RANIGANJ-JAMURIA

রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজবাড়ি গ্রামে 300 বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জি, রাণীগঞ্জ  : রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজবাড়ি গ্রামের মানুষ এক’সময় মহামারীর প্রকোপ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে গ্রামের শেষ প্রান্তে বৈশাখ মাসের কুড়ি দিন পর যে শনিবার পড়ে সেই শনিবার ধরে মা রক্ষা কালীর পুজো শুরু করেন। দীর্ঘ প্রাচীন সেই ঐতিহ্যকে আজও অক্ষরে অক্ষরে বজায় রেখে প্রায় 300 বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা শনিবার রাত্রে শ্রদ্ধার সঙ্গে করলেন এলাকার হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ। এখানের কালীপুজোর বিশেষত্ব হচ্ছে রক্ষা কালীর মূর্তি একই দিনে গড়ে তোলার পর রাতভর পুজো হোম যজ্ঞ বলিদান কর্মসূচির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে, পরে রাতে পংক্তি ভোজে শামিল হওয়ার পর সমগ্র গ্রাম সকালের সূর্য উদয় হওয়ার আগেই নিরঞ্জন করেন মা রক্ষা কালী কে। সেই 300 বছরের প্রাচীন রীতি রেওয়াজ কে আজও এই প্রজন্মের মানুষ জন সমান ভাবে পালন করে চলেছেন।

গ্রামের নবীন থেকে প্রবীণ সকলেই এই রীতি রেওয়াজ কে আজও মানেন। পূর্বপুরুষের কথা প্রসঙ্গে জানা যায় এক সময় গ্রামে দেখা গেছিল মহামারী কলেরার প্রকোপ। একের পর এক গ্রাম উজাড় হয়ে চলেছে কলেরার প্রকোপে। সেই সময়কালেই গ্রামকে রক্ষার লক্ষ্যে গ্রামের প্রবীণ সদস্যরা চিন্তা করলেন গ্রামে দেবী আরাধনার মাধ্যমে গ্রাম্য দেবীর পুজোর আয়োজন করবেন তারা। সে মতোই তৎকালীন সময়ে গ্রামের পুরোহিত অনন্ত লাল ভট্টাচার্যকে মা রক্ষা কালী পুজোর জন্য আবেদন জানান সকলে। গ্রামের প্রবীণ সদস্যদের সেই মায়ের বন্দনায় ব্রতী হওয়ার বিষয় কে লক্ষ্য করে, দিনক্ষণ তিথি নক্ষত্র ধরে বৈশাখ মাসের কুড়ি দিন পরে যে শনিবার, সেদিন ভোরে মা রক্ষা কালীর পুজোর আয়োজন করলেন। পরে মা কালীর স্বপ্নাদেশে নির্দেশদেন তার মন্দির যেন কখনোই আবৃত না থাকে, খোলা আকাশের নিচেই যেন তার পুজো করা হয়। সে মতোই গ্রামের শেষ প্রান্তে তেঁতুল গাছের নিচেই পূজিত হন মা রক্ষা কালী।

গ্রামে রাতের মধ্যেই মা কালীর মূর্তি গড়ে তুলে তৎকালীন সময়ে মশাল জ্বালিয়ে, কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে, পুজো শুরু হয়, মা রক্ষা কালীর, এরপরই মা কালীর অসীম কৃপায় গ্রাম রক্ষা পায় কলেরার প্রকোপ থেকে। এই বিষয়টি লক্ষ্য করেই ধর্মপ্রাণ মানুষজন সে থেকেই মা রক্ষা কালী পুজোয় প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে একইভাবে মায়ের মূর্তি গড়ে পুজো আর্চার করে আসছেন। শাক্ত মতে মায়ের পুজো শুরুর পর মায়ের কৃপায় এলাকার উন্নয়ন হতে থাকে দিন প্রতিদিন। তৎকালীন সময়ে চাষ আবাদের ওপর বেশি জোর থাকায় সেসময় চাষাবাদ ও ব্যাপক পরিমাণে হতে থাকায় এলাকার মানুষজন আরো বেশি উৎসাহিত হয়ে পড়েন। সেই থেকেই ভট্টাচার্য্য পরিবারের সদস্যরা তাদের পূর্বপুরুষের চলা পথ ধরে আজও মা রক্ষা কালী পুজোয় ব্রতী হয়েছেন বছরের পর বছর ধরে বর্তমান সময়ে তাদের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য জয়দেব ভট্টাচার্য এবার পেয়েছেন পুজোর দায়িত্ব।

তিনি জানান দীর্ঘদিনের রীতি-রেওয়াজ মেনে তারা এই পুজো করে আসছেন আজও একই ভাবে মা রক্ষাকালী গ্রামের মানুষের মনের মধ্যে বসে রয়েছেন, প্রতিটি মানুষের জন্য মা রক্ষা কালী উদারহস্ত, কেউই তার মনের কামনা পূরণ হলে মা রক্ষা কালী এই বিশেষ পুজোর দিনে তার মানত পূরণ করেন। এরই লক্ষ্যে বিগত সময়ের ন্যায় এ বছরও হাজারো ভক্তের ঢল লক্ষ্য করা যায় রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ বাড়ির রক্ষাকালী মেলা প্রাঙ্গণে। শনিবার রাত্রে নির্দিষ্ট প্রথা মেনে মা রক্ষা কালী কে গ্রাম প্রদক্ষিণ করিয়ে নিয়ে আসা হয় গ্রামের শেষের তেতুল তলার মন্দিরে পুজো আর্চার জন্য, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে এদিন মা রক্ষা কালী কে হাজার হাজার ভক্ত পুজোর জন্য শামিল হন মন্দিরে। রাতভর মেলার পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির সাথে পুজো শেষে পংক্তি ভোজে সামিল হন গ্রামের হাজারো মানুষ। পরে মায়ের বিসর্জন পর্বে আবার মা রক্ষা কালী কে নিরঞ্জন করা হয় সূর্য উদয়ের আগেই। আবার এসো মা এই সুরে সমোচ্চারিত ভাবে ডেকে ওঠেন সকলে জয় মা রক্ষা কালীর জয় বোলে।

Leave a Reply