বার্ণপুরে চাঞ্চল্য,প্রকাশ্য রাস্তায় ভোজালি দিয়ে গলা কেটে, কুপিয়ে খুন
পুরনো বিবাদের জেরে ঘটনা, অনুমান পুলিশের, থানায় আত্মসমর্পন যুবকের
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১৮ জানুয়ারিঃ প্রকাশ্য রাস্তায় সাতসকালে ভোজালি দিয়ে গলা কেটে ও কুপিয়ে প্রতিবেশীকে খুন করার অভিযোগ উঠলো এক যুবকের বিরুদ্ধে। পরে ঐ যুবক রাস্তায় অন্য এক ব্যক্তির স্কুটি নিয়ে পালিয়ে থানায় আত্মসমর্পন করে। ঘটনার তদন্ত করার পরে ঐ যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার সকালে আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের রহমতনগর চাবি মোড় এলাকায় এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বার্ণপুরের রহমতনগরের চাবি মোড় এলাকার বাসিন্দা মৃত ব্যক্তির নাম ফজল ইমাম ওরফে গুড্ডু (৪৯)। গ্রেফতার হওয়া যুবকের নাম মহঃ আলি ওরফে সনু। ব্যক্তিগত পুরনো কোন বিবাদের কারণে প্রতিহিংসা থেকেই সনু ফজল ইমামকে নৃশংসভাবে খুন করেছে বলে, প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান। ঘটনায় আসল কারণ জানতে হিরাপুর থানার পুলিশ ধৃত যুবক ও খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছে।
জানা গেছে, এদিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ রহমতনগরের চাবি মোড়ের বাসিন্দা ফজল ইমাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারে মাছ কিনতে যাচ্ছিলো। বাজার ও বাড়ির মাঝে ১০০ মিটার দূরে রাস্তায় পেছন দিক থেকে সনু ওরফে মহঃ আলি ফজল ইমামের উপর চড়াও হয়। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় আচমকাই কোমর থেকে ভোজালি বার করে সনু ফজলকে কোপাতে শুরু করে। রক্তাক্ত অবস্থায় ফজল রাস্তায় পড়ে গেলে সনু তার উপর চেপে ভোজালি দিয়ে গলা কেটে দেয়। অভিযোগ, আশপাশের লোকেরা এই ঘটনা দেখলেও, প্রথমে কেউ নাকি এগিয়ে আসেনি। কেউ কেউ মোবাইলে এর ছবিও তোলে। পরে দু/একজন দৌড়ে এলে সনু পালাতে শুরু করে। সেই সময় রাস্তায় একজন স্কুটি নিয়ে আসছিলো। সনু তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে, তার স্কুটি ছিনিয়ে নেয়। পরে সে হিরাপুর থানায় গিয়ে গোটা ঘটনার কথা বলে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
সনুর কথা শুনে সেই সময় থানায় থাকা পুলিশ অফিসাররা হতচকিত হয়ে যান। তারা সনুকে আটক করে। ততক্ষণে ঘটনার খবর চলে আসায় হিরাপুর থানার পুলিশ এলাকায় যায়। ফজল ইমামকে আহত অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মুদি সহ অন্য পুলিশ অফিসাররা ঘটনাস্থলে আসেন। ঘটনার জেরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের এলাকার মানুষেরা সেখানে এসে ভিড় জমান।
জানা গেছে, সনু মাদকাসক্ত ছিলো। বছর পাঁচেক আগে জল নিয়ে সনুর সঙ্গে ফজল ইমামের বিবাদ হয়েছিল। এই ঘটনা নিয়ে আসানসোল পুরনিগমের ৮২ নং ওয়ার্ডের তৃনমুল কংগ্রেসের ওয়ার্ড সভাপতি আমাতুল্লা খান বলেন, সকালে খবর পাই যে সনু ফজল ইমামকে ভোজালি দিয়ে গলা কেটেছে। এলাকায় আসি। সনুর সঙ্গে কয়েক বছর আগে একবার ফজলের ঝগড়া হয়েছিলো। তারপর তো আর কিছু হয়নি। তিনি আরো বলেন, অন্য দুজনের সঙ্গেও ঝগড়ার সময় সনু ভোজালি মারে। তারমধ্যে একটা ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিলো। তার তিনমাস জেলেও হয়ে। কিন্তু ফজলকে কেন মারলো বুঝতে পারছিনা।
এদিকে, প্রতিবেশী যুবকের হাতে ফজলের খুন হওয়া মেনে নিতে পারছেন না, তা পরিবারের সদস্যরা। তার স্ত্রী মাহজবি খাতুন ঘটনার কথা শুনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রতিবেশীরা তাকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমাকে নাস্তা ( সকালের খাবার) দিতে বলে সে বাজার বেরোয়। বলে যায়, এসে খাচ্ছি। পরে শুনি রাস্তায় সনু তাকে ভোজালি মেরেছে।
ডিসিপি (পশ্চিম) বলেন, সনু নামে ঐ যুবক ভোজালি দিয়ে প্রতিবেশীকে খুন করে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।প্রাথমিকভাবে তদন্ত ও ধৃতকে জেরা করে অনুমান পুরনো কোন বিবাদের জেরে এই খুনের ঘটনা। আসল কারণ জানতে তদন্ত করা হচ্ছে। এদিকে এই ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।