DURGAPUR

দূর্গাপুরে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় শুনলেন অবৈধ কারবারের অভিযোগ, নির্দল হিসাবে দাঁড়ালে দলে ফেরার দরজা বন্ধ, কড়া বার্তা

বেঙ্গল মিরর, দূর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ তৃনমুলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে মঙ্গলবার বিকেলের পরে পূর্ব বর্ধমান থেকে পানাগড় হয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ঢোকেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। বলতে গেলে তারপর থেকে ঘটনা বহুল রইলো তার এই কর্মসূচি। এই জেলার কর্মসূচি শুরুর একবারে প্রথম তিনি যান কাঁকসার পানাগড়ের গুরুদ্বোয়ারাতে। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক, বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায় সহ সহ অন্যান্যরা। সেখানে তিনি গুরুদ্বোয়ারা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বসে প্রার্থনা করেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। বেশ কিছুক্ষুন তিনি সেখানে ছিলেন।


গুরুদ্বোয়ারা থেকে বেরোতেই বাইরে তার সঙ্গে দেখা হয় শারীরিকভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যুবক দূর্গাপুরের শিমুলতলার বাসিন্দা শেখ আকবর আলির সঙ্গে। তাকে ডেকে তার সামনে হাঁটু মুড়ে বসেন অভিষেক। যুবকের সঙ্গে প্রায় তিন মিনিট কথা বলেন তিনি। যুবককে একটা কাগজ অভিষেকের হাতে তুলে দিতে দেখা যায়। পরে ঐ যুবক বলেন, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় আসছে শুনে একজনকে সঙ্গে করে এনেছি। আমরা এলাকায় মদ ও গাঁজার অবৈধ কারবার চলছে। স্থানীয় থানার পুলিশকে বলে কোন লাভ হয়নি। তাই তাকে কাছে পেয়ে বললাম। উনি আমার সব কথা শুনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
পানাগড় থেকে অভিষেক রাতের দিকে এসে পৌঁছান চিত্রালয় বা রাজীব গান্ধী মেলা ময়দানে। গান্ধী মোড়ে তাকে স্বাগত জানান পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এই ময়দানেই তাঁবু ফেলে পঞ্চায়েতে জেলার আটটি ব্লকের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ভোট গ্রহণ, অধিবেশন ও রাত্রীযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


তবে মেলা ময়দানে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় আসার আগেই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট শুরু হয়।
পরে অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারকে নানা ইস্যুতে আক্রমন করেন তিনি। পাশাপাশি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী করা নিয়ে দলের নেতাদেরই কড়া হুঁশিয়ারী দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। বিশেষ করে দলের টিকিট না পেয়ে কেউ যদি নির্দল প্রার্থী হন, তাদের উদ্দেশ্যে ছিলো তার কড়া বার্তা। তিনি বলেন, নির্দল হিসাবে দাঁড়াতে পারেন। তবে মনে রাখবেন দলে আর ফিরতে পারবেন না। দলে ফেরার দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ে এলাকার মানুষ ও বুথ সভাপতির মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কেন না, তারাই দলের সম্পদ। এবার আর কোন নেতা দলের প্রার্থী ঠিক করবেন না। কোন নেতা যদি এলাকায় বলে বেড়ান, তিনি প্রার্থী ঠিক করবেন, তাহলে তিনি তা নিজের দায়িত্বে বলবেন। কেন না, সেই নেতাই জানেন না, আগামী দিনে তিনি দলে থাকবেন কিনা। যাকে প্রার্থী করা হবে, তাকে জেতাতে হবে। তাকে কেন নেতার পছন্দ না হলেও, কিছু করার নেই।


অধিবেশনের মঞ্চ থেকে এদিন অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, বাংলার মানুষের অধিকারের টাকা নরেন্দ্র মোদি সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে আটকে দিয়েছে। কেন্দ্রের কাছে বাংলার বিভিন্ন প্রকল্পে মোট পাওনা ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিধান সভা নির্বাচনে বাংলায় হেরে গিয়ে কেন্দ্র সরকার এই টাকা আটকে দিয়েছে। বাংলার মানুষদের এইসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। তিনি বলেন, গত ২২ দিন ধরে বাইরে রয়েছি। কুচবিহার থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেছি। গ্রামের রাস্তায় ঘুরছি। চায়ের দোকানে বসে মানুষের অভাব অভিযোগ শুনছি। আমার সাধ্য মতো তার সমাধানের চেষ্টাও করছি।
অন্য জেলায় প্রার্থী বাছাইয়ের ভোটে ব্যালট পেপার লুঠপাট ও বিশৃঙ্খলা হলেও, পশ্চিম বর্ধমানে তেমন কিছু হয়নি। ভোট শুরুর বেশ কিছুক্ষুন দূর্গাপুরের দুটি পঞ্চায়েতে ভোট কেউ দেয়নি বলে জানা গেছিলো। যদিও পরে জেলা নেতৃত্ব জানান, শুরুতে কিছু সমস্যা হয়। পরে ঠিক হয়ে যায়।
মঙ্গলবার রাতে দূর্গাপুরেই ছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলের পরে তার জামুড়িয়া ও অন্ডালে কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা। বুধবার দূর্গাপুরে রাত্রিবাস করে বৃহস্পতিবার সকালে অভিষেকের তৃনমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাঁকুড়া যাওয়ার কথা।

Leave a Reply