ASANSOL-BURNPUR

বার্ণপুরের গ্রামে মহালয়ায় একদিনের দূর্গাপুজো, প্রতিমাও অন্যরকম, রয়েছে পুরোনো রীতি

বেঙ্গল মিরর, বার্ণপুর, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ মহালয়ার মধ্যে দিয়ে হয় পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনা। আর এই মহালয়ার দিনই পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহর থেকে বেশ দূরে হিরাপুর থানার অন্তর্গত বার্ণপুরের ধেনুয়া গ্রামে একদিনের দুর্গাপুজো আয়োজন করা হয়। একদিনের এই পুজোর প্রতিমাও একবারে অন্যরকম। রয়েছে অনেক পুরনো রীতিও।


জানা গেছে, এই পুজো ১৯৭৮ সালে কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুরের হাত ধরে শুরু হয়েছিল। কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত। তিনি ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ। একাধারে তিনি গ্রামের উন্নতির জন্য কাজ করতেন। তার বিশ্বাস ছিলো যে দুর্গাপুজো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এর মধ্যে দিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। কথিত আছে সাধক তেজানন্দ বম্ভ্রচারী প্রথম তার সাধনা বলে মায়ের এই মূর্ত রূপ অবলোকন করেছিলেন।


পরে, কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুর গ্রামবাসীদের সাথে আলোচনা করে মহালয়ার দিনে একদিনের দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজেই পুজোর সমস্ত আয়োজন করতেন। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে, একটি ছোট মন্দির তৈরি করেন। তিনি নিজেই মূর্তি তৈরি করার পাশাপাশি পুজোর আচার-অনুষ্ঠান তার পরিচালনাতেই হতো।


কালীকৃষ্ণ সরস্বতী ঠাকুরের মৃত্যুর পর, তার ছেলে তরুণ সরস্বতী ঠাকুর পরে এই পুজোর দায়িত্ব নেন। তিনি তার পিতার আদর্শ অনুসরণ করে পুজোকে আরও সুন্দর ও ঐতিহ্যবাহী করে তোলেন। আজ ধেনুয়া গ্রামের একদিনের দুর্গাপুজো একটি ঐতিহ্যশালী হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে।


মহালয়ার দিনে হওয়া একদিনের এই পুজোতে একটি ছোট মন্দিরে মায়ের একচালা মূর্তি থাকে । এখানে মায়ের সাথে তার পরিবারে কোন সদস্য থাকে না। যেমন প্রচলিত পুজোয় দেখা যায়। মা দূর্গার সঙ্গে তার দুই ছেলেমেয়ে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী ও সরস্বতীর সঙ্গে তাদের বাহনেরা থাকে। সেখানে ধেনুয়ার গ্রামের একদিনের পুজোয় মা দুর্গার সঙ্গে তার দুপাশে দুই সখি জয়া ও বিজয়া থাকেন। এই পুজোতে স্থানীয় শিল্পীরাই মূর্তি তৈরি করেন। এই পুজোয় গ্রামের সাধারণ মানুষেরা পুজোর আয়োজনে থাকেন ।


শনিবার সকালে ধেনুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো, মহালয়াতেই আকাশে বাতাসে পুজোর গন্ধ। গ্রামের কচিকাঁচারা নতুন ধুতি ও গেঞ্জি পড়ে গ্রামের মহিলা ও পুরুষদের সঙ্গে পুকুরে যায়। এরপর একদিনেই দেবীর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীর পুজো হয়। প্রতি বছরের মতো এবারেও আসানসোল বার্নপুর সহ পাশের বাঁকুড়া জেলারও প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটেছিলো। থাকে পুজো দেখতে আসা ভক্তদের মাঝে ভোগ বিতরণের ব‍্যবস্থা।
দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে চলে আসা এই পুজো দূর্গাপুজোর আগেই আসানসোলে অন্য একটা আমেজ এনে দেয়।

Leave a Reply