ASANSOL

আসানসোলে দুই সংস্থার বিরুদ্ধে তিন বছরের বকেয়া বিল দেওয়ার অভিযোগ , সমস্যা না মিটলে শিল্প বন্ধের আশঙ্কা , জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে জানালেন শিল্পপতিরা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ সম্প্রতি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ইন্ডিয়া পাওয়ার ও ডিভিসির পক্ষ থেকে তিন বছরের বকেয়া বিল তৈরি করে তা পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শিল্পাঞ্চলের শিল্পপতিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে কিস্তিতে সেই বিলের টাকা জমা দেওয়ার জন্য। আর এতেই আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বেশকিছু শিল্প বন্ধের মুখে চলে যেতে পারে বলে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে শিল্পপতিরা। 

মঙ্গলবার বিকেলে আসানসোলে আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার কনফারেন্স হলে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের তরফে একটি বৈঠক করা হয়। জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদের  ডাকা ঐ বৈঠকে রানিগঞ্জ ,জামুরিয়া, আসানসোল , কুলটি, সালানপুরের শিল্পপতি ও বণিকসভার প্রতিনিধিরা অবিলম্বে দাবি করেন বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক যেন রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিবের সাথে কথা বলেন। একইসঙ্গে বিদ্যুৎসচিবকেও যেন আসানসোলে এনে তাদের সঙ্গে বৈঠক করানোর ব্যবস্থা করা হয়।  এদিনের বৈঠকে জেলাশাসক বণিকসভার প্রতিনিধি ও শিল্পপতিদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, তিনি আগামীকালই রাজ্যের  বিদ্যুৎ সচিবকে গোটা বিষয়টি জানাবেন।


রানিগঞ্জ মঙ্গলপুরের ৩৫ টি শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদের পক্ষে রোহিত খৈতান বলেন, ইন্ডিয়া পাওয়ারের কাছ থেকেই আমরা বিদ্যুৎ নিচ্ছিলাম । আচমকা তাদের বিদ্যুতের বিল হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকার বিল পাঠানো হয় ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০ তিন বছরের বকেয়া হিসেবে। অন্যদিকে এই সংস্থাগুলি ইন্ডিয়া পাওয়ারের কাছে তাদের বেশি বিল নেওয়ার জন্য ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ সালে যে টাকা ফেরত পাবে তা এখনও তারা দেয়নি। নিজের শিল্প সংস্থার উদাহরণ দিয়ে রোহিতবাবু উল্লেখ করেন আমাকে ৮০ লক্ষ টাকার বকেয়া বিল ধরানো হয়েছে তিন বছরের জন্য। অথচ আমরাই বেশি বিল দেওয়ার জন্য ৪০ লক্ষ টাকা ওদের কাছ থেকেই পাব।


জামুরিয়ার ২৫ টি শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধি পবন মামুন্ডিয়া বলেন,  এখানেও একই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। একদিকে ডিভিসি দাম বাড়িয়ে বিল পাঠাচ্ছে। অন্যদিকে, আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো আমরা যখন ইন্ডিয়া পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা শুরু করি তখন তারা সবচেয়ে সস্তায় বিদ্যুৎ দেব বলে ওরা চুক্তি করেছিল। এখন ডিভিসি তাদের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়াও পুরনো বিলও বাড়িয়ে দিয়েছে।


শিল্পাঞ্চলের সিমেন্ট শিল্প গুলি পক্ষে দক্ষিণবঙ্গ বণিকসভার প্রতিনিধি পবন গুটগুটিয়া বলেন, আমরা জেলাশাসককে বলেছি ওয়েষ্ট বেঙ্গল পাওয়ার রেগুলেটরি কমিটি ২০১৭ তিন বছরের জন্য এখন বিদ্যুতের খরচ বেড়েছে বলে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা আমরা মানছি না। কেননা যদি আমরা ঐ সময় যে সিমেন্ট গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করেছি, তাহলে কি সেই গ্রাহকদের কাছে কি আমরা বলবো যে আমাদের সিমেন্টের খরচ বেড়ে গেলো, বাড়তি টাকা দিন। এটা হয় না। এই জন্য আমরা জেলাশাসককে এদিন বলেছি আপনি বিদ্যুৎসচিবকে আসানসোলে নিয়ে আসুন। আমরা তার সঙ্গে কথা বলবো। তা না হলে শিল্পাঞ্চলে ৫০টি মাঝারি ও ১০০ টি বড় শিল্প সংস্থা বন্ধের মুখে চলে যাবে।


রানিগঞ্জ ৩৫ শিল্পে প্রায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। সেইসব শিল্পসংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে রোহিত খৈতান বলেন, বকেয়া বিল নিয়ে যদি আমাদের কথা তারা না মানে তাহলে আমরা রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া শুরু করব। ওদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া ছেড়ে দেব।  কেননা রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থায় কোন বকেয়া বিষয় থাকে না । আর যদি বাধ্য করা হয় আমাদেরক,  তাহলে গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি শিল্প বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
এইবিষয়ে অবশ্য ডিভিসি ও ইন্ডিয়া পাওয়ারের প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা সব শুনেছও। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির সর্বোচ্চ জায়গায় রিপোর্ট করে জানাবো।
এদিনর  বৈঠকের পরে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক অভিজিৎ শেভালে বলেন, জেলাশাসক সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন।  তিনি বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ সচিবের সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন। যাতে কোন শিল্প বন্ধ না হয় নিশ্চয়ই তারও চেষ্টা করা হবে সব মহলের সঙ্গে কথা বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *