ASANSOL

আসানসোল গ্রামের ৮ দূর্গা পুজোর ঐতিহ্য ২৮৭ বছরেও অমলিন, করোনার জন্য থাকছে বিধিনিষেধ

বেঙ্গল মিরর, .রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৯ অক্টোবরঃ করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা ২০২০ সালে ছিলো। সেই কারণেই ঐ বছর অনেক কিছুতেই কাটছাঁট করতে হয়েছিলো। এবার ২৮৭ তম বর্ষে অতোটা কড়াকড়ি না থাকলেও, করোনার কারণে কিছু বিধিনিষেধ থাকছে। তাই কিছু পুরনো রীতি ও আচার এবার আবার ফিরে আসতে চলেছে আসানসোল গ্রামের একসঙ্গে হওয়া ৮টি দুর্গা পুজোয়। একসঙ্গে ৮ টি দুর্গাপুজোর নবপত্রিকা স্নান বা কলা বউ আনা ও বিসর্জনের শোভাযাত্রা গত বছর না হলেও, এই বছর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দশমীর সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রাও এই বছর হবে। তবে প্রতিমা বিসর্জ্জনের আগে রামসায়ের ময়দানে আতসবাজীর প্রদর্শন এই বছরও বন্ধ রাখা হচ্ছে। হাইকোর্ট কিছু শর্ত দেওয়ায় আসানসোল গ্রামের পুজোয় এইবার সিঁদুরখেলা হবে। তবে গত বছরের মতো বলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বছরেরও।
করোনার জন্য আলোচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানালেন আসানসোল গ্রাম দূর্গাপুজো কমিটি ও আসানসোল গ্রাম শ্রী শ্রী নীলকন্ঠেশ্বর জিউ দেবোত্তর ট্রাস্ট।


কমিটি ও ট্রাস্টের সভাপতি শচীন রায় আরো বলেন, আসানসোল গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সাবেকি ৮ টি দুর্গাপুজোয় বিগত বছর গুলির মতোই প্রতিমা হবে। ভিড় এড়াতে গ্রামের ৮ টি পুজোর নবপত্রিকা স্নান করিয়ে রামসায়ের পুকুর থেকে আনা এই বছর একসঙ্গে হবেনা। আলাদা আলাদা করে তা আনা হবে । পুষ্পাঞ্জলিও একসঙ্গে কেউ দিতে পারবেন না। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে ছোট ছোট দল করে তা করা হবে। দশমীতে সিঁদুর খেলা হবে। তবে হাইকোর্টের নির্দেশ মতো যারা ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ নিয়েছেন, সেইসব মহিলারাই অংশ নিতে পারবেন। দশমীর সন্ধ্যায় যেমন রীতি মেনে বিসর্জন হয় তা হবে। আসানসোল গ্রাম থেকে ৮ প্রতিমা একসঙ্গে শোভাযাত্রা সহকারে রামসায়ের পুকুরে যাবেনা। দুটো বা তিনটে করে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সব স্বাস্থ্য বিধি মেনে পুজোর আয়োজন করা হবে।


জানা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে আসানসোলের প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন নকড়ি রায় ও রামকৃষ্ণ রায়। বর্গীদের হাত থেকে রাঢ়বাংলাকে বাঁচিয়েছিলেন পঞ্চকোট রাজার এই দুই বীর সেনানী। বর্তমানে এই রায় পরিবারের সদস্য সংখ্যা দশহাজারের বেশি। আসানসোল গ্রাম, বুধাগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছেন রায় পরিবারের সদস্যরা। ২৮৭ বছর আগে এই গ্রামে দুর্গা পুজো শুরু করেছিলেন রামকৃষ্ণ ও নকড়ি রায়। পরবর্তীকালে পরিবার বড় হওয়ার কারণে বর্তমানে ৮ টি দূর্গাপুজো হয় এই আসানসোল গ্রামে। বড় দুর্গা, মেজ দুর্গা, ছোট দুর্গা নানা নামে পরিচিত রয়েছে আসানসোল গ্রামের পুজোগুলি।


শচীন রায় আরো বলেন এই ৮ টি পুজোর নবপত্রিকা স্নান করানো সহ সবকিছুই এতো বছর ধরে একসঙ্গে হয়ে এসেছে। এইসবে বহু মানুষের ভিড় হয়। বলির পর পুজোগুলিতে মহাভোগ খেতে আসেন হাজার হাজার মানুষ । করোনা থেকে বাঁচতে এবার তাই আমরা সর্বসম্মতিক্রমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেইসব রীতি রেওয়াজে পরিবর্তন বা বন্ধ করছি।
আসানসোল গ্রামের মানুষেরা যারা এইসব পুজোয় রয়েছেন, তারা বলেন, মন খারাপ হলেও, কিছু করার নেই। এই পরিস্থিতিতে এমনভাবেই পুজো করতে হবে। আগে তো জীবন। তারপর তো উৎসব আনন্দ।

Leave a Reply