ASANSOL

ভূত চতুর্দশীর রাতে আসানসোলের শ্মশানে ভুতেদের ডেকে খাওয়ানো হয় ভোগ

৭৬ বছর ধরে চলে আসছে এই পরম্পরা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ভূত চতুর্দশীর রাতে ভূতেদের ডেকে খাওয়ানো হয় কারণ ভোগ। আরো ভালো করে বলতে গেলে ভুতেদের ভোগ দেওয়া হয় নেমন্তন্ন করে। গত ৭৬ বছর ধরে এমনই পরম্পরা চলে আসছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের ১ নং মহিশীলা কলোনির পিয়ালবেড়া শ্মশানে। একদিনের জন্য এভাবেই তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়। কালি পুজোর রাতে ফের মন্ত্রবলে বেঁধে ফেলা হয় ভুতেদেরকে। এমনই একটা বিশ্বাস এখানকার বাসিন্দাদের। এখন বংশপরম্পরায় এই কাজটা করেন বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য।



এবারও কালি পুজোর আগের দিন রবিবার রাতে এই রীতির কোন অন্যথা হয়নি। এটা বলা যেতে পারে যে, বিশ্বজুড়ে শুধু বিভিন্ন দিন বা ডে পালন করা হয়, এমনটা নয়, ভুতেদের নিয়ে ভূত চতুর্দশীর রাতও পালন করা হয় শহর আসানসোলে।
জানা গেছে, সালটা হলো বাংলার ১৩৫৩। সেই সময় আসানসোলের ১ নং মহিশীলা কলোনীর পিয়ালবেড়া শ্মশানের বটগাছে নাকি ভূতদের বেঁধেছিলেন বামাক্ষ্যাপার অন্যতম প্রধান শিষ্য বনমালী ভট্টাচার্য। তারপর নয় নয় করে ৭৬ টা সত্তর বছর পেরিয়েছে । বনমালীবাবু আজ আর জীবিত নেই। কিন্তু সেই বট গাছে নাকি রয়ে গেছে ভূতেদের দল। এখন সেই কাজটা করছেন বনমালী ভট্টাচার্যের ছেলে বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য।


অন্য বছরগুলোর মতো রবিবার ভূত চতুর্দশীর রাতে সাদা ধুতি ও জামা পড়ে শ্মশানে আসেন বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। সঙ্গে আসেন এলাকার অনেক মহিলা ও পুরুষ বাসিন্দারা। মহিলারা বটগাছের আশপাশের বেদিতে প্রদীপ জ্বালান। বিশ্বনাথবাবু মন্ত্র পড়ে, সাধনা করে ভুতেদের ডাকেন। সেই ভুতেদের আবার আলাদা আলাদা নামও আছে। শঙ্করী ভুত, শিবানী ভুত তাদের নাম। সেই নাম ধরে ডাকলেই তারা কিছু সময়ের জন্য চলে আসেন। তখন তাদেরকে মাংস ও ভাত একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় খাবার দেওয়া হয়। সঙ্গে কারণবারি। এই ভোগের নাম অন্নভোগ বা কারণ ভোগ।
বিশ্বনাথবাবুর কথায় , তার বাবা বনমালী ভট্টাচার্য ১৩৫৩ সালে এই মহিশীলা কলোনির এই শ্মশানে বটগাছের নিচে এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন এটা মহাশ্মশান ছিলো। সেখানে মরা পড়ানো হতো। পরে খুলি এমে বনমালী ভট্টাচার্য পঞ্চমুন্ড আসন পেতে তন্ত্র সাধনা করতেন। তার কথায় তিনি একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। তার কথা সবাই শুনতো। তিনি যা বলতেন, তাই হতো।

বিশ্বনাথবাবু আরো বলেন, আগে যখন এই এলাকা ফাঁকা ছিলো, তখন এই ভুতোরা রোজই আসতো। তখন তাদেরকে ” শিবাভোগ ” দেওয়া হতো। এখন কলোনি হয়ে, আশপাশের এলাকায় জনবসতি হওয়া তারা আর রোজ আসেনা। এই ভুত চতুর্দশীর দিন ডেকে ভোগ দেওয়া হয়। ভোগের সঙ্গে কারণ ঢালার সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে যায়। আর কালি পুজোর রাতে আবার নিজেদের জায়গায় চলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *