ASANSOL

গৌরান্ডির বনেদি ব্যানার্জি পরিবারের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজোর এবার ১০০ তম বছর , আনন্দে মাতোয়ারা সকল সদস্য

বেঙ্গল মিরর,আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : বিগত ১০০ বছর ধরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের অনতিদূরে বারাবনী থানার অন্তর্গত গৌরান্ডি হাই স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যানার্জী পরিবারে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা হয়। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন আসানসোলের ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী বিকাশ ব্যানার্জী ও তাঁর স্ত্রী রেখা ব্যানার্জি।

সেখানে ৩ দিন ধরে মায়ের পুজো হয়। নবমীর দিনে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর পূজা করা হয় এবং দশমীর দিন দশমীর পূজা করা হয়। দশমীর পরের দিন বিসর্জন করা হয়। ব্যানার্জী পরিবারের পক্ষ থেকে প্রবীণ বিকাশ ব্যানার্জী বলেন যে, তার দাদু ছিলেন স্বর্গীয় পাচুগোপাল ব্যানার্জী, পিতা ছিলেন স্বর্গীয় প্রফুল্ল কুমার ব্যানার্জী। মন্দিরটি ২০০৬ সালে তৈরী হয়।

তিনি গত ৭০ বছর ধরে এই পুজোয় যোগ দিয়ে আসছেন এবং আজ পর্যন্ত তিনি কখনও নিজেকে এই পুজো থেকে দূরে রাখেননি। এটি তাঁর বাড়ির পারিবারিক পুজো যা ১০০ বছর আগে তাঁর পূর্বপুরুষরা শুরু করেছিলেন। তার জন্মের আগে এখানে যাত্রা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো ওই স্থানে। অতীতে বলির প্রথা থাকলেও বর্তমানে সময়ে বলির প্রথা নেই। তিনি বলেন, মায়ের মহিমা অপরিসীম, কেউ মন থেকে মায়ের কাছে কিছু চাইলে তার মনোবাসনা পূর্ন হয় আর সে কারণেই সবাই এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতে চায়। বিকাশ ব্যানার্জী জানান, তার এক কাকার মেয়ে মুম্বাইতে থাকেন, যে কোনো কারণে এখানে আসতে পারেননি, তিনি সকাল থেকে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে পূজায় অংশ নিচ্ছেন। অসুস্থ না থাকলে জগদ্ধাত্রী পূজার দিন সবাই এখানে যোগ দেন নইলে পূজা থেকে কেউ দূরে থাকতে চায় না।

তিনি জানান যে এই পুজোয় শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, স্থানীয় মানুষ ও বিশেষ ব্যক্তিরাও এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে মা জগদ্ধাত্রী দেবীর আশীর্বাদ নিয়েছেন হয়েছেন। বারাবনির বিধায়ক তথা আসানসোল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, আসানসোল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র তথা আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক, তৃণমূল ব্লক সভাপতি অসিত সিং, প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী সুব্রত ওরফে মিঠু ঘাঁটি সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও পুজোয় এসেছিলেন। মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের বিশেষভাবে এই পূজায় অংশগ্রহণ করেন।

বিকাশ ব্যানার্জী আরো বলেন যে, যেহেতু এবার এই পুজোর ১০০ তম বছর তাই বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।এই পূজা নিয়ে বিকাশ ব্যানার্জির স্ত্রী রেখা ব্যানার্জীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন যে,” যদিও এই পূজা দায়িত্ব নিয়ে তিনি তার স্বামী বিকাশ ব্যানার্জী সামলাচ্ছেন, কিন্তু পূজার প্রস্তুতি অনেকদিন আগে থেকেই পরিবারের সকল সদস্যগণ একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে করে থাকেন। এই পূজার গুরুত্ব তাদের পরিবারের কাছে মা দুর্গার পূজার মতো। রেখা ব্যানার্জী বলেন যে তার পূর্বপুরুষরা হুগলিতে থাকতেন এবং এই পূজা তার পরিবারে ৫ প্রজন্ম ধরে হয়ে আসছে। তার পূর্বপুরুষ ননী গোপাল ব্যানার্জি এই পূজা শুরু করেন। এবারের পুজো ৩ দিন ধরে চলবে।”


বিকাশ ব্যানার্জীর বড় কন্যা পামেলা ব্যানার্জী বলেন যে,” আমরা পুরো পরিবার এই পুজোতে অংশগ্রহণ করি দুর্গাপুজোর মতই। এমনকি আমার ছেলে ও স্বামী পুজোর যজ্ঞে অংশগ্রহণ করে।”
এদিকে বিকাশ ব্যানার্জীর ছোট কন্যা প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জী বলেন, ” এবারের ১০০ তম বছরের পুজোর গুরুত্ব বুঝেই বিশেষভাবে আমরা সবাই মিলে পরিকল্পনা করেছি মায়ের আরাধনাকে আরো সুন্দর করে তোলার জন্য। এছাড়া আমার দুই যমজ মেয়ে। আমাদের বাড়ির পুজোতে একবার কুমারী হলে চার বছর ধরে হতে হয়, এবার তাদের কুমারী হবার শেষ বছর। তারা গরদের শাড়ি পড়বে এবং আচার অনুষ্ঠান পালন করবে। তাই আমার কাছে এই বছরের গুরুত্ব অনেক।”



প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সুব্রত ওরফে মিঠু ঘাঁটি বলেন তিনি এই পূজার সাথে গত বারো বছর ধরে জড়িত। তিনি বলেন,” আমার বড় ছেলের বিয়ে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এখানে মানসিক করেছিলাম। আমার আশা পূর্ন হয়েছে।১০০ বছর ধরে পুজো চালিয়ে যাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আমার শুভকামনা রইল ব্যানার্জী পরিবারের প্রতি।”

ব্যানার্জী বাড়ির এই ঐতিহ্যমন্ডিত পুজো সদানন্দ চক্রবর্তী, সচ্চিদানন্দ চক্রবর্তী, সোমনাথ ব্যানার্জী এবং দেবাশীষ ব্যানার্জী এই চার পুরোহিত এই পুজো করে থাকেন।

বুধবার ওই পুজোয় বিকাশ ব্যানার্জী এবং রেখা ব্যানার্জী ছাড়াও বিকাশ ব্যানার্জির কন্যা পামেলা ব্যানার্জি ও প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জী, সুভাষ ব্যানার্জী, নিতা ব্যানার্জী, অভিজিৎ মুখার্জী, অজিত ব্যানার্জী, কানহাইয়ালাল ব্যানার্জী, সোমনাথ চট্টরাজ সহ পরিবারের সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply