BARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

রুপনারায়নপুর ফাঁড়ির অভিনব উদ্যোগ, স্কুলের পড়ুয়াদের ডেকে দেখানো হলো পুলিশের নিত্যদিনের কাজ

বেঙ্গল মিরর, রুপনারায়নপুর ও আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ শ্রেয়ন , অনুষ্কা , নিশা, রাজেশ সহ জনা ৪০ পড়ুয়া। এরা সবাই পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের সালানপুর রূপনারায়নপুরের হিন্দুস্থান কেবলসের ডিএভি হাইস্কুলের বিভিন্ন ক্লাসে পড়ে। সোমবার এরা সবাই চলে আসে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সালানপুর থানার রূপনারায়নপুর পুলিশ ইনভেস্টিকেটিভ সেন্টার বা ফাঁড়িতে।

অন্য কোন কিছু নয়, তারা এসে দেখলো ইন্সপেক্টর ইনচার্জ বা আইসি, অফিসার ইনচার্জ বা ওসি থেকে শুরু করে ডিউটি অফিসারের কাজ। কিভাবে জিডি বা জেনারেল ডাইরি লেখা হয় বা এফআইআর করতে হবে। লকআপ কি? কারা থাকে সেখানে ? সিসিটিভি ভূমিকা কি? এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিভাবে সাইবার অপরাধ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারে? মাত্র দু ঘন্টায় এমন সব তথ্য জানতে পেরে রীতিমত উৎসাহিত এবং উচ্ছসিত ওইসব ছাত্রছাত্রীরা। এমনকি তাদের মনের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে যেসব ধারণা ছিল সেইসব প্রশ্নের উত্তরও তারা নির্দ্বিধায় পেয়েছে পুলিশ অফিসারদের কাছ থেকে।


সাধারণত, থানা থেকে পুলিশের ডাক পেলে মনে খানিকটা হলেও ভয় হয়না বা আতঙ্কিত হন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল । কিন্তু থানার ওসি যখন স্কুলের ছোট ছোট পড়ুয়াদের থানায় ডেকে পাঠান, তখন ভয়ের চেয়ে, কৌতুহলই বেশি দেখা দেয়। যেমনটা হল সোমবার ডিএভি স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়াদের। এদিন তাদেরকে রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়িতে সাদরে ডেকে ছিলেন ওসি মইনুল হক। ফাঁড়িতে তখন ছিলেন সালানপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ অমিত কুমার হাটি। সেখানে পড়ুয়াদের যাবতীয় কৌতুহল তারা সযত্নে মেটালেন। দুই অফিসার ধৈর্য ধরে পড়ুয়াদের বোঝালেন থানার দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রক্রিয়া। ঘুরিয়ে দেখালেন ওসির বসার চেম্বার ও ডিউটি অফিসারের অফিস থেকে পুলিশের ব্যারাক, ফাঁড়ি সংলগ্ন মন্দির। থানায় পুলিশের লাগানো প্রচুর ছবিও তাদেরকে দেখানো হয়। যে সব ছবিতে হেলমেট পড়া কত জরুরি, ড্রাগ ব্যবহার না করা, মোবাইলে লিংক এবং ওটিপি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া ,গাছ লাগানো, গাছ বাঁচিয়ে তোলা ,জল অপচয় না করা সহ নানা ধরনের বিষয় বলা হয়েছে। তাদেরকে দেখানো হয় পুলিশ কর্মীদের তৈরি করা বাগানও। বোঝানো হয় দিনে বা রাতে যে কোন সময়ই ফাঁড়ি বা থানার সবার জন্য খোলা থাকে। যেখানে যে কেউ তাদের যে কোনো সমস্যা নিয়ে এলেই তাকে সহযোগিতা করা হয়। তারাও কেউ যদি কোনদিন কোন সমস্যায় পড়ে, বাড়ির কাউকে বলতে না পারে, তাহলে অন্ততঃ পুলিশের কাছে এসে নিরদ্বিধায় বলে।


পুলিশ অফিসারদের প্রবীণ সাংবাদিক ও সমাজকর্মী বিশ্বদেব ভট্টাচার্য এইসব পড়ুয়াদেরকে রক্তদান সহ পুলিশের করা বিভিন্ন সামাজিক কাজের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, পড়ুয়ারা শুধু বই পড়ার মধ্যে নয়, জীবনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা এগিয়ে যাবে। নিজেদেরও স্থানীয় এলাকায় শিক্ষা সংস্কৃতি ও সামাজিক কাজে যুক্ত করবে এমনটা আশা গোটা সমাজ করে।


ফাঁড়িতে এসে পুলিশ ও পুলিশের কাজ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেয়ে উল্লসিত ও খুশি এই পড়ুয়ারা। তাদের খুশি দ্বিগুণ করে দিলেন পুলিশ আধিকারিকরা। পড়ুয়াদের হাতে তারা তুলে দিলেন জলের বোতল, মিষ্টির প্যাকেট ও কলম।
এই স্কুলের অধ্যক্ষ সঞ্জয় মজুমদার পড়ুয়াদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা শোনার পরে বলেন, অসাধারণ একটি কর্মসূচি পালন করলো রূপনারায়নপুর পুলিশ ফাঁড়ি। সমাজে পুলিশ যে কত বড় বন্ধু, সে কথা পড়ুয়ারা বারবার আমাকে বলেছে। এমন উদ্যোগ সর্বস্তরে নেওয়া হলে, একটা অন্য ভাবনা আসবে।

Leave a Reply