রাজ্যে ক্যান্সার চিকিৎসায় অনন্য নজির, আসানসোল জেলা হাসপাতালের মুকুটে পালক , ” পিঙ্ক করিডরে” প্রথম স্তন পুনর্গঠন অস্ত্রোপচারে সফলতা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ রাজ্যে পুরোপুরি সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ক্যান্সার চিকিৎসায় অনন্য নজির তৈরি হলো। কলকাতার বাইরে কোন জেলায় এই প্রথম জেলা হাসপাতালে এক ক্যান্সার রোগীর ” স্তন পুনর্গঠন বা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট” অস্ত্রোপচার হলো। চিকিৎসা শাস্ত্রে এটিকে বলা হয় ” স্কিন স্পেয়ারিং ম্যাস্টেকটমি উইথ প্রাইমারি রিকনস্টারকশন উইথ সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট অ্যান্ড ল্যাটিসিমাস ডরসাই ফ্ল্যাপ “।




মঙ্গলবার সকালে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল জেলা হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে এও দাবি করে বলা হয়েছে, রাজ্যে শুধু প্রথম সারা দেশে কোন জেলা হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করা হলো। সেদিক থেকে বলতে গেলে আসানসোল জেলা হাসপাতালের মুকুটে সফলতার আরো একটি পালক জুড়লো। গোটা অস্ত্রোপচারটি কলকাতার এসএসকেএমের কমপ্রিহেনসিভ ব্রেস্ট সার্ভিসের হেড বা প্রধান ও টেলি ব্রেস্ট সার্ভিসের নোডাল অফিসার ক্যান্সার বিশেষত ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকারের তত্বাবধানে হয়েছে। এছাড়াও এমআর বাঙ্গুর থেকে এসেছিলেন সার্জেন ডাঃ রনিত রায়। অস্ত্রোপচারটি করেছেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিনিয়র সার্জেন ডাঃ রহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম। সবমিলিয়ে প্রায় দু’ঘন্টা মতো সময় লেগেছে এই অস্ত্রোপচারটি করতে। সফল অস্ত্রোপচারের রোগী আপাততঃ স্থিতিশীল আছেন বলে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত বছরের মে মাসে আসানসোলের সালানপুরের বাসিন্দা বছর ৩৫ র এক মহিলা তার স্তনে একটি টিউমারের চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন। প্রথমে সেই টিউমারের অপারেশন করা হয়। সেই টিউমারের অংশ বায়োপসির ও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল যে তার স্তন ক্যান্সার হয়েছে। এরপর জেলা হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগে ডা অমিত মুখোপাধ্যায় তার কেমোথেরাপি ও চিকিৎসা শুরু করেন। আটটি কেমোথেরাপি তার করা হয়। এরপর জেলা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে মহিলার স্তন ইমপ্ল্যান্টের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর জন্য প্রথমে পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস এই বিষয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকারের সাথে যোগাযোগ করেন।
তিনি সবকিছু দেখে আসানসোল জেলা হাসপাতালেই ঐ রোগীর স্তন ইমপ্ল্যান্ট বা পুনর্গঠন অপারেশন করার কথা বলেন। এমনকি তিনি নিজে আসানসোল জেলা হাসপাতালে এই অপারেশনর সময় থাকবেন বলেও জানান।
কিন্তু সমস্যা হয় সেই ইমপ্ল্যান্ট কেনার বা তার খরচের। এই সমস্যার সমাধানের জন্য এরপর আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সোমনাথ মণ্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জেলা হাসপাতালকে মেয়রের কাছে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সেই মতো মেয়রের কাছে একটি আবেদন করা হয়। পুরনিগমের মেয়র তহবিল থেকে ইমপ্ল্যান্টের খরচের বেশকিছু অর্থ দেওয়া হয়। সেইমতো মঙ্গলবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকারের তত্ত্বাবধানে ও ডাঃ রনিত রায়ের সহযোগিতায় এবং আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিনিয়র সার্জেন ডাঃ রহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি টিম এই অস্ত্রোপচারটি করেন।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার, জেলার সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস, আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস, সার্জেন ডাঃ রহুল আমিন ও আসানসোল জেলা হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের ইনচার্জ ডাঃ অমিত মুখোপাধ্যায় সকলেই বলেন, জেলা হাসপাতাল পর্যায়ে এটিই প্রথম এই ধরণের অস্ত্রোপচার।
এক সাক্ষাৎকারে ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, জেলা পর্যায়ে এটিই প্রথম এই ধরণের অপারেশন। তিনি আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুসক, ডাঃ রহুল আমিন ও ডাঃ অমিত মুখোপাধ্যায় ও তার গোটা টিমকে এর জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো বলেন, এই অভিযান খুবই কঠিন ছিলো। জেলা পর্যায়ে এটি প্রথমবারের মতো করা হচ্ছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এর জন্য একটি ” পিঙ্ক বা গোলাপী করিডোর ” তৈরি করেছে। যাতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলারা জেলা হাসপাতাল পর্যায়ে কোনও বিলম্ব ছাড়াই প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রেও এই মহিলাকে একই রকম চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছিল। ডাঃ সরকার বলেন, আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মীদের সহায়তায় এই অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়েছে। আসানসোল জেলা হাসপাতাল সমগ্র রাজ্যে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।