ASANSOL

আসানসোল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই মানুষ লো ভোল্টেজের কারণে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়েছেন

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য্য, আসানসোল। আসানসোল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই যখন ৪৩ ডিগ্রির বেশি তীব্র গরম,তেতে উঠছ গোটা অঞ্চল ।সেই সময় এই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় মানুষ লো ভোল্টেজের কারণে দুর্বিসহ অবস্থায় পড়েছেন। বিশেষ করে দুপুরের দিকে এবং রাতের দিকে যখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে তখনই ভোল্টেজ নেমে যাচ্ছে ১৩০ ১৪০ ১৫০ ভোল্টে ।যেখানে কমপক্ষে ২২০ ভোল্ট না হলে এসি বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চালু রাখা অসুবিধা জনক হয়ে পড়ে ।শুধু তাই নয় যেহেতু ভোল্টেজ কমছে এবং বাড়ছে সেই কারণে এইসব ইলেকট্রিক্যাল জিনিসগুলি পুড়ে যাচ্ছে বা নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভোল্টেজের এই খারাপ অবস্থার কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেককেই সারারাত জেগে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থা যেমন চলছে সালানপুর ব্লকের রূপনারায়নপুর সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তেমনি জামুরিয়া, কুলটির একাংশ আসানসোলের বিস্তীর্ণ এলাকা ,বারাবনির বেশ কিছু অংশ বা রানীগঞ্জেও হচ্ছে।


রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা এবং ভাবনা সংগঠনের সভাপতি বিশ্ব দেব ভট্টাচার্য ও সহ সম্পাদক সমাজকর্মী অভয় মণ্ডল বলেন এই লো ভোল্টেজের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই গরমে আমজনতার কষ্ট যেমন বাড়ছে তেমনি পাখা ,এসি, ফ্রিজ বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাবার সংখ্যাও বাড়ছে। সালানপুর ব্লকের রূপনারায়নপুর বিদ্যুৎ অফিসে বছরে যেখানে ২২ কোটি টাকার বেশি আয় হয় সেখানে কেন প্রতিবার গরমের কয়েক মাস এরকম ভোল্টেজ হবে। শুধু তাই নয় রূপনারায়নপুর পুলিশ ফাঁড়ির সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে সন্ধ্যের পর বিদ্যুৎ দপ্তর যেহেতু বন্ধ হয়ে যায়, তাই অনেকেই পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে এই লো ভোল্টেজ নিয়ে তাদের সমস্যার কথা পুলিশকে বলেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি বিদ্যুৎ দপ্তরকে দেখতে বলা হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী এবং মহাবীর কলোনির বাসিন্দা অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় বলেন সমগ্র এলাকাতেই লো ভোল্টেজ শুধু নয় বুধবার রাতে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় প্রদীপের মত সারারাত আলো জ্বলেছে পাখা চলে নি। তাদের ঘরে তাও ছিল না ।


বিদ্যুৎ দপ্তরের স্থানীয় সহকারি ইঞ্জিনিয়ার স্বীকার করেছেন এই এলাকায় লো ভোল্টেজের চরম সমস্যা তৈরি হয়েছে। কুলটির বাসিন্দা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ও আসানসোলের ফতেপুরের বাসিন্দা মনোজ মাজি বলেন তাদের এলাকাতেও একই সংকট। বরাকরের চিকিৎসক অনির্বাণ রায় বলেন ওই অঞ্চলেও লো ভোল্টেজ সমস্যা ছাড়াও যখন খুশি আলো চলে যাচ্ছে ও আসে।
জামুরিয়ার গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা সন্দীপ চক্রবর্তী এবং স্বপন রায় দুজনেই বলেন এবারের মত এত লো ভোল্টেজ খুব কম আমরা দেখেছি। এই ভয়ংকর গরমে যখন পাখা দরকার তখন তা করছে না এসি তো অনেক দূরের কথা। বোরিং এর জল তোলাও কঠিন হয়ে গেছে। রানীগঞ্জের বণিক সভার প্রতিনিধি রাজেন্দ্র প্রসাদ খৈতান বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ে একই ধরনের অভিযোগ তোলেন।


রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা পশ্চিম বর্ধমান জেলার দায়িত্বে থাকা রিজিওনাল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ বাগদি বলেন আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ,সালানপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় লো ভোল্টেজ বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। এর অন্যতম কারণ বিদ্যুতের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ ঠিকমতো পৌঁছে দিতে গেলে আমাদের আরও সাবস্টেশন দরকার। এই কথা ভেবেই আগেই রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা দেড়শ কোটি টাকা খরচ করে রানীগঞ্জের মঙ্গলপুরে ২০০ এমভিএর সাবস্টেশন তৈরি করছিল ।সব ঠিকঠাক হলে বৃহস্পতিবারই তার উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঝপথে দুই একজন স্থানীয় ব্যক্তি তাদের জমির উপর দিয়ে সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা জানা সত্ত্বেও দুটি টাওয়ারের কাজ বন্ধ করে দেন। এই সাবস্টেশন টি নব্বই শতাংশ তৈরি হয়েও গেছে। বিষয়টি আমি জেলাশাসক থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রিসহ সবাইকেই জানিয়েছি। এখনই যদি ওই কাজ করতে আমরা না পারি তাহলে কিন্তু এই গোটা গরমে লো ভোল্টেজের সমস্যাটা চলবে। এমনকি এরপরে হয়তো বেশ কিছুক্ষণ লোডশেডিং করতে হতে পারে।

Leave a Reply