আসানসোলের ইমাম তথা একজন পিতার নজিরবিহীন ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, ছেলেকে কারা অপহরণ করে খুন করল তা দেখেননি তাই আদালতে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল ঃ একদিকে একদল মানুষ যখন বীরভূমে ঘরের মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে আরেকদল মানুষকে হত্যা করছে, ঠিক অন্যদিকে তখন আসানসোলের আরেকজন ইমাম নিজের ছেলে খুন হওয়ার পরেও সকলকে শান্ত থেকে আর যেন কোনও মৃত্যুর ঘটনা না ঘটে বলেছিলেন। আবার সেই ইমাম নিজের চোখে যেহেতু ছেলেকে কারা অপহরণ করে খুন করল তা দেখেননি তাই আদালতে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি। সেই ইমামের ছেলের অপহরন ও খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই প্রধান আসামি পিন্টু যাদব ও বিনয় তেওয়ারিদের শুক্রবার আসানসোলের অতিরিক্ত জেলা জজ শরণ্যা সেন প্রসাদ তাদের বেকসুর খালাসের কথা ঘোষণা করেন।একজন ইমাম তথা একজন পিতার নজিরবিহীন এমন ঘটনা অবশ্যই বিচারালয়ের ইতিহাসে ঐতিহাসিক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
![](https://i0.wp.com/bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2023/10/IMG-20230207-WA0151-e1698295248979.webp?resize=768%2C512&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/bengalmirrorthinkpositive.com/wp-content/uploads/2022/03/IMG-20220326-WA0062.jpg?resize=292%2C166&ssl=1)
জানা গেছে ২০১৮ সালের ২৮ শে মার্চ আসানসোলে এক দাঙ্গায় উত্তর আসানসোল রেলপারের বাসিন্দা ইমাম ইমদাদ উল্লা রাশিদির পুত্র দশম শ্রেণীর ছাত্র সিবগত উল্লা রশিদ অপহৃত হয়ে খুন হন এবং তার দেহ জেলা হাসপাতালে গিয়ে পরিবারের লোকেরা তখন সনাক্ত করেছিলেন। সেই সময় আসানসোল জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়ার সাথে সাথেই ওই ইমাম সাহেব নিজে রাস্তায় নেমে হাত জোড় করে সবাইকে অনুরোধ করেছিলেন আর অন্য কারোর একটি সন্তানেরও যেন এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে প্রাণ না যায়। গোটা এলাকা শান্ত করার ক্ষেত্রে তার এই বক্তব্য এবং প্রার্থনা বড় ধরনের কাজ করেছিল।
১৯৩/১৮ এই মামলায় আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ অন্যতম আসামি হিসেবে বিনয় তেওয়ারি এবং পিন্টু যাদব কে গ্রেপ্তার করে। হাসপাতালে গিয়ে যারা চিহ্নিত করেছিল তাদেরসহ পুলিশ প্রায় দশ জনকে সাক্ষী হিসেবে রেখেছিলেন এবং পুলিশ একটি বেসব্যাট ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছিল। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ওই ব্যাট পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন এটি আগে কখনো ব্যবহার হয়নি। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুজন এক বছর জেলে থাকার পর কলকাতার উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদের শর্তাধীন জামিন দেয়া হয়েছিল এবং সপ্তাহে একদিন করে স্থানীয় থানায় তাদের হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল বলে জানান আসামিদের পক্ষে আইনজীবী শেখর কুন্ডু । তিনি বলেন এই মামলায় অন্যতম সাক্ষী তার বাবা ইমদাদউল্লা রশিদি আদালতে উপস্থিত হননি। যতদূর জেনেছি তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন তিনি যেহেতু নিজের চোখে কাউকে খুন করতে দেখেননি তাই তিনি সাক্ষ্য দিতে আসবেন না ।আর যারা সাক্ষী হিসেবে ছিলেন তারাও জানিয়ে দেন তারা এদের কাউকে খুন করতে দেখেননি ।শুক্রবার এই মামলায় বিনয় এবং পিন্টু কে বেকসুর খালাস করে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক বলে শেখর বাবু জানান।
এই মামলার সহকারী প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় বলেন ওনাকে একাধিকবার ডাকা হয়েছিল সাক্ষী হিসেবে। কিন্তু তিনি আসেননি। এমনকি আজও এই মামলার চূড়ান্ত রায় দানের সময় তিনি আদালতে হাজির ছিলেন না। ওনার বক্তব্য ছিল যেহেতু উনি কাউকেই নিজের চোখে দেখেননি খুন করতে তাই তিনি এসে এখানে কি করে সেটা বলবেন। আমার ৭১ বছর বয়স হল। আমি ৪৮ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছি। কিন্তু একজন খুন হওয়া পুত্রের পিতা সাক্ষী হিসেবে এলেন না যেহেতু তিনি দেখেননি অবশ্যই সেটা নজিরবিহীন।
এই বিষয়ে শুক্রবার রায়ের পরে ওই ইমাম সাহেব বলেন আমি সেদিনও যে কথা বলেছি আজও সেটাই বলছি। আল্লা প্রকৃত বিচার করবেন। পুলিশে কেশ সাজিয়েছে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের দায়িত্ব তারা প্রকৃত খুনি ধরবে ।আমি যেহেতু নিজের চোখে কাউকে আমার ছেলেকে অপহরণ করতে বা খুন করতে দেখেনি স্বাভাবিকভাবেই আদালতে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারব না বলেই যাই নি। চিরকাল আমি সত্যের জন্য লড়াই করে এসেছি এবং সত্যকে নিয়েই বাঁচতে চাই একজন ইমাম হিসেবে। আমি নিজে কারোর নাম দিই নি। যারা গ্রেফতার হয়েছিল একসময় তাদের পরিবারের কেউ কেউ আমার কাছে আসায় আমি বলেছিলাম আমি যা চোখে দেখি নি তা বলবো না ।আর ওরা যদি পাপ না করে থাকে তাহলে ওরা মুক্তি পাবে।