ASANSOL

আসানসোলে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা, ডিসিপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি, জেলাশাসককে দেওয়া হবে রিপোর্ট

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্তঃ আসানসোলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা বাংলা জুড়ে শোরগোল পড়েছে। উদ্যোক্তাদের তরফে এই সভার জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া ও না নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বাকবিতন্ডা। ইতিমধ্যেই আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার এন সুধীর কুমার নীলকান্তম এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি তৈরী করেছেন। ডিসিপি ও এসিপি পদমর্যাদার দুই অফিসারের নেতৃত্বে চার সদস্যর এই কমিটি এই ঘটনার তদন্ত করবেন। দ্রুত এই কমিটিকে এর তদন্ত করে একটি রিপোর্ট পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


প্রসঙ্গতঃ, ঘটনার পরে বুধবার রাতে মৃত তিনজন চাঁদমনি দেবী, ঝালি দেবী বাউরি ও প্রীতি সিংয়ের পরিবারের তরফে আসানসোল উত্তর থানায় আলাদা আলাদা করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেইসব অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে এফআইআরও করেছে।
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটার পরে রাতে উদ্যোক্তাদের তরফে একটি চিঠি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে গত ৩ ডিসেম্বর আসানসোল পুরনিগমের ২৭ নং ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তেওয়ারি আসানসোল উত্তর থানার ওসিকে এই চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১৪ ডিসেম্বর বুধবার ২৭ নং ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ ডাঙাকে শিব চর্চার সঙ্গে মেগা কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান করা হবে। সময় বলা হয়েছে বিকেল তিনটে থেকে সন্ধ্যা ছটা। চিঠির মাধ্যমে ওসিকে ইনফরমেশন দেওয়া ও নেসেসারি এ্যাকশান নিতে বলা হয়েছে। চার লাইনের চিঠি থানাতে ৩ ডিসেম্বর সই করে রিসিভ করে ” কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড ” স্ট্যাম্প দেওয়া হয়েছে।


বিজেপি কাউন্সিলরের লেখা এই চিঠিতে কোথাও উল্লেখ করেন নি যে, সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আসছেন। থাকবেন অন্য বিজেপি নেতারাও। ঠিক কত লোকের জমায়েত হতে পারে, তার কোন উল্লেখ নেই এই চিঠিতে।
কিন্তু পুলিশের তরফে এই সভা বা অনুষ্ঠান করা যাবে কিনা, তার কোন লিখিত বা মৌখিক কোন অনুমতি ঐ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া হয়নি।
স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনা ঘটার পরে অনুষ্ঠানের জন্য চিঠি দেওয়া বিজেপি কাউন্সিলর বিপাকে পড়েছেন। কারণ তিনি বা উদ্যোক্তারা এই অনুষ্ঠান করার জন্য কোন পুলিশের অনুমতি দেখাতে পারেননি।
আর এখানেই রাজ্যের শাসক দলের মন্ত্রী ও নেতারা অনুষ্ঠানে থাকা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও অন্যদেরকে আক্রমণ করে, আইনের ঘেরাটোপে আনতে চাইছেন।

দলীয় স্তরে খতিয়ে দেখবে বিজেপি , শাসক দলকে আক্রমন করে পুলিশি তদন্তে আস্থা জিতেন্দ্র তেওয়ারির

” ডিসেম্বর ধামাকা” র দ্বিতীয় দিন ছিলো ১৪ ডিসেম্বর বা বুধবার। আর সেই দিন আসানসোলের রামকৃষ্ণ ডাঙ্গালে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে পদপিষ্ঠ হয়ে এক স্কুল পড়ুয়া সহ তিনজনের মৃত্যু হলো। আর এই ঘটনা নিয়ে কার্যত দিশেহারা বিজেপির আসানসোল থেকে রাজ্য নেতৃত্ব। পরিস্থিতি বিবেচনা করে, এই ঘটনা কি করে হলো, তা খতিয়ে দেখতে নিজেদের মতো করে দলীয় স্তরে তদন্ত করছে। বৃহস্পতিবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে এমনটাই জানালেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় ও জেলা সভাপতি দিলীপ দে। তারা বলেন, এমনটা হওয়া উচিত ছিলোনা। এর আগেও তো এমন অনেক অনুষ্ঠান ও সভা করা হয়েছে।


এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি এদিন বলেন, যে ঘটনা যা ঘটেছে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করার কোনো সুযোগই ছাড়ে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে, যদি এটি করা হয়, এটি ভাল। একটি দুর্ঘটনায় ৩ জন মারা গেছেন। এটা নিয়েও রাজনীতি করা অনুচিত। তবে তৃণমূল নেতারা যদি তা করতে চান, তবে তা তাদের চিন্তাভাবনা।
জিতেন্দ্র তিওয়ারি আরো বলেন, এটা তৃনমুল কংগ্রেসের জন্য একটি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জায়গা হতে পারে। কিন্তু বিজেপির কাছে এটা প্রিয়জন হারানোর বেদনার মতো। যা নিয়ে আমি রাজনীতি করতে চাইনা।

অন্যদিকে, সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, এই ঘটনার পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র আছে কি না সে সিদ্ধান্তে এখনই পৌঁছোতে চাইনা। তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত ও তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে চান তিনি।
বুধবারের ঘটনার পরে রাতের মতো বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনার জন্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতা থেকে এই সভার উদ্যোক্তাদের কড়া আক্রমন করেছেন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক, বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী থেকে সব নেতা। তারা এই ঘটনার জন্য বিজেপির নেতাদের সরাসরি দায়ী করেছেন।

Leave a Reply