ASANSOL

আসানসোলে ৪০ বছর ধরে চলা স্কুল উচ্ছেদ করলো রেল, ২৫০ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৫ মেঃ ( Asansol News Today In Bengali ) ৪০ বছর ধরে রেলের কোয়ার্টার বেআইনি ভাবে দখল করে চলা একটি হিন্দি মাধ্যম স্কুলকে উচ্ছেদ করলো পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন কতৃপক্ষ। স্কুলের সব আসবাবপত্র রেল কতৃপক্ষ বাজেয়াপ্ত করে নেয়। পাশাপাশি স্কুলের বাইরে লাগানো বোর্ডে কালো রং করে দেওয়া হয়। এই উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সময় যাতে কোন সমস্যা ও বাধার মুখে পড়তে না হয়, তারজন্য রেল আধিকারিক ও কর্মীদের সঙ্গে আরপিএফের জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছিলো। তবে কোন বাধার মুখে পড়তে হয় নি রেল কতৃপক্ষকে।


বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসানসোলের যোগীবাবা স্থান সংলগ্ন ডুরান্ড কলোনি এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ৪০ বছর ধরে চললেও বিবেকানন্দ হাইস্কুল নামে এই স্কুলটির সরকারি কোন অনুমোদন ছিলোনা। মুলতঃ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ছিলো এই স্কুলটি। প্রাথমিক বিভাগ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো এই স্কুলে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে পড়ুয়ারা টিসি বা ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে চলে গিয়ে অন্য স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতো। বর্তমানে এই স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা ২৫০ জন। স্কুলটি উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় এইসব পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকারে চলে গেলো তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।


আসানসোলের জিটি রোডের হটন রোড মোড় থেকে যোগীবাবা স্থান যাওয়ার রাস্তায় বাঁদিকে দেখা যেতো এই স্কুলকে।
রেল কোয়ার্টার দখল করে বেআইনি ভাবে এত বছর ধরে স্কুল চালালেও এদিনের অভিযানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্কুল কতৃপক্ষ। তারা বলেছেন, কোন নোটিশ ছাড়াই, সময় না দিয়ে রেল কতৃপক্ষ এই স্কুল তুলে দিয়ে অন্যায় ও বেআইনি কাজ করেছে। তাদের পড়ুয়াদের কথা ভাবা উচিত ছিলো। স্কুলের শিক্ষক ও কর্মীরা এদিন হুমকির সুরে বলেন, আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করবো। রেলের এই সিদ্ধান্তর বিরুদ্ধে আমরণ অনশন বসবো। প্রয়োজন হলে আত্মহত্যা করবো।


স্কুলের অধ্যক্ষ হাসান জাভেদ স্বীকার করেন যে, গত ৪০ বছর ধরে রেলের কোয়ার্টার দখল করে এই স্কুল চলছে। এদিন তিনি বলেন, রেল তো কত জায়গায় কত কিছু লিজ বা ভাড়ায় চালাচ্ছে। আমরাও বিভিন্ন সময়ে স্কুল চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী, রেল মন্ত্রী থেকে রেল বোর্ডের কাছে দরবার করেছি। কিন্তু, রেল তা না শুনে সুপ্রিম কোর্টের একটা নির্দেশ হাতিয়ার করে স্কুল বন্ধ করে দিলো। তিনি দাবি করে বলেন, এর জন্য রেল কোন নোটিশ দেয়নি। এমনকি যে সব জিনিসপত্র রেল নিয়ে গেলো, তার কোন সিজার লিস্ট করা হয়নি। পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে, পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি এদিন বলেন।
যদিও রেল কতৃপক্ষ এই অভিযানের মধ্যে কোন অন্যায় দেখছেন না।


পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের পিআরও বা জনসংযোগ আধিকারিক এসসি মন্ডল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ শুধুমাত্র পালন করছে। রেলকে কোর্ট নির্দেশ দিয়ে বলেছে, দেশের যেখানে যেখানে রেলের জমিতে বেআইনি দখলদার আছে, তা দখল মুক্ত করতে হবে। সেই মতো এদিন রেলের তরফে কোয়ার্টার দখল করে থাকা স্কুল উচ্ছেদ করা হয়েছে। সব জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্কুল কতৃপক্ষের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন, নিয়ম মতো রেলের তরফে স্কুল কতৃপক্ষের কাছে নোটিশ পাঠিয়ে কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিলো। তারা তা না করায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার দায় অভিভাবক ও স্কুল কতৃপক্ষের। রেলের এতে কিছু করার নেই। জনসংযোগ আধিকারিক আরো বলেন, আসানসোলের রেলপার এলাকায় মহুয়াডাঙ্গা ও চাঁদমারিতে রেলের জমিতে থাকা বেআইনি জবরদখল উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply