ASANSOLBengali News

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সংক্রমণের হার ছয় গুণ কমে গেল, আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার আরো বেশি

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। রাজ্যের সাথে সাথেই পশ্চিম বর্ধমান জেলায় গত ১৫ দিনের লকডাউনে করোনায় পজিটিভ কেস এর সংখ্যা এই জেলায় যথেষ্ট পরিমাণ কমেছে। গত ১১  দিনে আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হারও বেড়েছে। একসময় জেলায় চলতি মাসেই যেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ৪৭ দশমিক ৪১ শতাংশ করোনা পজিটিভ কেস ছিল সেখানে শুক্রবার ৮ দশমিক .২২শতাংশে নেমে এসেছে। জেলার চিকিৎসকরা বলছেন এর অন্যতম কারণ অবশ্যই লকডাউন। সময়মতো দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাইট কারফিউ বজায় থাকা এবং সর্বোপরি আমজনতার মধ্যেও পরিচিত মানুষদের করোনার আক্রমণ বা মৃত্যুর খবরে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি  হয়েছে। সে কারণে তারা মাস্ক ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন চিকিৎসকরা।

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ১ লা মে থেকে ১৫ ই মে তে ৩৫ হাজার ৯৩৭ জনের করোনা পরীক্ষা করে ১৩ হাজার ৭৬৩জনের পজিটিভ পাওয়া যায়। অর্থাৎ  পজিটিভিটি সংখ্যা ছিল ৩৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। ১৬ই মে থেকে ২৮শে মে এই লকডাউন এর সময৩৩০৬১ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং ৬৬০০ জনের পজেটিভ মেলে ।অর্থাৎ পজিটিভ হওয়ার পরিমাণ ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জেলায় এই মাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ৯ ই মে। এদিন ১৮৬৯ জনের পরীক্ষা করা হয় এবং ৮৮৬ জনের পজেটিভ অর্থাৎ ৪৭ দশমিক ৪১ শতাংশ পজিটিভ হয়েছে বলে জানা যায় ।সরকারি তথ্য থেকে দেখা যায় ২৮ মে শুক্রবার সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছেন এবং পজিটিভিটি সংখ্যা ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। এদিন ১৫০৮ জনের পরীক্ষা করা হয় এবং ১২৪ জন এর পজিটিভ পাওয়া যায়। 

read also বাজারে চুরির অভিযোগ, পুলিশের হাতে তুল দিল তিনজন মহিলাকে

জেলার স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানা যায় লকডাউনের অত্যন্ত ইতিবাচক ফল মিলেছে জেলায়। কোবিডের আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন কমছে । এই লকডাউন কে সফল করতে পুলিশ প্রশাসন এবং জেলার সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভাবে সাহায্য করেছেন। সেইসঙ্গে চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীরা তো আছেনই।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী কুমার মাজি বলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মার্চ মাসে তৃতীয় সপ্তাহে দেখা যায় ২ দশমিক ৯৬শতাংশ মানুষ করোনাতে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ২১ শে মার্চ থেকে৩১ শে মার্চের মধ্যে এই সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৭দশমিক ৬৫ শতাংশ হয়ে যায়।  এরপর থেকে করোনার গ্রাফ জেলায় বাড়তে থাকে।  লকডাউনে আমরা লক্ষ্য করে দেখলাম তা ক্রমশ কমেছে ।গত ১১ দিন টানা আক্রান্তের সংখ্যা জেলায় কমেছে। তিনি বলেন এর জন্য অবশ্যই পুলিশ প্রশাসন এবং সরকারিভাবে বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিয়ত প্রচার বড় কাজ করেছে ।আমরা মনে করছি ভ্যাক্সিনেশন যেমন প্রয়োজন তেমনি মানুষ যেন না ভাবেন সংখ্যাটা অনেক কমে গেছে বলে আর মাস্ক পরার দরকার নেই। নিয়ম ভেঙ্গে ঘুরে বেড়াবো তা হবে না। আমাদের নিয়মিত মাস্ক পড়তে হবে এবং দূরত্ব বিধি বজায় রাখতে হবে। এবং সেনিটাইজারের ব্যবস্থাও নিজেদের  চালিয়ে যেতে হবে ।এটাই হচ্ছে আমাদের করোনা রক্ষার মূল অস্ত্র তা ভুলে গেলে চলবে না।

read also অভিযুক্ত তান্ত্রিক রবিন গরাই গ্রেফতার

 সরকারি বুলেটিন’-এ দেখা যাচ্ছে দশ দিন আগেও যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে ৯৬০ ছিল সেখানে শুক্রবার তা কমে ৫৮০ তে নেমে এসেছে। এবং সুস্থতার সংখ্যাও শুক্রবার ছিল বেশি। ৭৫০ জন কে সুস্থ হবার কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালগুলি থেকে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে সুপার নিখিল চন্দ্র দাস বলেন ৪৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে পজিটিভিটি কমে আসার অর্থ অবশ্যই লকডাউনের একটা বড় কারণ। দ্বিতীয়তঃ সাধারণ মানুষকে দেখেছি তারাও কিন্তু আতঙ্কিত হচ্ছেন করোনার নাম শুনে। যেহেতু পরিচিত আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যেই রোগ দেখা দিচ্ছে তাই তারাও এখন ভয় পাচ্ছেন।

তবুও এখনো বিশেষ করে সবজি বাজারের মুদিখানার দোকানে জেভিয়ের আমরা সকালে দেখতে পাচ্ছি তাও আমাদের কমাতে হবে। তৃতীয়ত পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আছে। তারা রাস্তায় নেমে যেভাবে কাজ করেছেন তাতে বেশিরভাগ মানুষ লকডাউন এর নিয়ম মানছে ।  আমি আমাদের জেলা হাসপাতালে দেখেছি শুরুর দিকে যেখানে ৬৫ /৭০জন সন্দেহজনক কোভিদ রোগীকে ভর্তি করছিলাম তাও অনেক কমে গেছে।

গত  বৃহস্পতিবার ছিল ৮ জন  জন এবং শুক্রবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ জনে। আবার যারা বিভিন্ন জায়গায় অক্সিজেন সরবরাহ করছিলেন রোগীদের জন্য তারাও জানান অক্সিজেনের চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। পুলিশ যে যথেষ্ট সচেতন শুক্রবার রাত্রে আর একবার তার প্রমাণ মিলেছে। আসানসোল দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে একটি দল রাস্তায় বেরিয়ে প্রয়োজন নেই এমন অনেক গাড়ি ও বেশ কয়েকজনকে ধরেছেন। সবমিলিয়ে ২৫ জনের বিরুদ্ধে প্রিভেন্টিভ আরেস্ট কেস করা হয়েছে।

Leave a Reply