দুই যুবককে নগ্ন করে মারধরের অভিযোগ, ভিডিও ভাইরালের পরে মামলা পুলিশের, গ্রেফতার ১
জামুড়িয়া শিল্প তালুকের ঘটনায় চাঞ্চল্য, ট্রাক থেকে ডিজেল চুরির অপরাধে

বেঙ্গল মিরর, জামুড়িয়া ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ ( Viral Video of Jamuria ) ট্রাকের ওয়েল ট্যাঙ্কার থেকে ডিজেল চুরির অপরাধে দুই যুবককে নগ্ন করে মারধরের অভিযোগ উঠলো। শনিবার অর্থাৎ গত ২৭ জুলাই রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুড়িয়া থানার কেন্দা ফাঁড়ির শিল্প তালুকে। সেই ঘটনার চারদিন পরে বুধবার রাতে সেই মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তারপরই আসানসোলে শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি গোটা পশ্চিম বর্ধমান জেলায় শোরগোল পড়েছে। জামুড়িয়া থানার পুলিশ ভিডিও ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঐ শিল্প তালুকের একটি হোটেলের মালিককে বুধবার রাতে পুলিশ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস জানিয়েছেন । বৃহস্পতিবার ধৃতকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়। জামুড়িয়া থানার পুলিশ এখন তদন্ত করে দেখছে, ঠিক কি ঘটনা ঘটেছে ও এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত আছে।


উল্লেখ্য, কোন কিছু ঘটনার পরে কাউকে সন্দেহবশতঃ ধরে মারধর করা বা গণধোলাই দেওয়া নতুন কোন ঘটনা নয়। ছেলেধরা সন্দেহে গত দু’মাসে বাংলার বিভিন্ন জেলায় একাধিক এমন ঘটনা ঘটেছে। জুলাই মাসে আসানসোল উত্তর থানা এলাকায় একটি গণধোলাই দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো। সেই ঘটনায় পুলিশকেও আক্রান্ত হয়ে হয়েছিলো। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও।
পুলিশ প্রশাসনের তরফে বারবার বলা হচ্ছে, আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না। কোন ঘটনায় কাউকে সন্দেহ হলে, তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারপরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি হয়নি, তা জামুড়িয়ার ঘটনা আরো একবার প্রমাণ করলো।
যদিও জানা গেছে, জামুড়িয়া থানা ঐ ঘটনা জানতে পারার পরে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যায়। কোন অভিযোগ না হওয়ায় পুলিশ নিজেদের মতো করে ( সুয়োমোটো) মামলা করেছিলো।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে আলোআঁধারির মধ্যে দুই যুবককে একটি ট্রাকের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। তারমধ্যে এক যুবক নগ্ন। তার মধ্যে এক যুবকের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। সেই ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, এরা ডিজেল চুরি করছিলো দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের ওয়েল ট্যাঙ্কার থেকে। তাদেরকে হাতেনাতে ধরা হয়। তারপর তাদেরকে নগ্ন করে মারা হয়েছে। ঐ ভিডিওতে আরো শোনা যাচ্ছে, যারা মেরেছে তারা ট্রাকের কেউ নয়। তারা সব স্থানীয় বাসিন্দা।
পরে জানা যায়, এই ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের জামুড়িয়া থানা কেন্দা ফাঁড়ির শিল্প তালুকে গত শনিবার ২৭ জুলাই রাতে। কোনভাবে ঘটনার কথা জানতে পেরে পুলিশ এলাকায় আসে। ঐ দুই যুবককে শিল্প তালুকের একটি হোটেল থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। তারা পুলিশকে বলে, আমরা চোর নই বা চুরি করিনি। ভিন রাজ্য থেকে ট্রাকে করে জিনিস নিয়ে এই শিল্প তালুকে একটি বেসরকারি কারখানায় এসেছি। তিনদিন ধরে আছি। হাতে টাকা না থাকায় খাবার খেতে পারছিলাম না। তাই নিজেদের ট্রাক থেকে ১০ লিটার ডিজেল বার করছিলাম। তখনই আমাদের এলাকার লোকেরা ধরে। চোর সন্দেহে তারা আমাদেরকে নগ্ন করে বেঁধে মারধর করেছে। কোন অভিযোগ না থাকায় পুলিশ তাদেরকে ধরেনি। পরের দিন রবিবার ডিসিপির( সেন্ট্রাল) নির্দেশে জামুড়িয়া থানার কেন্দা ফাঁড়ির পুলিশ একটি সুয়োমোটো মামলা করে।
এদিকে, বুধবার রাতে সেই মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হতেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। রাতেই গ্রেফতার করা হয় এলাকার একটি হোটেলের মালিককে। এই হোটেল থেকেই ঐ যুবকদেরকে পুলিশ উদ্ধার করেছিলো।
এই প্রসঙ্গে এদিন ডিসিপি ( সেন্ট্রাল) বলেন, জামুড়িয়া পুলিশ আগেই একটা মামলা করেছিলো। সেই মামলাতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।