতে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। লালা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই কয়লা পাচার মামলায় সিবিআই এর আগে জয়দেব মণ্ডল , নারান নন্দা ও গুরুপদ মাজির বাড়িতে গিয়ে হানা দিয়েছিলো। সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য সিবিআইয়ের আধিকারিকরা সংগ্রহ করেছিল। সিবিআই এই চারজনকে গ্রেফতার করার পর বেশকিছু প্রভাবশালী ও তদানীন্তন সময়ে এইসব জেলায় থানায় দায়িত্বে থাকা একাধিক আধিকারিকের নাম উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ।

কয়লা পাচারকাণ্ডে গ্রেফতার নারায়ণ, জয়দেব , নীরদ ও গুরুপদ

Leave a Reply