ASANSOL

শাসক দলের কোন্দল প্রকাশ্যে, বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ব্লক সভাপতির পদ হারিয়ে, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ছাড়ার হুমকি সুজিত মুখোপাধ্যায়ের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুর মহকুমার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার দূর্গাপুর ফরিদপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সুজিত মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্তে সুজিত মুখোপাধ্যায় সহ তৃণমূল কংগ্রেসের ঐ ব্লকের একটি শিবির বেজায় ক্ষুব্ধ। সোমবার আসানসোলে সুজিত মুখোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে হুমকি দিয়ে বলেন, কি কারণে আমাকে সরানো হয়েছে, তা জানাতে হবে। না হলে, আমি পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ থেকে ইস্তফা দেবো। তবে তাকে এই সিদ্ধান্ত না নেওয়া থেকে কোনমতে বিরত করেন দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার তাপস বন্দোপাধ্যায়। তাপসবাবু তাকে দলের পুরনো দিনের কর্মী হিসাবে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ করেন। জানা গেছে, সোমবার তাপস বন্দোপাধ্যায় সুজিত মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভের কথা জানিয়ে রাজ্য নেতৃত্বর সঙ্গে কথা বলেন ।


এদিন আসানসোলের আড্ডা বা আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্যদের অফিসে এসে তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন সুজিত মুখোপাধ্যায়। তার সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েকজন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ও ব্লকের নেতা । পরে তিনি বলেন, আমাকে ব্লক সভাপতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে তা জানানো হয় নি। ২০০৮ সাল থেকে আমি দূর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের সভাপতি পদে আছি। এমনকি একবারও জেলা নেতৃত্ব আমার সঙ্গে আগে এই ব্যাপারে আলোচনা পর্যন্ত করেনি। আমি অনেক দিন ধরে ঐ এলাকায় তৃণমূলের হয়ে কাজ করছি। সেই কারণেই আমি বলেছিলাম যে যখন আমি ব্লক সভাপতি পদে নেই। তখন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের পদে থাকাটা আমার পক্ষে উপযুক্ত নয়। সেই কারণেই আমি ঐ পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাই।

কিন্তু তাপস বন্দোপাধ্যায় আমায় বলেছেন যে আপনি এই করবেন না। আপনার অভিমান করা মতো জায়গায় রয়েছে। তবে আপনার দলের হয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। পদে থাকা বা না থাকার কথা না ভেবে লড়াই করুন। কারণ আপনি একজন দলের পুরনো নেতা। সুজিত মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি দলের জেলা সভাপতির সাথে কথা বলেছেন কি না? তখন তিনি বলেন, আমি কথা বলেছি। মন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গেও কথা বলবো। আমি সবার সঙ্গে কথা বলবো। তবে আমাকে বলা হয়েছিলো, যে এতে নাকি আমাদের কোন হাতে নয়। এতে আই-প্যাকের হাত আছে। আমি যখন আই-প্যাকের সাথে কথা বলি, তখন তারা আমাকে বলে, এর সাথে আমাদের কিছু নেই। তবে, আমাকে পদ থেকে সরানোর কারণ জানতে, প্রয়োজন হলে রাজ্য নেতৃত্বর সঙ্গে কথা বলবো বলে, এদিন সুজিত মুখোপাধ্যায় পরিষ্কার জানান।


এদিকে, বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করা হয় এর পেছনে জেলা তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে কি না? তবে তিনি তা সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস একটা বড় পরিবার। যেখানে অনেক মানুষ আছেন। ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে এখানে কোনো দলাদলি বা অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। সুজিত মুখোপাধ্যায় একজন পুরানো তৃণমূল নেতা। তিনি অনেক দিন ধরে এলাকায় সক্রিয়ভাবে তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। এদিন তিনি আমার কাছে এসে বলেছে যে আমাকে তাকে কোনো কারণ ছাড়াই যদি ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমি জেলা পরিষদ থেকেও পদত্যাগ করব। তাপসবাবু বলেন, কিন্তু আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি যে আপনি এই ধরনের কাজ করবেন না। আপনি ঠিক বলেছেন যে ব্লক সভাপতির পদ থেকে বিনা কারণে অপসারণ করা হয়েছে। এটা দলের সিদ্ধান্ত মনে করপ, আপনি আপনার লড়াই চালিয়ে যান। তৃণমূলে সক্রিয়ভাবে কাজ করুন। কাজ করার জন্য কোন পদের প্রয়োজন হয় না।


অন্যদিকে, দলের ব্লক সভাপতিকে বদল করার প্রতিবাদে একযোগে ১৩ জন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন জেলা সভাপতি তথা পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাছে। দীর্ঘদিনের পুরোনো ব্লক সভাপতিকে সরানো যাবে না, বলে সরব হয়েছেন দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ১৩ জন পঞ্চায়েত সদস্য। একই সাথে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের এক অঞ্চল সভাপতি ও এক বুথ সভাপতিও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রতিবাদের কোন সদুত্তর না পাওয়া গেলে বড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন বিদ্রোহী পঞ্চায়েত সদস্যরা। প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৬ টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে ১৩ জন দলের জেলা সভাপতির কাছে ইস্তফা পত্র জমা দেন।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ব্লক সভাপতিকে বদলে করা হয়েছে। তাতে দুর্গাপুর- ফরিদপুর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়ের বদলে শতদীপ ঘটককে ব্লক সভাপতি করা হয়।


এই প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, সুজিত মুখোপাধ্যায়কে তো জেলার সম্পাদক করা হয়েছে। দলে সবাই সমান। অনেক সময় দলের স্বার্থে উচ্চ নেতৃত্বর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। তার দাবি, কোন কিছু হয়নি। সব ঠিক আছে।
তবে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার ঠিক মুখে, তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্ব পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভায় এই ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় যে চিন্তিত, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

Leave a Reply