PANDESWAR-ANDAL

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ইসিএল এর অত্যাধুনিক কয়লা খনি পরিদর্শন করলেন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতবর্ষ যৌথভাবে কয়লা খনি এবং খনি অঞ্চলের আবহাওয়া ,পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে সম্ভবত কাজ করার ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য্য, আসানসোল : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতবর্ষ যৌথভাবে কয়লা খনি এবং খনি অঞ্চলের আবহাওয়া ,পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নে সম্ভবত কাজ করার ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে এই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ে এক প্রতিনিধি দল ইসিএল এর অত্যাধুনিক কয়লা খনি সোনপুর বাজারি পরিদর্শন করলেন বৃহস্পতিবার।
এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন কলকাতার ইউ এস কন্সাল জেনারেল মেলিন্দা পাভেক, ছিলেন জন স্পিক্স (ডেপুটি মিনিস্টার কনসুলার ইউএস এম্বেসি, নতুন দিল্লি, পরিবেশ শক্তি বিজ্ঞান) এবং এমব্যাসির অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ সঙ্গীতা দে চন্দ্র।
এদের সাথে ছিলেন ইসিএলের চেয়ারম্যান অম্বিকা প্রসাদ পান্ডা, ডাইরেক্টর টেকনিক্যাল জয়প্রকাশ গুপ্ত এবং শোনপুর বাজারির জেনারেল ম্যানেজার আনন্দমোহন।


মার্কিন প্রতিনিধিদলকে ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান জানান চেয়ারম্যান ।তারপর বাউল গান ও আদিবাসী নৃত্যের মধ্যে দিয়ে তাদের স্বাগত জানানো হয়। কোল ইন্ডিয়ার সবচেয়ে লাভজনক১৯৯০:৯১ এ শুরু হওয়া এই শোননপুরবাজারি খোলা মুখ খনির উৎপাদন এবং উৎপাদনের পর কিভাবে কোল হ্যান্ডেলিং প্লান্ট থেকে সোজা সেই কয়লা মাত্র এক ঘণ্টায় রেলের একটি রেক বা ৫৮ টি ওয়াগানে পৌঁছাচ্ছে তাও তারা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে দেখেন। এই কয়লাখনি সম্পর্কে ঐ এরিয়ার তরফে একটি ডিজিটাল প্রজেকশনও তাদের দেখানো হয়। সরাসরি কয়লা খনিতে কিভাবে কাজ হচ্ছে ,কয়লা উৎপাদন হচ্ছে কোনরকম ব্লাস্টিং ছাড়া কন্টিনিউয়াস মাইনাস যন্ত্র দিয়ে এবং তা সরাসরি সাইলো মেশিনের মাধ্যমে কয়লা কোল হ্যান্ডেলিং প্লান্ট দিয়ে রেলের ওয়াগনে পৌঁছে যাচ্ছে। সমগ্র এই অত্যাধুনিক পরিবেশবান্ধব কয়লা তোলা ও কয়লা পাঠানোর পরিকল্পনা তে তারা অত্যন্ত খুশি হন বলে জানা গেছে।


ই সি এলের ডাইরেক্টর টেকনিক্যাল জে পি গুপ্ত এই সময়কে জানান ই সি এল এর ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিনিধি দল এলেন এবং সেটা শোনপুর বাজারির মতো অত্যাধুনিক কয়লা খনির কাজকর্ম দেখতে। তারা আমাদের কাছে কয়লার উৎপাদনের পদ্ধতি যেমন দেখলেন তেমন কিভাবে কয়লা এখান থেকে অন্য কোনও পরিবহন ছাড়াই সোজা খনি থেকে ওয়াগানে পৌঁছাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে আমরা কিভাবে হাজার হাজার গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে রক্ষা করছি তাও দেখানো হয় ।ওরা যৌথভাবে ভারতের সাথে কয়লা খনির ক্ষেত্রে কোনও কাজ করবে কিনা অথবা খনির পরিবেশ বা শ্রমিকদের সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আলাদা করে কোন ভাবনা চিন্তা করছে কিনা এই নিয়ে তেমন কোন কথা অন্তত আমার সামনে হয়নি বলে বলতে পারি। ওদের জানিয়েছি গতবছর শোনপুর বাজারি থেকে আমরা ৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করেছি। এ বছর আমরা ১১ মিলিয়ন টন এর বেশি কয়লা উৎপাদন করব। এখানে যে মেশিন গুলি দিয়ে আমরা কয়লা খনন করে তার সোজা উপরে তুলছি তার অধিকাংশই বিদেশের বিশেষ করে রাশিয়ার বলে তিনি জানান। আমেরিকা যেহেতু কয়লা খননে পৃথিবীতে অন্যতম সেরা দেশ স্বাভাবিকভাবেই তারা এখানে কোন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে কিনা বা নতুন খনিতে তারা কয়লা তুলবে কিনা এসব নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানান।


যদিও অন্য সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে ২০১৫ প্যারিস সম্মেলন এবং ২০২১ এর গ্লাসগো সম্মেলনে বিশ্ব পরিবেশগত ভাবনাচিন্তার পর ঘোষণা হয়েছে কয়লার উৎপাদন ধীরে ধীরে বন্ধের দিকে নিয়ে যেতে হবে এবং কয়লার বিকল্প শক্তির উদ্ভাবনের চেষ্টা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ইসিএল এর অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব পদ্ধতীতে মাটির নিচে থেকে কয়লা তুলে সেই কয়লা কিভাবে পাঠানো হচ্ছে এবং মাত্র ১৩০০ স্থায়ী ও ১৮০০ অস্থায়ী শ্রমিক দিয়ে বিপুল মাত্রায় এখানে উৎপাদন হচ্ছে তাও তারা ভালোমতো দেখেন এবং বোঝেন ।এই সঙ্গে শোনপুর বাজারি তৈরি হওয়ার আগে, যে ১৪ টি গ্রাম উচ্ছেদ করে কয়লা খনি হয়েছে সেই এলাকার মানুষদের ইসিএল জমি দিয়ে কিভাবে শোনপুর পুনর্বাসন প্রকল্প প্রায় তিন হাজার পরিবারকে নিয়ে গড়ে তুলেছে তাও তারা ভালো করে দেখেন। সূত্র থেকে যদিও জানা যাচ্ছে আগামী ২০৩০ এর মধ্যে শোনপুর বাজারি কয়লা খনির জন্য আরো ১৩ টি গ্রাম উচ্ছেদ করে কয়লা খনন হবে। বর্তমানে এখানে ৪ হাজার ৬৮১ হেক্টর জমিতে এই খনি প্রকল্প চলছে। এখনো পর্যন্ত ৬৬১৬.৫৩ কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ করা হয়েছে ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খনি আধিকারিক বলেন কম মানুষ দিয়ে কিভাবে একদিকে বিপুল পরিমাণ পরিবেশ বান্ধব হয়ে কয়লা তোলা যায় অন্যদিকে ইসিএল নিজেই কিভাবে যাদের জমিতে কয়লা করছে তাদের তাদের আধুনিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে পারে সেটা ওনারা খুব ভালো করে দেখেছেন এবং সোনপুর বাজারি সম্পর্কে একটি পুস্তিকা ও তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়ে

Leave a Reply