ASANSOL

গাঁজা পাচারের ঘটনা, এনডিপিএস আইনে দোষী সাব্যস্ত ৫ জনের সাজা ঘোষণা জেলা আদালতে

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃএকটি দামী গাড়িতে ২৩ কেজি গাঁজা পাচারের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ৫ জনের সাজা ঘোষণা শুক্রবার হলো পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল জেলা আদালতের এনডিপিএস আইনের স্পেশাল কোর্টে। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই মামলায় সাক্ষ্যদান ও তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে এদিন জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ( তৃতীয়) ও এনডিপিএস আইনের স্পেশাল কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারক শ্রীময়ী কুন্ডু এই সাজা ঘোষণা করেন বলে জানান এই মামলার স্পেশাল পিপি বা সরকারি আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ । সাজাপ্রাপ্ত ৫ জনের নাম হলো গিয়াসউদ্দিন খান, আসগার ওরফে মিস্টার খান, ফইয়াজ হায়দার ওরফে রবি, মহঃ আজাদ ওরফে সল্লু ও রিয়াজ হায়দার ওরফে রাজু।

৫ জনের মধ্যে গিয়াসউদ্দিনের সর্বোচ্চ ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরো ১ বছর ২ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে ফইয়াজ হায়দার ওরফে রবি ও মহঃ আজাদ ওরফে সল্লুকে। তাদেরকে জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। একইভাবে আসগার ওরফে মিস্টার খান ও রিয়াজ হায়দার ওরফে রাজুকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এই দুজনকে জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। সরকারি আইনজীবী বলেন, এই আইও বা তদন্তকারী অফিসার সহ মোট ৭ জন এই মামলায় সাক্ষ্য দান করেন। এই ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০২১ সালের ১ জুন। পরের দিন ২ জুন ধৃত ৫ জনের বিরুদ্ধে এনডিপিএস আইনের ২০/বি,(।।), (সি) /২৯ নং ধারায় মামলা করে আসানসোল উত্তর থানায় একটি এফআইআর হয়। ঐ বছরের ২১ নভেম্বর আসানসোল জেলা আদালতে বিচারকের কাছে চার্জশিট জমা পড়ে। ২১ ডিসেম্বর মামলার চার্জ ফ্রেম হয়। গত ৩০ আগষ্ট বিচারক শ্রীময়ী কুন্ডু গোটা প্রক্রিয়া শেষে এই ৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। সেদিনই বিচারক নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন শুক্রবার সকালে দুপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে সাজা ঘোষণা করা হবে। সেই মতো এদিন সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।


এদিন ৫ জনের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় পরিজনেরা আদালতে এসেছিলেন। সাজা ঘোষণার পরে তারা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেকে আবার সাজার বিরোধিতা করে বলেন, তারা নির্দোষ। তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ৫ জনও এজলাস থেকে বেরোনোর সময় একই দাবি করেন। এই সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে যাতে কোন রকম গন্ডগোল কিছু না হয়, তারজন্য পুলিশ বাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিলো।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে ১ জুন রাতে নটা নাগাদ আসানসোল উত্তর থানার জাহাঙ্গীর মহল্লা ফাঁড়ির (টিওপি) ইনচার্জ শীতল নাগ গোপন সূত্রে খবর পান যে একটি দামী চারচাকা গাড়িতে গাঁজা পাচার করা হচ্ছে। সেই গাড়ি ২ নং জাতীয় সড়ক থেকে কারবালা লিঙ্কে যাবে। গাড়ির নম্বরও ফাঁড়ি ইনচার্জ পেয়ে যান। সেই মতো তিনি উধ্বর্তন আধিকারিকদের বিষয়টি জানান। তাদের নির্দেশ মতো তিনি কারবালা মোড়ের কাছে পুলিশ কর্মীদের নিয়ে ওৎ পেতে থাকেন। খবর মতো সেই নম্বরের গাড়ি সেখানে আসতেই, সেটিকে ঘিরে ধরেন পুলিশ কর্মীরা। তল্লাশিতে গাড়ি থেকে দুটি সাদা বস্তায় ১৩ কেজি ও ৯ কেজি সবমিলিয়ে ২৩ কেজি গাঁজা পাওয়া যায়। গাড়িতে থাকা ৫ জন গিয়াসউদ্দিন খান, আসগার ওরফে মিস্টার খান, ফইয়াজ হায়দার ওরফে রবি, মহঃ আজাদ ওরফে সল্লু ও রিয়াজ হায়দার ওরফে রাজুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গাড়িটি গিয়াসউদ্দিন খানের ছিলো ও সেই গাড়িটি চালাচ্ছিলো। পুলিশ ধৃতদেরকে জেরা করে জানতে পারে যে, এই গাঁজা ঝাড়খণ্ড থেকে পাচারের জন্য আসানসোলে গাড়ি করে আনা হচ্ছিলো।


তবে দোষী সাব্যস্ত ৫ জনের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন খানের সর্বোচ্চ ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড কেন হয়েছে? এই প্রসঙ্গে জানা গেছে, মামলা চলাকালীন তার তরফে এক সাক্ষীকে ভয় দেখানো ও হুমকি দেওয়া হয়েছিলো। সেই ঘটনা বিচারককে অবহিত করা হয়েছিলো এই মামলার শুনানিতে। আইনজীবীদের মত, এই ঘটনার জন্য হয়তো তার সবচেয়ে বেশি সাজা হয়েছে।
আরো জানা গেছে, এনডিপিএস আইনে আসানসোল জেলা আদালতে এই সাজা এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

Leave a Reply