আসানসোলের স্কুলে অভিভাবকদের বিক্ষোভ, ডোনেশনের নামে হাজার টাকা ফি নেওয়ার অভিযোগ
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ ( Asansol Live News Today ) ডোনেশনের নামে পড়ুয়া পিছু এক হাজার টাকা করে ফি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন সোমবার স্কুল খুলতেই বিক্ষোভ দেখানো শুরু করলেন অভিভাবকদের একাংশ। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিন সকালে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহরের হটন রোড ও এসবি গরাই রোডের সংযোগস্থলে তুলসীরানী বালিকা শিক্ষা সদনে। অভিভাবকদের এই বিক্ষোভের কারণে বেশ কিছুটা হলেও বিপাকে পড়ে স্কুল কতৃপক্ষ।
বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের দাবি মেনে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী মিশ্র আশ্বাস দিয়েছেন যে, এই ফি বৃদ্ধি নিয়ে পরিচালন সমিতি যাতে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তার ব্যবস্থা করবেন। একইভাবে আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ তথা স্থানীয় কাউন্সিলর গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায়ও অভিভাবকদের দাবি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। অন্য স্কুলের মতো সোমবার আসানসোলের তুলসী রানী শিক্ষা সদন খোলে। পড়ুয়ারা ক্লাস চলে যাওয়ার পরেই একাংশ অভিভাবক প্রথমে স্কুল গেটের সামনে ও স্কুলের ভেতরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন।
পঙ্কজ কর্মকার ও চৈতালি পন্ডিত নামে দুই অভিভাবক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এই বছর স্কুলে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে ২৫০ টাকার রসিদ স্কুল থেকে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার কোন রসিদ দেওয়া হয়নি। আমাদের বলা হয়েছে এই টাকা স্কুলের ডোনেশন। এই প্রসঙ্গে এই দুই অভিভাবক সহ অন্যদের দাবি, স্কুলের তরফে আমাদেরকে বলা হয়েছে এই টাকা দিয়ে স্কুলের ডেভেলপমেন্ট সহ অন্য কাজ করা হবে। এও বলা হয়েছে স্কুলে পড়ুয়াদের কথা ভেবে বেশ কয়েকজন চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষিকা নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। সরকার যদি শিক্ষিকা নিয়োগ করে ও ফান্ড দেয় তাহলে বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়টি নতুন করে ভাবা হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের প্রশ্ন, এইসব কিছুর জন্য পড়ুয়াদের থেকে টাকা কেন নেওয়া হবে? এইসবের জন্য তো সরকার টাকা দেবে। অনেক পরিবার আছে, যারা গরীব। তারা কি করে এতো টাকা দেবে? বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের দাবি, স্কুল কতৃপক্ষ এই টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করুক।
এই বিক্ষোভের পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সামান্য টাকা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত পরিচালন সমিতি ঠিক করেছে। স্কুলের বেশ কয়েকজন চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষিকা, নিরাপত্তা রক্ষীদের বেতন দেওয়া সহ অন্যান্য কাজের জন্য এই টাকা নেওয়া হয়েছে। যা, হচ্ছে পড়ুয়াদের স্বার্থেই। আর কেউ যদি এই বাড়তি টাকা দিতে না পারেন, তারা নিয়ম মেনে আবেদন করতে পারেন। বিবেচনা করে স্কুল কতৃপক্ষ ও পরিচালন সমিতি পদক্ষেপ নেবে। তিনি আরো বলেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে পরিচালন সমিতি যাতে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে, তাও দেখা হবে।
স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতির এই প্রসঙ্গে বক্তব্য না পাওয়া গেলেও, স্থানীয় কাউন্সিলর তথা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায় অভিভাবকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, এই বছর ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পড়ুয়াদের কথা ভেবেই এটা করা হয়েছে। কাউকে জোর করা হয়নি। কেউ যদি দিতে না পারেন, আমাদের কাছে আসুন। বিষয়টি দেখা হবে। অনেক গরীব পরিবারের মেয়েরা এই স্কুলে পড়ে। তাদেরকে সবসময় সাহায্য করা হয়। এক্ষেত্রেও কোন অন্যথা হবে না, বলে মেয়র পারিষদ আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলার ডিইও বা ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসার তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, এইভাবে কোন স্কুল ডোনেশন নিতে পারেনা। ঠিক কি হয়েছে, তা জানতে ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি একজন এআই বা সহকারী স্কুল পরিদর্শককে পাঠিয়ে একটা রিপোর্ট দেবেন। তার পরে দেখা হবে। যদি দেখা নিয়ম ভাঙা হয়েছে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।