ASANSOL

রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রীকে চিঠি উপাচার্যের, হস্তক্ষেপ চেয়ে আর্জি, ওয়েবকুপার রাজ্য কমিটির একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ তার পদত্যাগের দাবিতে অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরে আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। দুদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এলেও প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে পারেননি আন্দোলনকারীদের বাধায়। বৃহস্পতিবার তো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, কর্মী থেকে পড়ুয়ারা এদিন কাঁসর, ঘন্টা, শঙ্খ ও থালা বাজিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তার গাড়ি আটকে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হন। পরে পুলিশ এসে তাকে নিরাপত্তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দ্বারস্থ হলেন কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বা ভাইস চ্যান্সেলার বা ভিসি ডঃ সাধন চক্রবর্তী। তিনি এদিন শিক্ষা মন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে তিনি গত ২৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কি হচ্ছে, তা সবিস্তারে জানিয়েছেন। আর এইসব কিছু যে বিশ্বিবদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েবকুপার নেতা ডঃ সজল কুমার ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে হচ্ছে তাও উল্লেখ করেছেন।

এই প্রসঙ্গে ভিসি বলেন, গত টানা কয়েকদিন ধরে যা বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে তা শিক্ষা মন্ত্রীকে জানিয়েছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছি। আমার আশা তিনি গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন। তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য বৈঠক করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছিলাম, তারমধ্যে অন্যতম ছিলো প্রায় ২০ জন চুক্তি ভিত্তিক সাফাই কর্মীর বেতনের বিষয়। তা আমি কাল করতে পারিনি। তাই এদিন আমি সকাল এগারোটার সময় আসানসোলে বাসভবনের অফিসে ফিনান্স অফিসার ও অডিট এ্যান্ড একাউন্টস অফিসারকে ডেকেছিলাম। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত কেউ আসেননি। এরফলে ঐ কর্মীদের বেতন অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গেলো। ওরা তো গরীব। এটা ঠিক হলো না বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


এদিকে ভিসির এই চিঠিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ডঃ সজল কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমরা কি কারণে আন্দোলন করছি তা সবাই জানেন। ভিসি চিঠি যে কাউকে দিতেই পারেন। তাতে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরাও সব সরকারকে জানিয়েছি।
অন্যদিকে, ঘটনাচক্রে শুক্রবারই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েনকুপার রাজ্য কমিটির একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। তার নেতৃত্বে ছিলেন অসীম মন্ডল ও মনিকান্ত পাখিরা। তারা এদিন ধর্ণা অবস্থানেও ছিলেন। অসীম মন্ডল বলেন, আমরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করছি। আমরা তাদের সঙ্গে আছি। বৃহস্পতিবার আন্দোলনের সময় শান্তনু বন্দোপাধ্যায় নামে এক অধ্যাপক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।


প্রসঙ্গতঃ, কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে টানা আন্দোলন-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী ও আধিকারিকদের একটা বড় অংশ। গত ১৩ মার্চ থেকে চলছে এই আন্দোলন। পরে এই আন্দোলনে সামিল হয় পড়ুয়ারাও। এরই মাঝে গত ২১ মার্চ ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে যান। তখন তাকে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন। সেই বাধা পেয়ে ঢুকতে না পেরে তিনি ফিরে যান। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজনের নামে এই আন্দোলনকে বেআইনী ঘোষনা করে ভিসি আসানসোল উত্তর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে গত ১, ২, ৩ এপ্রিল মোট তিন দফায় কাজ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন উপাচার্য। আন্দোলনকারীদের দিয়েছেন খোলা চিঠিও। সেই চিঠির পাল্টা জবাবও ইতিমধ্যেই দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। তাকে যে আবার উপাচার্য হিসাবে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে, সেই চিঠি দেখাতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডঃ চন্দন কোনারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্ট রেজিস্ট্রারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তবে তাতেও আন্দোলনের ঝাঁঝ একটুও কমেনি। বরং যতদিন যাচ্ছে, ততই তা বাড়ছে।

Leave a Reply