ASANSOL-BURNPUR

লটারির টিকিটের পুরষ্কার না পেয়ে আত্মঘাতী যুবক

হিরাপুর থানা এলাকার ঘটনা তদন্তে পুলিশ , উদ্ধার সুইসাইড নোট

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ লটারির টিকিট মিলে যাওয়ায় পুরষ্কার পাওয়ার কথা ছিলো ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু লটারি টিকিট বিক্রেতা না দিতে গড়িমসি করেছিল। শেষ পর্যন্ত সেই টাকা না পেয়ে মানসিক অবসাদে বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলো এক যুবক। মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনায় আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের আলুঠিয়া গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃত যুবকের নাম উজ্জ্বল লায়েক (৪১)। পুলিশ একটি সুইসাইড নোটও পেয়েছে যুবকের কাছ থেকে। তাতে ঐ যুবক লটারি টিকিট কাটা থেকে, পুরষ্কারের টাকা না পাওয়া থেকে টিকিট বিক্রেতার নাম লিখেছে।

হিরাপুর থানার চাঁপড়া গ্রামের বাসিন্দা লটারি বিক্রেতা বিপদ ঘোষ মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই বেপাত্তা। তাকে না পেয়ে পুলিশ তার পরিবারের এক সদস্যকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। মৃত যুবকের স্ত্রী কৃষ্ণা লায়েক ও দাদা হরিপদ লায়েক এখনো পর্যন্ত হিরাপুর থানার পুলিশের কাছে গোটা বিষয়টি অভিযোগ আকারে জানিয়েছেন। তারা উজ্জ্বলের পরিবারকে এককালীন ক্ষতি পূরণ দেওয়ার দাবি করেছেন। পুলিশ আপাততঃ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে। বুধবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পেশায় ছোট গাড়ি চালক উজ্জ্বল লায়েক হিরাপুর থানার আলুঠিয়া গ্রামে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে থাকেন। গত ৪ জানুয়ারি তিনি পাশের চাঁপড়া গ্রামের বাসিন্দা লটারি বিক্রেতা বিপদ ঘোষের কাছ থেকে ভিন রাজ্যের লটারি টিকিট কাটেন। নম্বর মেলানোর সময় তাকে টিকিট বিক্রেতা বলেন, সে পুরষ্কার হিসাবে ১৪০০ টাকা পেয়েছেন। লটারি বিক্রেতা উজ্জ্বলকে তারমধ্যে ২০০ টাকা দিয়ে বলেন, বাকি টাকা পরে দেবেন। এরপরে উজ্জ্বল লোক মারফত জানতে পারে যে, ১৪০০ টাকা নয়, পুরষ্কার হিসেবে সে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পেয়েছে।

সঙ্গে সঙ্গে সে লটারি বিক্রেতা গিয়ে তা বলে। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও, পরে চাপাচাপিতে লটারি বিক্রেতা তা স্বীকার করে। কিন্তু সে সেই টাকা আজ দেবো, কাল দেবো বলে, ঘোরাতে থাকে উজ্জ্বলকে। জানা গেছে, আরো চারবার টাকা চাইতে উজ্জ্বল ঐ লটারি বিক্রেতার কাছে গিয়েছিলো। কিন্তু সে সেই টাকা দেবেনা বলে জানায়।


এরপর মঙ্গলবার রাতে বাড়ির লোকেরা উজ্জ্বলকে বাড়ির তিনতলায় কার্ণিশে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে হিরাপুর থানার পুলিশ আসে। উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।


উজ্জ্বলের দাদা হরিপদ লায়েক বুধবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে বলেন, আমি অন্য জায়গায় থাকি। মঙ্গলবার রাতে খবর পেয়ে ভাইয়ের বাড়িতে ছুটে যাই। তখন আমি সেখানে গিয়ে সব ঘটনার কথা জানতে পারি। হিরাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা চাই ঐ লটারি বিক্রেতার কাছ থেকে আমার ভাইয়ের পরিবারকে ক্ষতি পূরণ দেওয়া হোক।
এই ঘটনা নিয়ে পুলিশ জানায়, অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুবকের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ঐ যুবক মানসিক অবসাদে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।

Leave a Reply