ASANSOL

সোসাল মিডিয়ার পোষ্ট দেখে অভিভাবকদের বিক্ষোভ, থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের স্কুল কতৃপক্ষের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol UGMK School Case ) পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়ার সঙ্গে , এক নন টিচিং স্টাফ অভব্য আচরণ করেছে। এমন একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোসাল মিডিয়ায় একটি ভাইরাল হওয়া পোষ্ট দেখে, কোন তথ্য প্রমান ও লিখিত অভিযোগ ছাড়াই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আসানসোল শহরের জিটি রোডের একটি নামী গার্লস হাইস্কুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বেশকিছু মহিলা ও পুরুষ। যারা নিজেদেরকে অভিভাবক বলে দাবি করেছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলো প্রচুর প্রাক্তন ছাত্রী, তাদের বাবা – মা ও বহিরাগতরা। সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে তারা ঐ স্কুলে কার্যত দাপিয়ে বেড়ায় পুলিশের সামনেই। পুলিশ বাধ্য হয়েছিল ঐ নন টিচিং স্টাফকে নিজেদের হেফাজতে নিতে। বিক্ষোভকারীরা কার্যত চাপ দিয়ে, জোর করে ঐ নন টিচিং স্টাফ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আসানসোল দক্ষিণ থানা ও স্কুলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

File photo


বৃহস্পতিবারের সেই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার দুপুরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ দায়ের করলো ঐ স্কুল কতৃপক্ষ। তাতে সই করেছেন প্রধান শিক্ষিকা, অন্যান্য শিক্ষিকা ও নন টিচিং স্টাফেরা। এদিন স্কুলের শিক্ষিকরা আসানসোল দক্ষিণ থানায় এসে গোটা বিষয়টি নিয়ে এসিপি (সেন্ট্রাল) দেবরাজ দাস ও ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৌশিক কুন্ডুর সঙ্গে কথা বলেন। স্কুলের তরফে অভিযোগে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় শিক্ষিকা, পড়ুয়া থেকে নন টিচিং স্টাফ খুবই আতঙ্কিত। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কোন ঘটনা না ঘটলেও, তার মিথ্যে অভিযোগ করায় স্কুলের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। আবেদন করা হয়েছে, অবিলম্বে ঐ সোশাল মিডিয়ায় পোষ্ট কে বা কারা করেছে, তা নিয়ে তদন্ত করে, বৃহস্পতিবারের ঘটনার জন্য কারা দায়ী তাদের খুঁজে বার করে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। দুই পুলিশ অফিসার স্কুলের শিক্ষিকাদের আশ্বস্ত করে বলেন, সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হবে। যেখানে পুলিশ, স্কুল ও স্কুল পরিদর্শক বা ডিআইয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। সেই কমিটি তদন্ত করে একটা রিপোর্ট তৈরি করবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


অন্যদিকে, ঐ পড়ুয়ার পরিবারের তরফে কোন লিখিত অভিযোগ না থাকায় শুক্রবার সকালে ঐ নন টিচিং স্টাফকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ তরফে তাকে আপাততঃ স্কুলে না আসতে ও এলাকায় না থাকতে বলা হয়েছে। এদিন দুপুরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি ( সেন্ট্রাল) কুলদীপ সোনেয়াল বলেন, শহরের একটি স্কুলে একটা ঘটনা গতকাল ঘটেছিলো। যদিও যে কারণে এই ঘটনা তার কোন লিখিত অভিযোগ নেই। তাই কোন গ্রেফতারও নেই। একজনকে আটক করা হয়েছিলো। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে স্কুলের তরফে একটি অভিযোগ দায়ের করে বলা হয়েছে এই ঘটনার পেছনে সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট রয়েছে। মিথ্যে একটা কথা সেখানে বলা হয়েছে। তার কোন সারবত্তা নেই। তাই সাইবার আইনে এর তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তকে শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো বলেন, সোশাল মিডিয়ায় কেউ এমন কোন পোষ্ট করবেন না, যাতে তার থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। তাহলে, তার বিরুদ্ধে সাইবার আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এদিন বলেন, একটা অভিযোগ থানায় করা হয়েছে। আমরা বলেছি, গোটা ঘটনার তদন্ত করে সত্যিটা বার করা হোক। কেননা এর পেছনে একটা স্কুলের সুনাম, শিক্ষিকা ও নন টিচিং স্টাফদের সম্মান ও পড়ুয়াদের ভবিষ্যত জড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে যে যারা সোশাল মিডিয়ায় পোষ্ট করেছে।
এদিন বিকেলে প্রথমে ঐ স্কুল ও পরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় যান আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। স্কুলে তিনি প্রধান শিক্ষিকা সহ অন্য শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি বলেন, আমি গোটা ঘটনা নিয়ে স্কুলে কথা বলেছি। থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জের সঙ্গে দেখা করেছি। আমার দাবি, সবটাই তদন্ত করে বার করা হোক। কেউ যদি গুজব ছড়িয়ে স্কুল বদনাম, পড়ুয়া ও কর্মীর সম্মানহানি করার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে সনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *