FEATURED

ভারতীয় রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে সংশ্লিষ্ট রেলের জেনারেল ম্যানেজার বাৎসরিক পরিদর্শন এবার বন্ধ হতে চলেছে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য্য, আসানসোল : ব্রিটিশ আমল থেকে তৈরি হওয়া ভারতীয় রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে সংশ্লিষ্ট রেলের জেনারেল ম্যানেজার ও বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানদের বাৎসরিক পরিদর্শন এবার বন্ধ হতে চলেছে। রেল মন্ত্রক চলতি বছরের প্রথম দিন থেকেই জেনারেল ম্যানেজারদের ডিভিশনের গিয়ে সেকশন ধরে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। রেল পর্ষদের ডিরেক্টর( কর্পোরেট কোঅর্ডিনেশন )কুলদীপ সিং বিভিন্ন রেলের জেনারেল ম্যানেজার এবং রেলের বিভিন্ন কারখানার প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই নির্দেশের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।


ব্রিটিশ আমলে রেলের জেনারেল ম্যানেজারদের জন্য সুসজ্জিত সেলুনে করে রেল আধিকারিকরা পরিদর্শনে বেরোতেন অনেকটা মহারাজার রাজ্যপাট দেখার মত। রেলের বিভিন্ন জোনের জেনারেল ম্যানেজাররা যখন তাদের প্রত্যেকটি বিভাগের মুখ্য প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে সেলুন সহ বিশেষ ট্রেনে আগে থেকেই নির্ধারিত যেকোনো ডিভিশনের সেকশনই পরিদর্শনে যেতেন সেখানেই সবমিলিয়ে প্রায় আধিকারিক ও রেল কর্মী সংখ্যা হতো ১০০। শুধু তাই নয় একাধিক আধিকারিকের স্ত্রী রাও এই পরিদর্শনী গিয়ে সেখানে মহিলা ও শিশুদের জন্য কি হচ্ছে তার খোঁজ নিতেন। কোথাও কোথাও জেনারেল ম্যানেজারের স্ত্রী বা অন্য উচ্চ পদস্থ আধিকারিক এর স্ত্রীরা চিলড্রেন্স পার্ক বা মহিলাদের জন্য বিশেষ কেন্দ্র এসবের উদ্বোধন করতেন।

তার সঙ্গে রাতের দিকে ডিভিশনের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা হতো। সেখানেও তারা কিন্তু কোন দর্শনীয় স্থান থাকলে গাড়ি করে ঘুরে আসতেন ডিভিশনের সৌজন্যে । যেমন আসানসোল ডিভিশনে আসানসোল – ধানবাদ বা আসানসোল- দুর্গাপুর অথবা আসানসোল – জসিডি সেকশনে যখন ম্যানেজার পরিদর্শনে যেতেন সেখানে তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার স্টেশন, রেলের লাইন, লেভেল ক্রসিং, সিগনালিং ব্যবস্থা, এলাকায় থাকা হাসপাতাল বা রেলের স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্কুল সবই পরিদর্শন করতেন বলে ডিভিশনের আধিকারিকদের দাবি। যেমন জসিডি তে গেলে অবশ্যই দেওঘর মন্দিরে যাওয়ার ব্যবস্থা ডিভিশনের পক্ষ থেকে করা হয় ।


সবমিলিয়ে ভারতীয় রেলে পূর্ব রেল সহ ১৬ টি রেল জোন আছে ।ডিভিশনের সংখ্যাও ৬৯। তার ওপর লিলুয়া,কাছড়াপাড়া, জামালপুরের মত এইসব একাধিক রেল কারখানা আছে জেনারেল ম্যানেজার রেল আধিকারিকদের নিয়ে যেমন ডিভিশনগুলি পরিদর্শন করেন তেমনি বছরে একবার করে ঐ কারখানা গুলো পরিদর্শন করা হয়। অর্থাৎ সবমিলিয়ে সারা দেশে এমন পরি দর্শনের সংখ্যা প্রায় ৯০ হয়ে যাবে। আর এতে খরচ কয়েক কোটি টাকা বলা যায়। প্রতি পরিদর্শন জেনারেল ম্যানেজারদের জন্য সেলুন সহ বিশেষ ট্রেন ,তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং অনুষ্ঠানের খরচ সর্বোপরি আধিকারিক এবং কর্মীদের ট্রান্সফার অ্যালাউন্স বিল তো আছেই।


এই বিষয় পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন রেল বোর্ডের নির্দেশই আমাদের কাছে শিরোধার্য। এর বেশি নিয়ে কিছু মন্তব্য করব না। আসানসোল ডিভিশনের প্রাক্তন ডি আর এম এবং রেল বোর্ডের প্রাক্তন অতিরিক্ত ডিরেক্টর (প্ল্যানিং) অজয় কুমার রাওয়াল বলেন বর্তমান রেলমন্ত্রী মনে করেন অযথা এই খরচে তেমন কোন কাজ হয় না। তবে কিছু কিছু কাজ জিএম আসছেন বলে ডিভিশনের তরফ থেকে সেই সেকশনে হতো বলে আমরা আমাদের সময় দেখেছি। সৌজন্যের খাতিরে খাওয়া দাওয়া অনুষ্ঠান এসব অবশ্য করা হতো।


রেল স্ট্যান্ডিং কমিটির একাধিকবারের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া বলেন যে উদ্দেশ্যে এই পরিদর্শন সেটা ভালো কিছু কিছু কাজ হত। কিন্তু তার কার্যকারিতা নিয়ে এবং অতিরিক্ত খরচ নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন আছে। যাত্রী নিরাপত্তা যাত্রী স্বার্থে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের পরিদর্শন প্রয়োজন।
যদিও রেলের তরফে বলা হয়েছে যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে কোন রকম ভাবেই আপোষ করা হয়নি এবং হবেনা ।সেখান থেকেই জানানো হয়েছে সারা বছর ধরেই জোন থেকে বিভিন্ন ডিভিশনে একাধিক বিষয়ে আধিকারিকরা যান এবং খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেন।

Leave a Reply