ASANSOL

তিহার জেলে বন্দী এনামুল হককে জেরা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিআইডি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ এবার গরু পাচার মামলায় ( Cattle Smuggling Case ) সিবিআই ও ইডির ( CBI and ED ) হাতে গ্রেফতার হওয়া এনামুল হককে ( Enamul Haque ) দিল্লির তিহার ( Tihar Jail ) জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। এই ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি ( CID ) বলে জানা গেছে।ইতিমধ্যেই সিআইডির একটি দল গরু পাচার মামলায় তদন্তে নেমে এনামুল হক , তার আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের সম্পর্কে প্রচুর তথ্য উদ্ধার করেছে। এছাড়াও এনামুলের বিপুল সম্পত্তির হদিস মিলেছে বোলপুর থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন এলাকায়।

enamul haque
enamul haque file photo


বর্তমানে এনামুল ইডির তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার পর দিল্লির তিহার জেলে বন্দী আছে। এই জেলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে দিল্লির ইডির আদালতে অনুমতি নিতে হবে। সেই প্রস্তুতি এই মুহূর্তে সিআইডি নিচ্ছে। আদালত থেকে অনুমতি পেলেই তিন/চারজনের একটি উচ্চ পর্যায়ের সিআইডি তদন্তকারী দল সেখানে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে সূত্র থেকে জানা গেছে।
কিন্তু সিআইডি গরু পাচার মামলায় কি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে এনামুলকে ? এই বিষয়ে সূত্র থেকে জানা গেছে, গরু পাচারে এনামুল অন্যতম মধ্যমণি বা মাস্টার মাইন্ড বলে অভিযোগ। গরু উত্তরপ্রদেশ , বিহার , মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা থেকে ঝাড়খন্ড হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতো। তারপর মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশ যেত। এই সিন্ডিকেটে কারা কারা যুক্ত রয়েছে, তার কিছু তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্য থেকে ভালো গরু আসতো বাংলায়। তারপর সেই
গরু বাংলাদেশে সীমানা পার হয়ে চলে যেত। জানা গেছে, সেইসব গরুর মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা বা তারও বেশি । সিআইডি জানতে চায় মুর্শিদাবাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাটে এনামুল হক বা জেনারুল শেখের কি ছিলো ও কিভাবে সেখান থেকে গরু বাংলাদেশে যেত? যারা বাংলা ও বাংলাদেশ সীমান্তের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের এনামুল কিভাবে প্রভাবিত করে এই কাজ করত।


সিআইডির অফিসারদের ধারণা গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে এনামুলের প্রতিনিধিরা যে আলাদা আলাদা এই চক্র গড়েছিলো, তাদের যাবতীয় তথ্য হাতে এলেই অনেক বড় চক্রের পর্দাফাঁস হবে। বীরভূমের ও মুর্শিদাবাদে বিপুল পরিমাণ জমি এনামুল কবে ও কিভাবে কিনেছিলেন, তাও তার কাছ থেকে তারা জানতে চায় সিআইডি। একই সঙ্গে তার একাধিক কারখানা রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সিআইডি এনামুলের ভাগ্নে পিন্টু ে রাইস মিল ইতিমধ্যেই সিল করেছে। সেখান থেকে চার চাকার গাড়ি ও একটা ট্রেলারও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল দিন কয়েক আগে। এই পিন্টু শেখকেই সিবিআই এনামুলের গরু পাচার কান্ডে সাক্ষী করেছিল ।সিআইডি পিন্টু শেখের ঐ মিলে তদন্তে গিয়ে জানতে পারে উৎপাদন শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই এই রাইস মিলটি বন্ধ হয়ে গেছিল। এখন সেখানে কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া কেউ নেই।


অন্যদিকে, গরু পাচার মামলায় সিআইডি জেনারুল শেখকে গ্রেফতারের পর এনামুল সম্পর্কে প্রচুর তথ্য তাদের হাতে এসেছে। শুধু এনামুল নয় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা যিনি মুর্শিদাবাদের একসময় শাসক দলের পর্যবেক্ষক ছিলেন। তার ক্ষেত্রেও পাঁচ বছরের মুর্শিদাবাদের যাতায়াতে তিনি কার কার সাথে গিয়ে দেখা করেছিলেন ও তাদের মধ্যে এইসব পাচারকারীদের কেউ ছিলেন কিনা সেই তথ্যও সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে সিআইডি মুর্শিদাবাদের জেলা পুলিশের কাছ থেকে।
শুধু তাই নয় আসানসোলের কয়লা মামলায় সিআইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া হরিয়ানার সঞ্জয় মালিক ও বসিরহাটের আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে বসিরহাটের একটি গরু পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। এনামুল ও জেনারুল বা ঐ এলাকায় গরু পাচারের নানান তথ্য তাদের কাছ থেকেও সিআইডি তদন্তকারীরা জানতে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এনামুলকে দিল্লিতে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেই সিআইডি তৈরি করা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। আর তা থেকেই সিআইডি গরু পাচার সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত ভিন রাজ্যের ব্যক্তি ও তাদের সম্পত্তিরও হয়তো খোঁজ পেতে পারে।

Leave a Reply