ASANSOLKULTI-BARAKAR

বরাকরে চাঞ্চল্য, ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল থেকে ৮ দিন ধরে নিখোঁজ যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার, খুনের অভিযোগ , ধৃত ৪

বেঙ্গল মিরর, কুলটি , দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* শেষ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল থেকে শনিবার সকালে গত ৮ দিন ধরে নিখোঁজ থাকা আসানসোলের কুলটি থানার বরাকর পুলিশ ফাঁড়ির বালতোড়িয়ার যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হলো। মৃত যুবকের নাম অর্জুন কুরেশী (২৬)। কুলটি থানার বরাকর ফাঁড়ির বালতোড়িয়ার বাসিন্দা মানিক কুরেশীর ছেলে অর্জুন কুরেশী গত ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার থেকে নিখোঁজ ছিলো। জানা গেছে, শনিবার সকালে ঝাড়খণ্ডের চিরকুন্ডা থানার পুলিশ নতুনগ্রামের জঙ্গল থেকে অর্জুনের দেহ উদ্ধার করে। পরে তার ময়নাতদন্তের জন্য ধানবাদে পাটলিপুত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে এদিন সকালে যুবকের বাবা ও পরিবারের সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। কুলটির বরাকর ফাঁড়ির পুলিশও যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া জঙ্গলের পাশাপাশি চিরকুন্ডা থানায় যায়। গোটা বিষয়টি নিয়ে দুই থানার পুলিশ যুবকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে। ছেলের এইভাবে দেহ উদ্ধার হওয়ার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মানিক কুরেশী।


এর আগেই গত বুধবার এই ঘটনার যুবকের পরিবারের তরফে অভিযোগ পেয়ে বরাকর ফাঁড়ির পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। গত বৃহস্পতিবার তাদেরকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে পাঁচ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নির্দেশ দেন। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
মানিক কুরেশি ও পরিবার সূত্র থেকে জানা গেছে, গত শনিবার সকালে অর্জুন কুরেশী গরু কেনার জন্য ঝাড়খণ্ডের মাইথনের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হয়। তার সঙ্গে ৫৫ হাজার টাকা ছিলো। রাতের মধ্যে বাড়িতে না ফেরায় বাড়ির লোকেরা তাকে বারবার ফোন করেন৷ কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকেরা তখনই মনে করেন যে, তাকে কেউ বা কারা হয়তো অপহরণ করেছে। ঠিক তিনদিন পর অর্জুনের ফোন আসে সরাসরি বাড়িতে। এই ফোন পেয়ে বাড়ির লোকেরা বুঝতে পারেন সে রীতিমতো সে ঘাবড়ে রয়েছে। সে কেবল বলতে থাকে যে কোনও একটা চক্করে পড়ে গেছে। তাকে কোথাও একটা ঘরের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বরাকর পুলিশ ফাঁড়িতে যুবক পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে একট অভিযোগ করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশের কাছে অর্জুনের কথাবার্তা একটি কল রেকর্ডিংও দেওয়া হয়। যুবকের খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা বরাকর ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। এরপর এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বরাকর ও ঝাড়খণ্ড থেকে দুজন করে মোট চারজনকে গ্রেফতার করে। তাদেরকে আসানসোল আদালতে পাঠানো হলে পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে জামিন নাকচ করে তাদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। যুবককে কোথায় দুষ্কৃতিরা বেঁধে রেখেছে তার সন্ধানে চারজনকে বরাকর ও কুলটি পুলিশের আধিকারিক জেরা করেন। শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালে ঝাড়খণ্ডের চিরকুন্ডা থানার নতুনগ্রামের জঙ্গল থেকে নিখোঁজ অর্জুনের দেহ উদ্ধার হয়।


ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরে মানিক কুরেশী বলেন, ওরা আগেই হুমকি দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত ওরা ছেলেকে খুন করলো। তার ও পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুলিশ একটু আগে থেকে তৎপর হলে এই ঘটনা ঘটতো না।
চিরকুন্ডা থানার পুলিশের অনুমান, ঐ যুবককে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে যে, ঠিক কি ভাবে যুবককে খুন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কুলটি থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৃষ্ণেন্দু দত্ত এদিন বলেন, ঘটনার তদন্তে নেমে আগেই চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, ঠিক কি কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।

Leave a Reply