ASANSOL

আসানসোলে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও অচলাবস্থা, দীর্ঘক্ষণ তালা বন্দী উপাচার্য ও অধ্যাপকরা

রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে ইসি বৈঠক, প্রতিবাদে বিক্ষোভ টিএমসিপির

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ* রাজ্য সরকার তথা উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এক্সকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসির মিটিং করা হয় বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি বা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপাচার্য দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায় , রেজিস্টার সহ বেশ কয়েকজন অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাকে তালা বন্ধ করে রাখা হয়। উপাচার্যের চেম্বারের পতাকা নিয়ে টিএমসিপি জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় ও আসানসোল ব্লক সভাপতি শিলাদিত্য রায়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । এমন কি বেশ কিছুক্ষনের জন্য উপাচার্যের চেম্বারের বিদ্যুতের লাইনও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল বলে উপাচার্য দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ।  যদিও টিএমসিপির জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় তালা বন্ধ করা বা বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ঘেরাও অবস্থান করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছি এদিন সকাল ১০ টা থেকে ইসির বৈঠক না করার দাবি জানিয়ে।


জানা গেছে, ইসি বৈঠক না করার জন্য রাজ্য সরকারের লিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এদিন উপাচার্যের চেম্বারে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসির বৈঠক করেন। এই বৈঠক শুরু হয় দুপুর আড়াইটা থেকে।
টিএমসিপির সদস্য পড়ুয়াদের দাবি, তাদেরকে উপাচার্য আগে জানিয়েছিলেন এই বৈঠক এদিন হবে না। কিন্তু বৈঠক হওয়ার খবর আমরা পাই। তা পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেম্বারের সামনের গেটের কাছে টানা অবস্থানে বসে বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়। রাজ্যের শাসক দলের নামে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হন টিএমসিপি নেতৃত্ব।


এই প্রসঙ্গে জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য সরকার বলেছে ইসি বৈঠক না করার জন্য।  উপাচার্য আমাদেরকেও  বলেছিলেন বৈঠক হবে না। সেখানে তিনি দরজা বন্ধ করে কেন ইসির বৈঠক করছেন। শুধু তাই নয় কয়েকটি বিভাগে  দ্বিগুন, তিনগুণ হারে পড়ুয়াদের ফি বাড়ানো হয়েছে। তা নিয়ে আমরা যখন প্রতিবাদ করেছি তখন কিন্তু এই বৈঠকে কোন আলোচনা হয়নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের এই বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি নির্দেশ অমান্য করে এই ধরনের বৈঠক একজন উপাচার্য করছেন৷। তখন আমরা এর প্রতিবাদে সরব হয়েছি। তাই সকাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। রাত্ হলেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কয়েকটি কলেজের প্রতিনিধিরা এসেছেন। এরপর সমস্ত কলেজের পড়ুয়ারা এসে বড় আন্দোলনে নামবে। তিনি আরো বলেন,  আমাদের দাবি উপাচার্যকে লিখে দিতে হবে এদিন তিনি ইসি বৈঠক করেননি। আর যদি করে থাকেন তাহলে তিনি কেন আমাদের মিথ্যে কথা বলেছিলেন? রাজ্য সরকারের নির্দেশ কেন তিনি মানলেন না, তাও জানাতে হবে আমাদেরকে।


একইভাবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া টিএমসিপির আসানসোল ব্লক সভাপতি শিলাদিত্য রায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তিনি দাবি করেন,  উপাচার্য পড়ুয়াদের কথা না ভেবে রাজ্যপালের কথায় দরজা বন্ধ করে গোপনে এই ধরনের বৈঠক করলেন।
অন্যদিকে, কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এর আগে ইসির তিনটি বৈঠক করেছি। এবারের বৈঠক করা নিয়ে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়। তখন আমাদেরকে বলা হয়েছিল এজেন্ডা পাঠাতে। সেইমতো এজেন্ডা পাঠানো হয়েছিলো। এরপর রাজ্য সরকারের তরফে বৈঠক করতে মানা করা হয়। কিন্তু এদিনের বৈঠক করাটা অত্যন্ত জরুরি ছিল। কারণ পড়ুয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছিলো। যার মধ্যে নতুন কোর্সের বিষয় ও নতুন শিক্ষা নীতি আছে। এছাড়াও অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু বেতন সংক্রান্ত বিষয় আটকে ছিল। তা নিয়েও এদিন আলোচনা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, বৈঠকের পর প্রায় ঘন্টা দুয়েক চেম্বারের বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়। চেম্বারের দরজায় বাইরে থেকে তালা দেওয়া হয় রাখা হয়। সোমা বাগচি বলে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রতিনিধি তিনি বৈঠক শেষে বেরোনোর চেষ্টা করে।  অনেক কষ্ট করে ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই কোন মতে তাকে বের করা হয়। এখন আমরা বেশ কয়েকজন আটকে আছি। আমি গোটা বিষয়টি আসানসোল উত্তর থানার ওসিকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তার কাছ থেকে কোন উত্তর পাইনি। আমার ধারণা পরে পড়ুয়ারা বুঝতে পারবে তারা কি করছে।  তাতে যদি সারারাত আমাদের আটকে রাখে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তিনি আরো জানা, ইতিমধ্যেই আমি বিষয়টি আচার্য তথা রাজ্যপাল ও শিক্ষা দপ্তরকে জানিয়েছি।
উপাচার্যের দাবি, এই আন্দোলন যারা করছে, তাদের হাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপির পতাকা ছিল। তারা তৃণমূল কংগ্রেসের নামে স্লোগানও দিচ্ছিল। এই আন্দোলনে বেশ কিছু বহিরাগত ছিলো বলে উপাচার্যের মত।

Leave a Reply