ASANSOL

গরু পাচার মামলা: আরো তদন্তের প্রয়োজন, দাবি সিবিআই এর, অনুব্রত মন্ডলের দেহরক্ষীকে আরো ৭ দিন হেফাজতে

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ সাতদিন সিবিআই হেফাজতে থাকার পর শুক্রবার আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয় অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে। এদিন সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর কাছে সায়গলকে আরো সাতদিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছিলো সিবিআই। স্বাভাবিক ভাবেই নানা যুক্তি ও সাতদিনে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তেমন কিছু না পাওয়ার কথা বলে সায়গলের সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করে, তার জামিনের আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী অনির্বান গুহ ঠাকুরতা। কিন্তু দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে দু’পক্ষের কথা শুনে বিচারক তার জামিন নাকচ করে, আরো সাতদিন সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এই মামলার পরবর্তী শুনানি দিন আগামী ২৪ জুন হবে বলে বিচারক নির্দেশ দেন বলে পরে জানান সায়গলের আইনজীবী।
কলকাতা নিজাম প্যালেস থেকে সিবিআই আধিকারিকরা এদিন সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে রওনা দিয়ে আসানসোল সিবিআই আদালতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ নিয়ে আসেন অনুব্রতর দেহরক্ষীকে।


গরু পাচার মামলায় ধৃত তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে আসানসোল সিবিআই আদালতে তোলা হয়েছিল গত ১০ জুন। সেদিন বিকেলে এই মামলার দু’পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব শেষে সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তার জামিন নাকচ করে সাতদিনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার এদিন সওয়াল করে বলেন, সায়গলের কাছে গরু পাচার মামলার অনেক তথ্য রয়েছে। সিবিআই তাকে একাধিকবার নিজামের প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সায়গলের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এছাড়াও আয় বহির্ভূত বহু সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে সায়গেলের কাছ থেকে। যার মধ্যে রয়েছে কলকাতার নিউটাউন সহ একাধিক জায়গায় একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি , বীরভূমে পেট্রল পাম্প, নগদ টাকা, সোনা ও গাড়ি।


সেগুলো ভেরিফিকেশন বা পরীক্ষা ও আরও কিছু বিষয় জানার জন্য তাকে আবার হেফাজতে নিতে হবে। কিন্তু তিনি সহযোগিতা করছেন না। তিনি সাইলেন্ট বা নীরব থাকছেন। তার পাল্টা সায়গলের আইনজীবী শুনানির সময় তিনটি প্রশ্ন তোলেন। প্রথমতঃ রাজ্য সরকারের কর্মী হওয়া সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার ও তদন্ত করার মধ্যে এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়নি। যা ছিল জরুরী। যেমন বিএসএফের কমান্ড্যান্ট হওয়ার জন্য সতীশ কুমারকে গ্রেফতারের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ তাকে সাইলেন্ট বা নীরব থাকার কারণ দেখিয়ে আবার হেফাজতে চাওয়ার অর্থ তার মৌলিক অধিকারকে নষ্ট করা। তৃতীয়তঃ আদালত তাকে সিবিআই হেফাজতে দেওয়ার সময় লিখিতভাবে বলেছিল বিচারপতি ডি কে বাসু গাইডলাইন ফলো করতে হবে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ৪৮ ঘন্টা পর পর তার মেডিকেল পরীক্ষা করার কথা হলেও, তা করা হয়নি বলে দাবি করেন সায়গলের আইনজীবী। তিনি আরো বলেন, বিপুল সম্পত্তির কথা বলা হলেও, এদিনের সিজার লিস্টে সিবিআইয়ের বীরভূমের একটি বাড়ির ইলেকট্রিক বিল ছাড়া কিছুই দেখায়নি। পরে সিবিআইয়ের আইনজীবী এইসবের জবাব দেন। বিচারক বারবার জানতে চান কেন রাজ্য সরকারের নিয়ম এক্ষেত্রে মানা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে আইন মেনে সবকিছু করার কথা বলে, আবেদনের ভিত্তিতে তার জামিন নাকচ করে সাতদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিলেন।


এদিনের শুনানিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো এই মামলার আইও বা তদন্তকারী অফিসারকে আগের দিনের শোকজ করা। আইন মেনে সিআরপিসির নির্দিষ্ট ধারায় নোটিশ না পাঠিয়ে সায়গলকে গ্রেফতার করায় বিচারক মামলার আইওকে লিখিত ভাবে কারণ দর্শানোর জন্য শোকজ করেছিলেন। বিচারকের নির্দেশ মতো সেই শোকজের জবাব এদিন তিনি জমা দেন। তাতে বিচারক সন্তোষ প্রকাশ করে বলে জানা গেছে আদালত সূত্রে।
প্রসঙ্গতঃ গরু পাচার মামলায় অনুব্রতর ঘনিষ্ঠদের একের পর এক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র বর্তমানে পলাতক। এই মামলার অন্যতম এনামুল হক ও বিএসএফের কম্যান্ডান্ট সতীশ কুমারকে সিবিআই গ্রেফতার করলেও তারা এই মুহুর্তে শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছে। একই সঙ্গে বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও গ্রেফতার করেছিলো সিবিআই। বিকাশ দশদিন আগেই আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছে।

Leave a Reply