RANIGANJ-JAMURIA

রানীগঞ্জের ষষ্ঠী গড়িয়ার পার্ক ধ্বংসের মুখে, বেহাল অবস্থা

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ:  ( Asansol Raniganj Today News ) খনি শহর রানীগঞ্জে সবথেকে মজার বিষয় লক্ষ্য করা গেছে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের নামে পার্ক গড়ে ওঠার বিষয়কে ঘিরে। তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে এখানে স্মরণ করার বিষয়টিও লক্ষ্য করা যায়নি, দীর্ঘ একটা সময় ধরে। অথচ সেই কবি সুকান্তর নামে আর্ট গ্যালারি থেকে শুরু করে পার্কের নাম করণ হয়ে গেছে ঐতিহাসিক শহর রানীগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে। একসময় এলাকার ছোট বড় খুদে কচি কাচাদের খেলার মাঠ না থাকতে থাকার বিষয়টি কে লক্ষ্য করে একসময় রানীগঞ্জের অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা হাট-তলা কে সরিয়ে 2000 সালে রানীগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ষষ্ঠী গড়িয়া এলাকাকে করা হয়েছিল শিশু উদ্যানে পরিণত। সেসময় বংশগোপাল চৌধুরীর উদ্যোগে প্রায় 10 বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছিল ষষ্ঠী গড়িয়া ময়দানে পার্কের কাঠামো, 2000 সালের তেসরা মার্চ তৎকালীন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এলাকায় পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর তার মাত্র 19 মাসের মাথায় 2001 সালের 17 অক্টোবর গড়ে তোলা হয় এলাকার কচিকাঁচাদের খেলাধুলার জন্য শিশু উদ্যান।

পার্কের চারিপাশে সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে পুকুরের দুই প্রান্তে পাম্প ট্রি লাগানোর সাথে বিভিন্ন বাচ্চাদের খেলার দোলনা সহ বিভিন্ন খেলার সামগ্রী বসানো হয় পার্কে । পার্কের এক প্রান্তে বেশকিছু পশুপাখি রাখার ব্যবস্থা করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলে মিনি চিড়িয়াখানা করা হয়। সেই সাথে এই পার্কের এক প্রান্তে খাদ্য রসিকদের রসনা তৃপ্তির জন্য খাবার স্টলের ব্যবস্থা করা হয়, আর এ সকলের সাথে পার্কের দুই প্রান্তে ফোয়ারা বসিয়ে জলের খেলা দেখানোর উদোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন সময়ে রানীগঞ্জ পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত ষষ্ঠী গড়িয়া পার্ক কমিটি, এর মধ্যেই রাইফেল শুটিং এর জন্য বেলুন ফাটানো স্টল ও বাচ্চাদের বৃহদাকৃতির বেলুনে ঝাপানোর খেলার লক্ষ্য করা যায় সে সময় কালে। তৎকালীন সময়ে পার্কের সৌন্দর্যায়নের ষষ্ঠী গড়িয়া পুকুটিকে সাজিয়ে তুলে তার মধ্যেও বেশ কিছু রাজহাঁস কে ছেড়ে দেওয়া হয়। আগের এই সকল বিষয় ব্যাপকভাবে উপভোগ করেছেন তৎকালীন সময়ের খুদে পড়ুয়াদের থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী তরুণ প্রজন্মের সকল সদস্যরা।

একসময় এই পার্কটি নাম ষষ্ঠী গড়িয়া শিশু উদ্যান এর নামকরণ করা হয়ে থাকলেও পরবর্তীতে তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য নামে সুকান্ত শিশু উদ্যান হিসেবে গড়ে তোলা হয় পার্কটি। আর এর সাথে কবি সুকান্তর বিভিন্ন স্মৃতি তার সৃষ্টি জনসমক্ষে তুলে ধরার লক্ষ্যে 2003 সালে সুকান্ত আর্ট গ্যালারি গড়ে তোলা হয় ওই পার্কের ঠিক সামনেই এক ঝাঁ-চকচকে হলঘরে । কিন্তু কালের নিয়মে আজ সবকিছুই প্রায় ধ্বংসের মুখে। পার্কের সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সময়ে ওই পার্কটিকে আসানসোল কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করা হলেও পার্কের খাবার স্টল থেকে শুরু করে , পশুপাখি রাখার ঘর ও যে ষষ্ঠী গড়িয়ার নামে পার্ক গড়ে উঠেছে সেই ষষ্ঠী গড়িয়া জলাশয় এর বর্তমানে বেহাল অবস্থা। পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন গাছ গাছালিতে ও কচুরিপানায় ভর্তি হয়েছে ওই জলাশয়টি অথচ এক সময় এই জলাশয়টিতে হতো সাঁতার প্রতিযোগিতা বহু সাঁতারু সাঁতার প্রতিযোগিতায়, অংশ নিতেন, জলাশয় কে ঘিরে মানুষজনের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো, কিন্তু এই সময় সেই সুকান্ত উদ্যানের ষষ্ঠী গড়িয়া জলাশয় আজ অবহেলায় প্রায় বিলুপ্তির মুখে।

একই সাথে এই পার্কের বিভিন্ন অংশগুলিতে ফোয়ারা গুলি ও বন্ধ হয়ে থাকায় পার্কের পুরনো সেই সৌন্দর্য আর ফিরে আসেনি। একইভাবে এখানে যে শৌচালয় গুলি রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের শৌচালয়ের তার অবস্থা করুন, সেগুলিকে ও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি পার্ক কর্তৃপক্ষকে, এক কথায় সব রকম ভাবেই উপেক্ষিত করা হয়েছে এই পার্ককে,যা পার্কে সামগ্রিক বিষয় গুলো লক্ষ্য করে বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রানীগঞ্জ বোরো টু র বাস্তুকার ইন্দ্রজিৎ কোনার জানিয়েছেন পার্কের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে খোঁজ খবর রাখা হয়েছে, পার্কের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার পরিছন্নতা সর্বদায় করা হয়, এরপরও কি কি খামতি রয়েছে তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে, এরপর তারাই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন।

যদিও রানীগঞ্জের পরিবেশ প্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের সদস্যদের দাবি যে স্থানে এই পার্কটি হয়ছে সেটি রানীগঞ্জের হৃদয় বলা যেতে পারে আর এই এলাকায় পার্কের সৌন্দর্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে, কর্তৃপক্ষ যদি সেসকল বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে পার্কটি তার পুরনো সৌন্দর্য ফিরে পাবে আর এর ফলে আকর্ষিত হয়ে উঠবে পার্কটি, বাড়বে জনসমাগম। সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আসানসোল কর্পোরেশন অবিলম্বে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে পার্কের সৌন্দর্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই সুকান্ত শিশু উদ্যান নিজের মর্যাদা ফিরে পাবে।

Leave a Reply