ASANSOL

আসানসোল ও বার্ণপুরে আয়কর দপ্তরের হানা, ম্যারাথন তল্লাশি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল ও বার্ণপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ* এবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বার্ণপুরে রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মহঃ সোহরাব আলির বাড়ি সহ একাধিক জায়গায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি আয়কর দপ্তর বা ইনকাম ট্যাক্সের ( আইটি) হানা। একইসঙ্গে বুধবারে সাতসকাল থেকে আয়কর দপ্তরের অভিযান শুরু হয় বার্ণপুরে ধরমপুরের বাসিন্দা স্ক্র্যাপ বা ছাঁট লোহার কারবারি ও প্রোমোটার সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদের বাড়ি ও অফিসে। অভিযান চলে বার্ণপুরের বাসিন্দা তার হিসাবরক্ষক বা চার্টার্ড একাউন্টেন্ট পঙ্কজ আগরওয়াল ও এক ঘনিষ্ঠর বাড়িতে।


একইভাবে এদিন সাতসকালে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা আসেন আসানসোল শহরের মসজিদ বাড়ি লেনে অন্যতম বড় প্রোমোটার ও ব্যবসায়ী মহেন্দ্র শর্মার বাড়ি ও অফিসেও। এই ব্যবসায়ীর হিসাবরক্ষকের বাড়িতেও আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা যান বলেও জানা গেছে ।


আয়কর দপ্তরের এই অভিযান নিয়ে এদিন বিকেল পর্যন্ত তৃনমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মহঃ সোহরাব আলি ও মহেন্দ্র শর্মার কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। তবে সকালে সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ আয়কর দপ্তরের অভিযানের খবর পেয়ে বাড়ির ঢোকার সময় সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
গত দুদিন ধরে আসানসোল শিল্পাঞ্চল জুড়ে বেশ জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। তারই মধ্যে বুধবার শীতের সকালে ঘুম থেকে কেউ উঠার আগেই ভোরবেলা কেন্দ্রীয় সংস্থা আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা পৌঁছে যান কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের জওয়ানদেরকে নিয়ে আসানসোল ও বার্ণপুরে চলে আসেন। প্রায় ৬০ জনের মতো আধিকারিক ও কর্মীরা রয়েছেন আয়কর দপ্তরের দলে। তাদের সঙ্গে ১০০ জনের মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান রয়েছে। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে বুধবার ভোর থেকেই আসানসোল ও বার্নপুর শহরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

বার্ণপুরের রহমতনগরে প্রাক্তন বিধায়ক সোহরাব আলির বাড়ি। ঘড়ির কাঁটা তখন বলছে ভোর ৫ টা বেজে ২০ মিনিট। রাস্তায় তেমনভাবে লোক চলাচলও শুরু হয় নি। আচমকাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান সহ নয়টি গাড়িতে করে কেন্দ্রীয় সংস্থার টিম প্রাক্তন বিধায়কের বাড়ির সামনে আসেন বলে জানা গেছে। ভোর সাড়ে ৫টার সময় কেন্দ্রীয় সংস্থার দল আসে বলে জানা গেছে। বাড়ির বাইরে গেটের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা বাড়ির ভেতর ঢুকে যান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এলাকার বাসিন্দা ও প্রাক্তন বিধায়কের ঘনিষ্ঠরা তার বাড়ির সামনে ভিড় জমান। বলতে গেলে গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়ে যায়।


পরে জানা যায়, শুধু সোহরাব আলির এই বাড়ি নয়, তার ঐ এলাকায় অন্য একটি বাড়িতে এই অভিযান শুরু হয়েছে। একইভাবে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা পৌঁছেছেন বার্ণপুরের ধরমপুরের বাসিন্দা বার্ণপুর ইস্কো কারখানার স্ক্র্যাপ বা ছাঁট লোহার কারবারি ও প্রোমোটার সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদের বাড়িতে আয়কর দপ্তরের আধিকারিক গেছেন। পাশাপাশি তার একাধিক অফিস ও হিসাব রক্ষক পঙ্কজ আগরওয়াল ও এক ঘনিষ্ঠর বাড়িতে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা হানা দিয়েছেন।
বার্ণপুরের পাশাপাশি আসানসোল শহরের জিটি রোড লাগোয়া ব্যবসায়ী ও প্রোমোটার মহেন্দ্র শর্মার বাড়ি ও অফিসেও আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা হানা দেন।


একযোগে আসানসোল ও বার্ণপুরের একাধিক আয়কর দপ্তরের অভিযান এদিন সকাল থেকে শুরু হলেও, ঠিক কি কারণে করা হয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে এদিন সকাল দশটা নাগাদ আয়কর দপ্তরের কয়েকজন কর্মীকে বাইরে থেকে কম্পিউটার ও প্রিন্টার নিয়ে প্রাক্তন বিধায়কের বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায়।


এই সোহরাব আলি রানিগঞ্জ বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক। তার স্ত্রী নার্গিস বানো এখন আসানসোল পুরনিগমের ৮২ নং ওয়ার্ডের তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলার। এদিন ভোরবেলা যখন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা প্রাক্তন বিধায়কের বাড়িতে আসেন, তখন দুই ছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। তবে এই অভিযান নিয়ে, তাদের কোন প্রতিক্রিয়া সন্ধ্যেবেলা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যেমন জানা যায় নি, ব্যবসায়ী মহেন্দ্র শর্মারও কোন প্রতিক্রিয়া। তবে সকাল আটটা নাগাদ আয়কর দপ্তরের অভিযান শুনে বাড়িতে ঢোকার সময় সংবাদ মাধ্যমকে সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অন্য বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলাম। খবর পেয়ে আসছি। জানিনা কেন, তারা এসেছেন। তবে তাদেরকে আমি সবরকম ভাবে সহযোগিতা করবো।


জানা গেছে, এদিন ভোরবেলা থেকেই যে, আসানসোল ও বার্ণপুরে অভিযান চালানো হবে, তার প্রস্তুতি মঙ্গলবারই আয়কর দপ্তর নিয়েছিলো। মঙ্গলবার রাতে কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে দূর্গাপুরে চলে আসেন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা। এদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তারা কুড়িটির মতো গাড়ি নিয়ে দূর্গাপুর থেকে আসানসোল ও বার্ণপুরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। তারপরই একাধিক দলে ভাগ হয়ে শুরু হয় অভিযান।
রাত দশটার শেষ খবর, আসানসোল ও বার্ণপুরের সব জায়গাতেই তল্লাশি চলছিল।

Leave a Reply