ASANSOL

কয়লা পাচার মামলা : ধৃত ইসিএলের প্রাক্তন কর্তা ও সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ কয়লা পাচার মামলায় সিবিআই এই প্রথম কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী বা সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর আনন্দমোহন সিংকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করলো।
এরআগে এই মামলায় ইসিএলের বর্তমান ও প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার সহ ৮ জনকে যখন গ্রেফতার করে বারবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হতো তখন তাদের আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলতেন, ইসিএলের কয়লা চুরি আটকানোর দায়িত্ব সিআইএসএফের। তাহলে তাদের কাউকে কেন ধরা হচ্ছে না? শেষ পর্যন্ত এবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেই সিআইএসএফের এক ইন্সপেক্টরকে গ্রেফতার করলো। একই সঙ্গে এই মামলায় ইসিএলের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা ডিরেক্টর অপারেশন সুনীল কুমার ঝাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।

गौ तस्करी CBI चार्जशीट


সিবিআই দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এদিন কলকাতার নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠায়। জিজ্ঞাসাবাদে সব প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে না চাওয়া ও তদন্তে সহযোগিতা না করার কারণেই দুজনকেই সিবিআই এদিন সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে। আজ শুক্রবার সকালে দুজনকে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তাদের তোলা হবে ।সিবিআইয়ের তরফে তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে তাদেরকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে ।
২০১৮ সালে সুনীল কুমার ঝাঁ সিংরোলি মাইনসে জেনারেল ম্যানেজার থেকে প্রমোশন পেয়ে ইসিএলে আসেন ডিরেক্টর অপারেশন পদে। সরজিৎ চক্রবর্তী ইসিএলের চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা সিএমডির পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরে কিছুদিন তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন। অন্যদিকে, সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর আনন্দ কুমার সিং ইসিএলের শীতলপুর সদর দপ্তরে পোস্টিং থাকলেও বিভিন্ন এরিয়ার সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এখান থেকেই তাকে ফারাক্কায় বদলি করা হয়েছিল। অভিযোগ এরা দুজনেই লালা ওরফে অনুপ মাঝির কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিতেন কয়লা পাচারের জন্য বলে অভিযোগ। শুধু আনন্দ সিংই নয় মনে করা হচ্ছে সিবিআই তাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পর আরো বেশ কয়েকজন সিআইএসএফের আধিকারিককেও গ্রেফতার করার দিকে এগোবে।


প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিবিআই কয়লা পাচার মামলায় এফআইআর করে । সেই মামলায় রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা খনি উত্তোলনকারী সংস্থা বা ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড বা ইসিএলের ৪ জনকে প্রথমে গ্রেফতার করে। পরে আরো একজন জেনারেল ম্যানেজার সহ মোট ৫ জন জিএম বা জেনারেল ম্যানেজার ও তিনজন ইসিএলের নিজস্ব নিরাপত্তা আধিকারিক গ্রেফতার করে সিবিআই গত বছরের ১১ জুলাই । এই ৮ জনের মধ্যে আছেন প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ মল্লিক, সুশান্ত বন্দোপাধ্যায়, তন্ময় দাস ও সুভাষচন্দ্র মৈত্র । পরে গ্রেফতার হওয়া আরো একজন জেনারেল ম্যানেজার সুভাস মুখোপাধ্যায়কে। বাকি তিনজন নিরাপত্তা আধিকারিক হলেন মুকেশ কুমার ,দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ও রিঙ্কু বেহারা । এদের কাছ থেকে প্রচুর কাগজ এবং আয় বহির্ভূত সম্পত্তি হদিশ মেলে। বর্তমানে এরা প্রত্যেকেই উচ্চ আদালতের থেকে জামিন পেয়ে বাইরে আছেন।


সিবিআই যখন এই কয়লা পাচার মামলা শুরু করেছিল তখন প্রথম এফআইআরে অনুপ মাঝি ওরফে লালা ছাড়া ইসিএলের একাধিক জিএমের নাম ছিল। এর আগে কয়লা পাচার কাণ্ডে বিকাশ মিশ্র ছাড়াও চার কয়লা ব্যবসায়ী জয়দেব মন্ডল, গুরুপদ মাঝি সহ চারজন গ্রেফতার হয়েছিল ।পরে এরাও কয়লা পাচার কাণ্ডে জামিনে পান কলকাতার উচ্চ আদালত থেকে।
ইসিএলের আধিকারিকদের যখন সিবিআই আদালতে আনা হত তখন বারবার তাদের আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন ই সি এল এর সমস্ত কয়লার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিআইএসএফের অথচ তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এই প্রথম আনন্দ কুমার সিংকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে সেদিনের তোলা সেই প্রশ্নের জবাবও সিবিআই দিয়ে দিলো বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।

Leave a Reply