রাণীগঞ্জে গড়ে উঠল শ্রী শ্যামের খাটু ধাম মন্দির
বেঙ্গল মিরর, চরন মুখার্জী, রানীগঞ্জ : দীর্ঘ 9 বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিপুণ দক্ষতার মধ্যে দিয়ে, নানান নকশা ও কলা কৃতিকে পাথরে খোদাই করে তুলে ধরা, অসংখ্য পাথর শিল্পীর সুদক্ষ কারিগরিতে রাজস্থানের শিল্পীরা খনি শহর রানীগঞ্জের বুকে গড়ে তুলেছেন, শ্রী শ্যাম ধাম। এবার সেই শ্রী শ্যামের সুবিশাল মন্দিরে, প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে শ্রী খাটু শ্যাম কে স্থাপন করা হল মন্দির চত্বরে। গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের খাটু ধাম থেকে শ্রী শ্যামের শীষ নিয়ে আসা হয় খনি শহরে। সে সময় থেকেই আবেগে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ভক্তরা। শ্রী শ্যামকে সাদর অভ্যর্থনা জানাতে, জনশৈলাব আছড়ে পড়ে রাস্তায়। এরপরই ১৮ই ফেব্রুয়ারি রানীগঞ্জের গোশালা থেকে বের হয় মঙ্গল কলস যাত্রা। সেই কলস যাত্রাতেও হাজারো হাজার ভক্ত অংশ নিয়ে সেই শোভাযাত্রাকে প্রানোচ্ছল করে তোলে, ২৫১ জন মহিলা এই মঙ্গল কলস যাত্রায় খালি পায়ে পাড়ি দেয় দীর্ঘ পথ। পরে সেই মঙ্গল কলসের জলে শ্যাম মূর্তিকে স্নান করিয়ে, মন্দির প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সেই পবিত্র জল। এরপরই উনিশে ফেব্রুয়ারি শ্যাম মন্দিরের পাশেই গড়ে ওঠা অস্থায়ী ভজন স্থলে, শ্রী রানী সতি দাদীজীর মঙ্গল পাঠের আসর বসে। যেখানে মঙ্গল মাঠে অংশ নেয় ১১০০ মহিলা। দিনভর তারা রাজস্থানী পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে, মঙ্গল পাঠে মগ্ন থাকেন। পরবর্তীতে ২০ শে ফেব্রুয়ারি সেই ভজন স্থলে সম্পন্ন হয় শ্রী শ্যাম জির অখন্ড জ্যোতি পাঠের আসর। কোলকাতার শিল্পীরা নৃত্য নাটিকা পরিবেশন করেন এই বিশেষ অনুষ্ঠানে। আর তারপরে ই একুশে ফেব্রুয়ারি রানীগঞ্জের বুকে এক নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে।
থরে থরে হাজারে হাজারে শ্যাম ভক্ত, অংশ নেয় নিশান পদযাত্রায়। অগণিত ভক্ত এদিন রাস্তায় নেমে, ঐতিহাসিক এই নিশানযাত্রা শুরু করেন, রানীগঞ্জের সুপ্রসিদ্ধ সীতা রামজী মন্দির প্রাঙ্গন থেকে। যেখানে এই শোভাযাত্রায় শ্রী খাটু শ্যামের মূর্তি, শ্রী সালেশ্বর বালাজির মূর্তি, রানী সতী দাদীজীর মূর্তি, ও দেবাদিদেব মহাদেবের শিবলিঙ্গ কে সুসজ্জিত করে, , তা স্থাপনের আগেই, সেই সকল মূর্তিকে নিয়ে নগর পরিক্রমা করা হয়। যে পরিক্রমা, ও নিশান যাত্রায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষজনের সাথেই, বিদেশ থেকেও বহু ভক্ত তাতে অংশ নিয়ে, নাচে, গানে, পুষ্প বৃষ্টি করে, সারা রানীগঞ্জ শহর দেবী দেবতার নামে মুখরিত করে তুলে, নাচে গানে মেতে ওঠে শহরের প্রতি প্রান্তে। সারা শহর যেন মুহূর্তে শ্যামময় হয়ে ওঠে, শ্রী শ্যামের জয় গানে মুখরিত হন সকলে। ভক্তরা আবেগে উচ্ছাসে নিশান যাত্রায় অংশ নিয়ে কখন যে খাটু শ্যাম মন্দিরে এসে তারা উপস্থিত হয় তা তারা বুঝতেই পারেন না। ভারী ধ্বজা তাদের কাছে যেন কিছুই নয় বলেই জানান, এই নিশান যাত্রায় অংশ নেওয়া ভক্তরা। এদিন মোট এগারশো ১১ টি নিশান শ্যাম মন্দিরে নিয়ে এসে স্থাপন করেন ভক্তরা।
আর তারপরেই সেই মহেন্দ্রক্ষণ শুরু, বৃহস্পতিবার শ্রী শ্যাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে, খাটু শ্যামের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হল মন্দির চত্বরে। হোম, যজ্ঞ, পুজো পাঠের মধ্যে দিয়ে হল এই ধার্মিক কর্মকাণ্ড। শ্রী শ্যামজির পাশেই অধিষ্ঠিত হয়ে, পূজিত হলেন সালেশ্বর বালাজি, রানী সতী দাদীজী ও সিদ্ধিবিনায়ক শিব পরিবার। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই পুজোপাটের পরই খুলে দেওয়া হল, মন্দিরের দ্বার। দেবদুয়ার খুলে যেতেই হাজার ভক্ত দেব দর্শনে হাজির হলেন। আর এই সমস্ত কর্মকাণ্ডকে সুচারুরূপে পরিচালনা করলেন, রানীগঞ্জের শ্রী শ্যাম বাল মন্ডলের সদস্যরা। নিপুন দক্ষতার মধ্যে দিয়েই তারা সম্পন্ন করলেন, শ্রী শ্যাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর্ব। আর হাতের কাছেই এবার খাটু শ্যাম মন্দির পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ল ভক্তরা। সকলেই এদিন শ্রী শ্যামের আগমনে আবেগে উচ্ছাসে আপ্লুত হয়ে পড়লেন।