ASANSOL-BURNPUR

আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া কোয়েলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন, পরিচারিকা সহ ধৃত ৩

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : আসানসোল, ২৯ মার্চঃ আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া আদিবাসী যুবতীর মৃতদেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ালো পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরে। মঙ্গলবার রাতে এই মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় পড়ুয়ার বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে বার্ণপুরের নিউটাউন ১২ নং রাস্তার বিপিএল কলোনির পেছনে।
মৃত পড়ুয়ার নাম কোয়েল হাঁসদা (২২) । তার বাড়ি হিরাপুর থানার বার্ণপুরের বড়তোড়িয়ার ধুলামাখা এলাকায়।
বুধবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে কোয়েলের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের যে প্রাথমিক রিপোর্ট পুলিশকে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে জানা গেছে, গলা টিপে শ্বাসরোধ করে কোয়েলকে খুন করা হয়েছে। তার আগে তার উপর নির্যাতনও চালানো হয়েছে। আরো জানা গেছে, কোয়েলের চুল, নখ, রক্ত ও ভিসেরা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।


এদিকে, রাতেই নির্দিষ্ট সূত্র মারফত নিশ্চিত হওয়ার পরে হিরাপুর থানার পুলিশ কোয়েলের বাড়ির পরিচারিকা সুমিতা হেমব্রমকে আটক করে। তাকে জেরা করে তিন যুবকের নাম পুলিশ পায়। তার মধ্যে একজনকে না পাওয়া গেলেও পুলিশ সমীর মাড্ডি ও রোহিত হাঁসদাকে পায়। বুধবার সকালের পরে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। কোয়েলের বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃত তিনজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ নং ধারায় খুন সহ একাধিক ধারায় মামলা করে ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আসানসোল আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।


এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে ও খুনীদের ধরার দাবি করে বুধবার সকাল থেকে এলাকার বাসিন্দার ও আদিবাসী সংগঠনের তরফে হিরাপুর থানার সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আসানসোল দক্ষিণ ও একাধিক থানা থেকে আইসি ও ওসি সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী হিরাপুর থানায় নিয়ে আসা হল। বেলা বারোটার পরে হিরাপুর থানায় আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি ( পশ্চিম) অভিষেক মুদি। তিনি পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। পরে তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনায় এক মহিলা সহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান। এই ঘটনায় জড়িত আরো একজন ফেরার রয়েছে। তার খোঁজ করা হচ্ছে। এই আশ্বাসে দু’ঘন্টা পরে বিক্ষোভ অবরোধ উঠে। পরে ডিসিপি (পশ্চিম) সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তের জানা গেছে, ঐ যুবতীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঠিক কি কারণে এই ঘটনা তা জানতে তদন্ত করা হচ্ছে।


পুলিশ জানিয়েছে, ২৭ মার্চ সোমবার সন্ধ্যা সাতটার সময় কারোর ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলো কোয়েল হাঁসদা। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিল ঐ কলেজ পড়ুয়া । মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ হিরাপুর থানায় খবর আসে নিউটাউন ১২ নম্বর রাস্তার পাশে একটি মৃতদেহ পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ যায় ও তা উদ্ধার করে। কোয়েলের বাবা কুলটির মিঠানি হাইস্কুলের শিক্ষক লক্ষী নারায়ণ হাঁসদাকে খবর দেয় পুলিশ। তিনি আসানসোল জেলা হাসপাতালে আসেন ও সেই মৃতদেহ মেয়ের বলে সনাক্ত করেন। তিনি জানান , মেয়ে সোমবার সন্ধ্যা সাতটার সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলো। তারপর সে এক ঘন্টার মধ্যে বাড়ি ফিরে না আসায়, মোবাইলে ফোন করি। কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিলো। রাতে কোথাও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মঙ্গলবার সকালে হিরাপুর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করি। রাত দশটার সময় পুলিশ আমাকে মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার কথা জানায়। তিনি বলেন, প্রতিহিংসা থেকে মেয়েকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।


পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোয়েল যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলো, তখন তাকে যার সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো, সেই যুবক ফোন করে। ঐ যুবক জানতে চায়, সে কোথায় আছে কেন গেছে? তখন কোয়েল বলে, সে বিপিএল কলোনির পেছনে এসেছে, বাড়িতে যে কাজ করে, তার টাকা আনতে। তখন যুবক, তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলে। কিন্তু সে বলে টাকা নিয়ে চলে যাবে। তখন যুবক তাকে টাওয়ার লোকেশান জানাতে বলে। কোয়েল তখন ফোন দিয়ে বলে পাঠাচ্ছি। কিন্তু ৫ মিনিটেরও বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ায়, কোন উত্তর না পেয়ে যুবক আবার কোয়েলকে ফোন করে। কিন্তু রিং হলেও, তা কোয়েল তোলেনি। এরপর ফোনের সুইচ অফ হয়ে যায়।
পরে ঐ যুবক ঘটনার কথা জানতে পারে। তখন সে তার সঙ্গে কোয়েলের কথোপকথনের রেকর্ড পুলিশকে দেয়। তবে কোয়েলের মোবাইল ফোনের হদিশ পুলিশ এখনো পায়নি। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কোয়েল আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিসিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছিলো। তার বিয়েও ঠিক হয়েছিল। এমন ঘটনায় হাঁসদা পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয় পরিজন ও এলাকার বাসিন্দারা স্বাভাবিক ভাবেই হতচকিত। তারা বুঝতে পারছেন না যে, কেন এমন ঘটনা ঘটলো।

Leave a Reply